বিসিসিআই মিডিয়া ম্যানেজার রাজীব হলকার গল্পে গল্পে চলে গেলেন মেহেদী হাসান মিরাজ প্রসঙ্গে। ‘তোমাদের মিরাজ খুবই ভালো অলরাউন্ডার। রবিচন্দ্র অশ্বিনের পছন্দের খেলোয়াড় সে। চেন্নাই টেস্ট শেষে তামিল ভাষায় টিভি সাক্ষাৎকারে মিরাজের খুব প্রশংসা করেছে। অশ্বিন মিরাজকে ফলো করে।’
মিরাজের সঙ্গে অশ্বিনের একটা আত্মিক যোগাযোগ রয়েছে। একজন আরেকজনের খেলা ফলো করেন। সুযোগ পেলে দু’জন দু’জনকে প্রশংসায় ভাসান। চেন্নাই ‘স্পিন উইজার্ড’ এবার যেমন মিরাজের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। টেস্ট সিরিজে মিরাজ ভালো না করলেও অশ্বিনের চোখে সেরা। কারণ মিরাজের ভালো করার সক্ষমতা, লড়াই করার মানসিকতা যে মুগ্ধ করে তাঁকে।
রাজীব হলকার অশ্বিনকে মিরাজের ফ্যান বললেও বাস্তবতা উল্টো। মিরাজই অশ্বিনের ভক্ত সেই কিশোর বয়স থেকে। ২০১৭ সালে হায়দরাবাদ টেস্টে ছিলেন মিরাজ। খেলা শেষে অশ্বিনের কাছে ছুটে গিয়েছিলেন টিপস নিতে। তিনি যে অশ্বিনের ভক্ত, সে কথাও জানিয়ে দিয়েছিলেন সেদিন। সেই থেকে একজন আরেকজনের ‘প্রেমে’ মজে আছেন।
গতকাল হোয়াটসঅ্যাপে অশ্বিনের সাক্ষাৎকার এবং প্রশংসার বিষয়টি জানাতে আপ্লুত হলেন মিরাজ। কিছুটা বিস্ময় নিয়ে জানতে চান সত্যিই প্রশংসা করেছেন? বিসিসিআইর উত্তরপ্রদেশের মিডিয়া ম্যানেজার বিষয়টি জানিয়েছেন বলার পর খুশিই হলেন ২৬ বছর বয়সী টাইগার অলরাউন্ডার।
এর পর জানা গেল, অশ্বিনের সঙ্গে ভালোই যোগাযোগ আছে তাঁর। শোনালেন এই সফরে টিপস নেওয়ার গল্প, ‘তিনি একজন কিংবদন্তি বোলার। আমি তাঁকে অনেক পছন্দ করি। আমাকে অনেক টিপস দিয়েছেন। বেশ কিছু কৌশল শিখিয়েছেন, বোলিং ভেরিয়েশনের স্টাইলগুলো বলে দিয়েছেন। এই মাঠে কী করে বল করতে হবে, সেটাও বলেছেন। আমি তাঁকে সব সময় অনুসরণ করি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অসাধারণ রেকর্ড তাঁর। আমি তাঁর বড় ভক্ত এবং ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ করি।’ টাইগার অলরাউন্ডার এতটাই বিমোহিত ছিলেন, অনুশীলন শেষে হোয়াটসঅ্যাপে নিজের কথাগুলো ইংরেজিতে লিখে পাঠালেন।
অশ্বিন-মিরাজের ‘ভার্চুয়ালি’ দেখা-সাক্ষাৎ খুব কমই হয়। বাংলাদেশ ভারতে খেলতে এলে বা ভারত বাংলাদেশে খেলতে গেলে দেখা হয়। বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে দু’দলের মুখোমুখিতেও দেখা হয়। এই ভার্চুয়াল যোগাযোগের চেয়ে দু’জনের আত্মিক সংযোগটাই বোধ হয় বেশি। কখনও খেলার মাধ্যমে, কখনও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দু’জন কাছাকাছি হন স্ট্যাটাস দিয়ে। এক বছর আগে মিরাজের ব্যাটিং নিয়ে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে অশ্বিন লিখেছিলেন, ‘ব্যাটার মেহেদী হাসান বাংলাদেশের জন্য বড় পাওয়া। বাংলাদেশের লাইনআপে ভারসাম্য আনবে। সত্যিই তারা ভালো করছে। তার ব্যাটিং পাওয়ার বাংলাদেশের ম্যানেজমেন্ট গুরুত্ব দিচ্ছে।’
সেই স্ট্যাটাস অশ্বিনের পেজে এখনও দৃশ্যমান। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের সিরিজ থাকায় দু’জনই খুব কাছাকাছি হয়েছিলেন চেন্নাই ও কানপুরে। একই হোটেলে থাকার সুবাদে নিজেদের মধ্যে ভাব বিনিময়ের সুযোগ ছিল। মিরাজ সুযোগকে হাতছাড়া করেননি। প্রিয় খেলোয়াড়ের সান্নিধ্য পেয়ে মুগ্ধ তিনি। কারণ মিরাজ যে অশ্বিনের মতোই সফল হতে চান টেস্ট ক্রিকেটে। নিজের চেয়ে ১২ বছরের ছোট মিরাজকে নিজের চেয়েও বড় জায়গায় অশ্বিন দেখতে চান কিনা, জানা নেই। তবে তিনি যে ভক্তকে ভীষণ পছন্দ করেন, তা বোঝা গেছে প্রতিক্রিয়ায়।
চেন্নাই টেস্টে ‘আইকনের’ বলে আউট হলেন মিরাজ। দু’জনের হাসির দৃশ্য তামিল মিডিয়া ফলাও করে প্রচার করে। সেখানেই এক টিভি সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মিরাজকে উঁচু মানের ক্রিকেটার হিসেবে উপস্থাপন করেছেন বলে জানান রাজীব হলকার। সেরা বাংলাদেশি স্পিন অলরাউন্ডারও নাকি বলেছেন। এ মুহূর্তে মিরাজ যে দেশের সেরা স্পিন অলরাউন্ডার, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সাকিব আল হাসান টেস্ট ও টি২০ ছেড়ে দেওয়ার পর মিরাজের জন্য তিন সংস্করণে নিয়মিত খেলার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ৪৭ টেস্টে ১৮৩ উইকেট আর ১ হাজার ৬৮৯ রান করা মিরাজ দেশের মতো বিদেশেও ভালো বল করতে শিখে গেছেন। যার লক্ষ্য ভারত কিংবদন্তি অশ্বিনের মতো ৫০০ টেস্ট উইকেট শিকার করা, তিনি যে প্রতিনিয়ত নিজেকে শানিত করবেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।