London ০৮:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৬ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম:
বাগমারার উপ পরিরদর্শক সাময়িক বরখাস্ত কালিয়াকৈর ফুটওভার ব্রিজে লাইটিং ব্যবস্থা না থাকায় ডাকাতির আতংকে সকল পেশার মানুষ পূর্ব লন্ডনের ব্রাডি আর্ট সেন্টারে অনুষ্ঠিত হলো উদীচী যুক্তরাজ্যের দ্বাদশতম সম্মেলন এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বসনিয়ায় অনুষ্ঠিত ইউরো বালকান বিজনেস আইকন অ্যাওয়ার্ডস ২০২৫ রাজশাহী থেকে ঢাকা বাস চলাচল বন্ধ রুয়েটে ছাত্রলীগ নেতা গ্রেফতার পটুয়াখালীতে সাংবাদিক হত্যাচেষ্টার আসামী গ্রেফতার বৃটেনের কার্ডিফ শহরে দারুস সুন্নাহ মাদ্রাসার উদ্বোধনী ক্লাস অনুষ্ঠিত নাটোরে বিএনপি’র ব্যানার-ফেস্টুনে প্রতিপক্ষের ভূতের আছর কুয়েতে বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপিত

আখাউড়ায় প্রবাসীর বাড়িতে সংঘটিত চাঞ্চল্যকর চুরির রহস্য উদঘাটন, ২১ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উদ্ধার – পুলিশের অভিযানে আটক ১

মো: বিল্লাল সরকার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর এলাকার দুর্গাপুর গ্রামে এক প্রবাসীর অনুপস্থিতিতে তার পরিবারকে লক্ষ্য করে সংঘটিত একটি পরিকল্পিত চুরির ঘটনায় অভূতপূর্ব সাফল্য দেখিয়েছে পুলিশ। ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই উদ্ধার হয়েছে চুরি যাওয়া প্রায় ২১ ভরি স্বর্ণালঙ্কার। গ্রেফতার হয়েছে একজন সন্দেহভাজন চোর। পুলিশি তৎপরতায় এলাকায় স্বস্তি ফিরেছে, আর আইনের শাসনের প্রতি জনগণের আস্থাও আরও সুদৃঢ় হয়েছে।

ঘটনার সূত্রপাত শুক্রবার গভীর রাতে। দুর্গাপুর এলাকার প্রবাসী টিপু মিয়ার বাড়ি দীর্ঘদিন ধরেই প্রবাস জীবন ও পরিবারের স্বচ্ছলতার প্রতীক হিসেবে পরিচিত ছিল এলাকায়। তবে শুক্রবার রাতের নিরবতায় সেই বাসায় ঘটে যায় একটি ভয়াবহ চুরির ঘটনা, যা মুহূর্তেই সারা এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে দেয়। দুর্বৃত্তরা বাড়ির দ্বিতীয় তলার বাথরুমের লোহার ভেন্টিলেটর ফ্যান খুলে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে। এরপর আলমিরা ভেঙে মূল্যবান স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ অর্থ নিয়ে পালিয়ে যায়।

পরদিন শনিবার সকালে ঘুম থেকে উঠে টিপু মিয়ার পরিবারের সদস্যরা ঘরে চুরির আলামত দেখতে পান। মুহূর্তেই তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং আখাউড়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করে।

আখাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ ছমিউদ্দিনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি চৌকস দল অভিযানে নামে। গোপন সূত্রের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে রোববার দুপুরে আখাউড়া সড়কবাজার এলাকার নাইন স্টার হোটেলের সামনে থেকে মেহেদী হাসান (২৪) নামে এক সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়। তার সঙ্গে থাকা একটি ব্যাগ তল্লাশি করে উদ্ধার করা হয় ২০ ভরি ১৫ আনা ৩ রতি স্বর্ণালঙ্কার।

