London ০১:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সেই কৌতুক অভিনেতা সাইফুদ্দিন

দেশি চলচ্চিত্রের পথিকৃৎ কৌতুক অভিনেতা হিসেবে খ্যাত সাইফুদ্দিন আহমেদের প্রয়াণ দিবস আজ। শুধু চলচ্চিত্রে নয়, বেতার, টিভি ও মঞ্চেও ছিল তার সরব উপস্থিতি। আজ তার প্রয়াণ দিবসে তাকে নিয়ে লিখেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদচলচ্চিত্রের পথিকৃৎ কৌতুক অভিনেতা

সিনেমার প্রধান চরিত্র নয়, তারপরও অনেক অভিনেতা দক্ষতার গুণে পান জনপ্রিয়তা। তাদের একজন সাইফুদ্দিন আহমেদ। পরিচিত ছিলেন সাইফুদ্দিন নামে। সব ধরনের চরিত্রে অভিনয় করলেও মূলত কৌতুক অভিনেতা হিসেবে সর্বাধিক জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন সাইফুদ্দিন আহমেদ। ‘মুখ ও মুখোশ’ দিয়ে এ ভূমিকার শুরু। এ কারণেই বলা যায়, দেশি চলচ্চিত্রের পথিকৃৎ কৌতুক অভিনেতা হলেন সাইফুদ্দিন।

মুখ ও মুখোশ দিয়ে যাত্রা

একসময় তাকে বছরের উল্লেখযোগ্য সিনেমায় দেখা যেত। টিভি ও রেডিওতে ছিলেন পরিচিত মুখ। তার সিনেমায় অভিষেক হয়েছিল ঢাকার প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’ দিয়ে। ভগ্নিপতি আবদুল জব্বার খান পরিচালিত ও ১৯৫৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এ দেশের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’-এ অভিনয়ের মাধ্যমে সাইফুদ্দিন চলচ্চিত্র অভিনেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। এরপরের পাঁচ দশকে নানা মাধ্যমে অভিনয় করেছেন তিনি।

ভালো গাইতেন

স্কুলে পড়াকালীন সময় থেকেই গান এবং অভিনয়ের প্রতি সাইফুদ্দিনের প্রচণ্ড আগ্রহ জন্মায়। স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গাইতেন। অভিনয়ও করতেন। খুব ভালো গান গাইতে পারতেন তিনি। স্কুল পাস করে ভর্তি হন রংপুর কারমাইকেল কলেজে।

কলেজের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গেয়ে দর্শক-শ্রোতাদের প্রশংসা অর্জন করেন। পরে ঢাকায় চলে আসেন সাইফুদ্দিন। ঢাকায় এসে রেডিওতে গান গাইতেন এবং ঢাকার বিভিন্ন মঞ্চে অভিনয় করতেন। তখন তিনি একটি প্রাইভেট ফার্মে চাকরিও করতেন।

জাতীয় পুরস্কার

সাইফুদ্দিন ১৯৭৯ সালে আমজাদ হোসেন পরিচালিত ‘সুন্দরী’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য পার্শ্বচরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।

বেতার টিভির নিয়মিত শিল্পী

তিনি বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের নাটকেও নিয়মিত অভিনয় করেছেন। টেলিভিশনেও জনপ্রিয় অভিনেতা ছিলেন সাইফুদ্দিন।

ব্যক্তিজীবন

ব্যক্তিজীবনে সাইফুদ্দিন আহমেদ ১৯৬০ সালে সুফিয়া খাতুনকে বিয়ে করেন। বিবাহিত জীবনে তিন কন্যা ও এক পুত্রের জনক তিনি।

জন্ম ও মৃত্যু

সাইফুদ্দিন আহমেদের জন্ম ১৯২৬ সালে ভারতের আসাম রাজ্যের ধুবড়িতে। তার বাবা মঞ্চ অভিনেতা মোহাম্মদ দীন আহমেদ ও মা মোসাম্মৎ হাসিনা খানম। তারা ছিলেন ছয় ভাই ছয় বোন। সাইফুদ্দিন আহমেদ ২০১০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবি-

