স্কুলগুলোতে কিশোরীদের পুষ্টিতে নজর নেই
প্রতীকী ছবি
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী নেহালউদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিদ্যালয়টিতে পড়ছে ৬১৫ মেয়ে শিক্ষার্থী। সরকারের কৈশোরকালীন পুষ্টি কার্যক্রমের আওতায় এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির ছাত্রীদের আয়রন ফলিক অ্যাসিড (আইএফএ) ট্যাবলেট সপ্তাহে একটি করে খাওয়ানো হতো। চার মাস ধরে এ ট্যাবলেট আর দেওয়া হচ্ছে না।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এ টি এম খলিলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সরকার থেকে চার মাস আগে যে ট্যাবলেট দেওয়া হয়েছিল, তা তখনই শেষ হয়ে গেছে।
চার মাস আগে নেহালউদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের মেয়েরা এ ট্যাবলেট পেলেও অনেক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ৯ মাস ধরে কোনো ট্যাবলেট পায়নি। শিশু–কিশোরীদের জন্য জরুরি এ ট্যাবলেট বিতরণ কেন বন্ধ রয়েছে, সে সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই বিদ্যালয়গুলোর কাছে।
৯ মাস ধরে ট্যাবলেট বিতরণ বন্ধ থাকা এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একটি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক মো. গোলাম নবী প্রথম আলোকে জানান, এ বছর (গত ৯ মাসে) তাঁরা কোনো ট্যাবলেট পাননি। শিক্ষকের উপস্থিতিতে মেয়েদের সপ্তাহে একটি ট্যাবলেট ক্লাসেই সেবন করানো হতো।
মাঠপর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কর্মসূচির শেষ পর্যায়ে অর্থ বরাদ্দ না থাকায় বেশির ভাগ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আইএফএ ট্যাবলেট বিতরণ বন্ধ রয়েছে। এ বছর ট্যাবলেট বিতরণ শুরুর কোনো সম্ভাবনা নেই। অবশ্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মাধ্যমিক শাখার পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ জাফর আলী প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘যেসব জায়গায় ট্যাবলেট বিতরণ হচ্ছে না, সেখানে কার্যক্রমটিকে কীভাবে গতিশীল করা যায়, সেটি নিয়ে কাজ করা হবে।’
দেশের ভবিষ্যৎ এই শিশু–কিশোরীদের পুষ্টি নিয়ে সরকারের মনোযোগের ঘাটতি নিয়েই আজ ৩০ সেপ্টেম্বর পালিত হচ্ছে জাতীয় কন্যাশিশু দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ‘কন্যাশিশুর স্বপ্নে গড়ি আগামীর বাংলাদেশ’।
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক মো. গোলাম নবী জানান, এ বছর (গত ৯ মাসে) তাঁরা কোনো ট্যাবলেট পাননি। শিক্ষকের উপস্থিতিতে মেয়েদের সপ্তাহে একটি ট্যাবলেট ক্লাসেই সেবন করানো হতো।
পুষ্টি কার্যক্রম ও এর গাইডলাইন
১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীর পুষ্টি অবস্থার উন্নতির লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছিল ‘কৈশোরকালীন পুষ্টি কার্যক্রম’। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের চতুর্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচির (এইচপিএনএসপি) অন্যতম কর্মপরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত এ কার্যক্রম। ২০২০ সালের ৮ অক্টোবর এ কার্যক্রমের গাইডলাইন উদ্বোধন হলেও কোভিড–১৯–এর কারণে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় মাঠপর্যায়ে এর বাস্তবায়ন শুরু হয় ২০২২ সালের ২৭ মার্চ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান (আইপিএইচএন) ও জাতীয় পুষ্টি সেবা (এনএনএস) এবং মাউশির মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে কার্যক্রমটি চলে। কার্যক্রমের অধীন ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণিতে পড়া কিশোরীদের সপ্তাহে এক দিন আইএফএ ট্যাবলেট এবং বছরে দুবার কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়।
কার্যক্রমের গাইডলাইনে বলা হয়েছে, আইএফএ ট্যাবলেটে রয়েছে ৬০ মিলিগ্রাম ইলিমেন্টাল আয়রন ও ৪০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক অ্যাসিড। কৈশোরে শারীরিক ও পেশির দ্রুত বৃদ্ধির সঙ্গে আয়রনের প্রয়োজনীয়তাও বৃদ্ধি পায়। আয়রন পরিপূরক খাবার কিশোর-কিশোরীকে রক্তস্বল্পতা থেকে রক্ষা করে। মেয়েদের ঋতুস্রাবের কারণে আয়রনের চাহিদা বেশি। আয়রন ও ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট দেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা, বুদ্ধি ও কর্মদক্ষতা বাড়ায়। এ ছাড়া মাসিক নিয়মিতকরণ ও গর্ভপূর্ব সুস্বাস্থ্যও নিশ্চিত করে।
গাইডলাইনে আরও বলা হয়, শহর ও গ্রামের ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোরীরা পুষ্টির ক্ষেত্রে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে। এ বয়সী মেয়েদের খর্বকায় হওয়ার হার যথাক্রমে প্রায় ৩৫ ও ৪০ শতাংশ। আর রক্তশূন্যতার হার গ্রামে ৪০ শতাংশের কাছে ও শহরে প্রায় ৩৬ শতাংশ।
জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের জুনিয়র ক্লিনিশিয়ান মুরাদ মো. সমশের তবরিছ খান বলেন, এ বছর ট্যাবলেট বিতরণের কোনো সম্ভাবনা নেই। অর্ধেকসংখ্যক মাধ্যমিক শিক্ষার্থী কার্যক্রমের বাইরেই রয়েছে। এ ছাড়া স্কুলে ভর্তি না হওয়া ও স্কুল থেকে ঝরে পড়া কিশোরীরা এ কার্যক্রমে নেই।
গাইডলাইনে আরও বলা হয়, শহর ও গ্রামের ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোরীরা পুষ্টির ক্ষেত্রে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে। এ বয়সী মেয়েদের খর্বকায় হওয়ার হার যথাক্রমে প্রায় ৩৫ ও ৪০ শতাংশ। আর রক্তশূন্যতার হার গ্রামে ৪০ শতাংশের কাছে ও শহরে প্রায় ৩৬ শতাংশ।
