গ্রেফতারকৃত মেহেদী হাসান প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চুরির সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, সে পূর্বে মাদক ও চুরির মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল কিনা – সে বিষয়ে তদন্ত চলছে। এছাড়া তার কোনো সহযোগী রয়েছে কি না, সে সম্পর্কেও অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে।

ওসি মোহাম্মদ ছমিউদ্দিন বলেন, “গোটা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের টিম নিরলস পরিশ্রম করেছে। সময়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে আমরা মূল্যবান স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করতে পেরেছি, যা জনগণের আস্থা অর্জনে বড় ভূমিকা রাখবে।” তিনি আরও বলেন, “মাদক, চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির মতো অপরাধের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান থাকবে। কোনো অপরাধীকে ছাড় দেওয়া হবে না।”

চুরি যাওয়া মালামাল উদ্ধারের খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়ে। দুর্গাপুর এলাকার এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “এত বড় চুরি হওয়ার পর আমরা খুব আতঙ্কে ছিলাম। কিন্তু পুলিশ যেভাবে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। এই ধরনের পদক্ষেপ অপরাধীদের সাহস কমিয়ে দেবে।”

চুরি হওয়া মালামাল উদ্ধারের পর প্রবাসী টিপু মিয়ার স্ত্রী পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, “আমরা তো মনে করেছিলাম সব শেষ। ভাবতেই পারিনি এত দ্রুত আমাদের হারানো জিনিস ফিরে পাবো। পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতেও শব্দ খুঁজে পাচ্ছি না।”

ঘটনার সামাজিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রবাসীদের বাড়ি অনেক সময়েই নিরাপত্তাহীনতার শিকার হয়, বিশেষ করে যখন পরিবারের পুরুষ সদস্য অনুপস্থিত থাকেন। এই ঘটনাটি সেই বাস্তবতাকে সামনে নিয়ে এসেছে। তবে একই সঙ্গে এটি পুলিশ প্রশাসনের দক্ষতা, সতর্কতা এবং দায়িত্বশীলতার একটি বড় উদাহরণ হিসেবেও চিহ্নিত হয়েছে।

বর্তমানে গ্রেফতার হওয়া আসামির বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে এবং আদালতে তার রিমান্ড আবেদন করা হতে পারে বলে জানা গেছে।

এ ঘটনায় পুলিশের পেশাদারিত্ব এবং জনগণের সহায়তার সম্মিলিত প্রয়াস অপরাধ নির্মূলে কতটা কার্যকর হতে পারে, তারই একটি জ্বলন্ত উদাহরণ স্থাপিত হলো আখাউড়ায়।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৪:৫৮:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫
৪২
Translate »

আখাউড়ায় প্রবাসীর বাড়িতে সংঘটিত চাঞ্চল্যকর চুরির রহস্য উদঘাটন, ২১ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উদ্ধার – পুলিশের অভিযানে আটক ১

আপডেট : ০৪:৫৮:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর এলাকার দুর্গাপুর গ্রামে এক প্রবাসীর অনুপস্থিতিতে তার পরিবারকে লক্ষ্য করে সংঘটিত একটি পরিকল্পিত চুরির ঘটনায় অভূতপূর্ব সাফল্য দেখিয়েছে পুলিশ। ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই উদ্ধার হয়েছে চুরি যাওয়া প্রায় ২১ ভরি স্বর্ণালঙ্কার। গ্রেফতার হয়েছে একজন সন্দেহভাজন চোর। পুলিশি তৎপরতায় এলাকায় স্বস্তি ফিরেছে, আর আইনের শাসনের প্রতি জনগণের আস্থাও আরও সুদৃঢ় হয়েছে।