মুখ ও মুখোশ, জোয়ার এলো, উজ্বালা, চাওয়া পাওয়া, নয়নতারা, নাচঘর, পরওয়ানা, বাঁশরী, পরশমণি, গাজীকালু চম্পাবতী, বন্ধন, ময়নামতী, এতটুকু আশা, নীল আকাশের নীচে, জলছবি, ওরা ১১ জন, অবুঝ মন, সমাপ্তি, আঁকা বাঁকা, আমার জন্মভূমি, মধুমিলন, এরাও মানুষ, স্বপ্ন দিয়ে ঘেরা, হাবা হাসমত, আলোর মিছিল, লাঠিয়াল, জালিয়াত, বধূবিদায়, অলংকার, পলাতক, তুফান, অভিশাপ, সুন্দরী, নদের চাঁদ, কথা দিলাম, আরাধনা, মাসুম, উজান ভাটি, হাসু আমার হাসু, রামের সুমতি, মাটির মানুষ, মধুমিতা, অচেনা অতিথি, শ্রীমতি ৪২০, যৌতুক, শহর থেকে দূরে, রূপের রাণী চোরের রাজা, নওজোয়ান, স্মৃতি তুমি বেদনা, সোনার তরী, আকাশ পরী, স্বামীর ঘর, বউ কথা কও, বড় ভালো লোক ছিল, গাঁয়ের ছেলে, দ্বীপ কন্যা, চন্দ্রনাথ, দহন, চাচা ভাতিজা, সন্ধান, মেলা, সালমা, বেদের মেয়ে জোসনা, মোহনবাঁশী, কাশেম মালার প্রেম, গাড়িয়াল ভাই, শেষ উপহার, বালিকা হলো বধূ, খলনায়ক, আবদুল্লাহ, নাজায়েজ, বাপের টাকা, হিংসার পতন, নাচনেওয়ালী প্রভৃতি

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০২:৪৫:১১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
৫৪
Translate »

সেই কৌতুক অভিনেতা সাইফুদ্দিন

আপডেট : ০২:৪৫:১১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

দেশি চলচ্চিত্রের পথিকৃৎ কৌতুক অভিনেতা হিসেবে খ্যাত সাইফুদ্দিন আহমেদের প্রয়াণ দিবস আজ। শুধু চলচ্চিত্রে নয়, বেতার, টিভি ও মঞ্চেও ছিল তার সরব উপস্থিতি। আজ তার প্রয়াণ দিবসে তাকে নিয়ে লিখেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদচলচ্চিত্রের পথিকৃৎ কৌতুক অভিনেতা

সিনেমার প্রধান চরিত্র নয়, তারপরও অনেক অভিনেতা দক্ষতার গুণে পান জনপ্রিয়তা। তাদের একজন সাইফুদ্দিন আহমেদ। পরিচিত ছিলেন সাইফুদ্দিন নামে। সব ধরনের চরিত্রে অভিনয় করলেও মূলত কৌতুক অভিনেতা হিসেবে সর্বাধিক জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন সাইফুদ্দিন আহমেদ। ‘মুখ ও মুখোশ’ দিয়ে এ ভূমিকার শুরু। এ কারণেই বলা যায়, দেশি চলচ্চিত্রের পথিকৃৎ কৌতুক অভিনেতা হলেন সাইফুদ্দিন।

মুখ ও মুখোশ দিয়ে যাত্রা

একসময় তাকে বছরের উল্লেখযোগ্য সিনেমায় দেখা যেত। টিভি ও রেডিওতে ছিলেন পরিচিত মুখ। তার সিনেমায় অভিষেক হয়েছিল ঢাকার প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’ দিয়ে। ভগ্নিপতি আবদুল জব্বার খান পরিচালিত ও ১৯৫৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এ দেশের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’-এ অভিনয়ের মাধ্যমে সাইফুদ্দিন চলচ্চিত্র অভিনেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। এরপরের পাঁচ দশকে নানা মাধ্যমে অভিনয় করেছেন তিনি।