ঘটনার সূত্রপাত শুক্রবার গভীর রাতে। দুর্গাপুর এলাকার প্রবাসী টিপু মিয়ার বাড়ি দীর্ঘদিন ধরেই প্রবাস জীবন ও পরিবারের স্বচ্ছলতার প্রতীক হিসেবে পরিচিত ছিল এলাকায়। তবে শুক্রবার রাতের নিরবতায় সেই বাসায় ঘটে যায় একটি ভয়াবহ চুরির ঘটনা, যা মুহূর্তেই সারা এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে দেয়। দুর্বৃত্তরা বাড়ির দ্বিতীয় তলার বাথরুমের লোহার ভেন্টিলেটর ফ্যান খুলে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে। এরপর আলমিরা ভেঙে মূল্যবান স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ অর্থ নিয়ে পালিয়ে যায়।

পরদিন শনিবার সকালে ঘুম থেকে উঠে টিপু মিয়ার পরিবারের সদস্যরা ঘরে চুরির আলামত দেখতে পান। মুহূর্তেই তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং আখাউড়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করে।

আখাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ ছমিউদ্দিনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি চৌকস দল অভিযানে নামে। গোপন সূত্রের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে রোববার দুপুরে আখাউড়া সড়কবাজার এলাকার নাইন স্টার হোটেলের সামনে থেকে মেহেদী হাসান (২৪) নামে এক সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়। তার সঙ্গে থাকা একটি ব্যাগ তল্লাশি করে উদ্ধার করা হয় ২০ ভরি ১৫ আনা ৩ রতি স্বর্ণালঙ্কার।

গ্রেফতারকৃত মেহেদী হাসান প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চুরির সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, সে পূর্বে মাদক ও চুরির মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল কিনা – সে বিষয়ে তদন্ত চলছে। এছাড়া তার কোনো সহযোগী রয়েছে কি না, সে সম্পর্কেও অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে।

ওসি মোহাম্মদ ছমিউদ্দিন বলেন, “গোটা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের টিম নিরলস পরিশ্রম করেছে। সময়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে আমরা মূল্যবান স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করতে পেরেছি, যা জনগণের আস্থা অর্জনে বড় ভূমিকা রাখবে।” তিনি আরও বলেন, “মাদক, চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির মতো অপরাধের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান থাকবে। কোনো অপরাধীকে ছাড় দেওয়া হবে না।”

চুরি যাওয়া মালামাল উদ্ধারের খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়ে। দুর্গাপুর এলাকার এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “এত বড় চুরি হওয়ার পর আমরা খুব আতঙ্কে ছিলাম। কিন্তু পুলিশ যেভাবে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। এই ধরনের পদক্ষেপ অপরাধীদের সাহস কমিয়ে দেবে।”

চুরি হওয়া মালামাল উদ্ধারের পর প্রবাসী টিপু মিয়ার স্ত্রী পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, “আমরা তো মনে করেছিলাম সব শেষ। ভাবতেই পারিনি এত দ্রুত আমাদের হারানো জিনিস ফিরে পাবো। পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতেও শব্দ খুঁজে পাচ্ছি না।”

ঘটনার সামাজিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রবাসীদের বাড়ি অনেক সময়েই নিরাপত্তাহীনতার শিকার হয়, বিশেষ করে যখন পরিবারের পুরুষ সদস্য অনুপস্থিত থাকেন। এই ঘটনাটি সেই বাস্তবতাকে সামনে নিয়ে এসেছে। তবে একই সঙ্গে এটি পুলিশ প্রশাসনের দক্ষতা, সতর্কতা এবং দায়িত্বশীলতার একটি বড় উদাহরণ হিসেবেও চিহ্নিত হয়েছে।

বর্তমানে গ্রেফতার হওয়া আসামির বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে এবং আদালতে তার রিমান্ড আবেদন করা হতে পারে বলে জানা গেছে।

এ ঘটনায় পুলিশের পেশাদারিত্ব এবং জনগণের সহায়তার সম্মিলিত প্রয়াস অপরাধ নির্মূলে কতটা কার্যকর হতে পারে, তারই একটি জ্বলন্ত উদাহরণ স্থাপিত হলো আখাউড়ায়।