ভালো গাইতেন

স্কুলে পড়াকালীন সময় থেকেই গান এবং অভিনয়ের প্রতি সাইফুদ্দিনের প্রচণ্ড আগ্রহ জন্মায়। স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গাইতেন। অভিনয়ও করতেন। খুব ভালো গান গাইতে পারতেন তিনি। স্কুল পাস করে ভর্তি হন রংপুর কারমাইকেল কলেজে।

কলেজের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গেয়ে দর্শক-শ্রোতাদের প্রশংসা অর্জন করেন। পরে ঢাকায় চলে আসেন সাইফুদ্দিন। ঢাকায় এসে রেডিওতে গান গাইতেন এবং ঢাকার বিভিন্ন মঞ্চে অভিনয় করতেন। তখন তিনি একটি প্রাইভেট ফার্মে চাকরিও করতেন।

জাতীয় পুরস্কার

সাইফুদ্দিন ১৯৭৯ সালে আমজাদ হোসেন পরিচালিত ‘সুন্দরী’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য পার্শ্বচরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।

বেতার টিভির নিয়মিত শিল্পী

তিনি বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের নাটকেও নিয়মিত অভিনয় করেছেন। টেলিভিশনেও জনপ্রিয় অভিনেতা ছিলেন সাইফুদ্দিন।

ব্যক্তিজীবন

ব্যক্তিজীবনে সাইফুদ্দিন আহমেদ ১৯৬০ সালে সুফিয়া খাতুনকে বিয়ে করেন। বিবাহিত জীবনে তিন কন্যা ও এক পুত্রের জনক তিনি।

জন্ম ও মৃত্যু

সাইফুদ্দিন আহমেদের জন্ম ১৯২৬ সালে ভারতের আসাম রাজ্যের ধুবড়িতে। তার বাবা মঞ্চ অভিনেতা মোহাম্মদ দীন আহমেদ ও মা মোসাম্মৎ হাসিনা খানম। তারা ছিলেন ছয় ভাই ছয় বোন। সাইফুদ্দিন আহমেদ ২০১০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবি-

মুখ ও মুখোশ, জোয়ার এলো, উজ্বালা, চাওয়া পাওয়া, নয়নতারা, নাচঘর, পরওয়ানা, বাঁশরী, পরশমণি, গাজীকালু চম্পাবতী, বন্ধন, ময়নামতী, এতটুকু আশা, নীল আকাশের নীচে, জলছবি, ওরা ১১ জন, অবুঝ মন, সমাপ্তি, আঁকা বাঁকা, আমার জন্মভূমি, মধুমিলন, এরাও মানুষ, স্বপ্ন দিয়ে ঘেরা, হাবা হাসমত, আলোর মিছিল, লাঠিয়াল, জালিয়াত, বধূবিদায়, অলংকার, পলাতক, তুফান, অভিশাপ, সুন্দরী, নদের চাঁদ, কথা দিলাম, আরাধনা, মাসুম, উজান ভাটি, হাসু আমার হাসু, রামের সুমতি, মাটির মানুষ, মধুমিতা, অচেনা অতিথি, শ্রীমতি ৪২০, যৌতুক, শহর থেকে দূরে, রূপের রাণী চোরের রাজা, নওজোয়ান, স্মৃতি তুমি বেদনা, সোনার তরী, আকাশ পরী, স্বামীর ঘর, বউ কথা কও, বড় ভালো লোক ছিল, গাঁয়ের ছেলে, দ্বীপ কন্যা, চন্দ্রনাথ, দহন, চাচা ভাতিজা, সন্ধান, মেলা, সালমা, বেদের মেয়ে জোসনা, মোহনবাঁশী, কাশেম মালার প্রেম, গাড়িয়াল ভাই, শেষ উপহার, বালিকা হলো বধূ, খলনায়ক, আবদুল্লাহ, নাজায়েজ, বাপের টাকা, হিংসার পতন, নাচনেওয়ালী প্রভৃতি