London ১১:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫, ১৮ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম:
‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ কোন পথে’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত নেত্রকোনা সীমান্তে টংক আন্দোলনের নেত্রী রাশি মণি’র হাজংয়ের ৭৯তম প্রয়াণ দিবস পালিত ফরিদপুরে রিকশা ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে চালককে হত্যা বিয়ে করলেন সারজিস আলম টিকটকে আসক্ত মেয়েকে গুলি করে হত্যা উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ প্লে-অফেই রিয়াল-সিটি লড়াই, বাকি ম্যাচে কে কার প্রতিপক্ষ ছাত্রলীগ কোনো প্রোগ্রাম করার চেষ্টা করলে ব্যবস্থা নেবে পুলিশ কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ ট্রাম্পের মঞ্চে কোমর ধরে তরুণীকে কাছে টেনে ফ্লার্টিং শাহরুখের! ভিডিও ভাইরাল ১৪ সেকেন্ডের দুষ্টু ভঙ্গির ভিডিওতে ঝড় তুললেন পরীমণি!

সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা জানা যাবে মঙ্গলবার

সুন্দরবনের বাঘফাইল ছবি

সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের সংখ্যা কত, তা আগামীকাল মঙ্গলবার জানা যাবে। এদিন সুন্দরবনের বাঘ জরিপের ফল চূড়ান্তভাবে প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের পরিচালক ও সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) আবু নাসের মহসিন হোসেন।

সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় বনের মধ্যে ১ হাজার ২০০–এর বেশি ক্যামেরা ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে বাঘের ছবি তোলা শেষ হয় গত মার্চ মাসে। এরপর ক্যামেরার তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই শেষে ২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবসে ফলাফল ঘোষণা করার কথা ছিল। কিন্তু যাচাই-বাছাই কাজে সময় লাগায় তা আর সম্ভব হয়নি।

আবু নাসের মহসিন হোসেন বলেন, জরিপ শেষে পর্যালোচনার কাজে সময় লেগেছে। ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতের পর রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ইন্টারনেটে সমস্যা, নতুন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ, পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে জরিপের তথ্য পর্যালোচনায় সময় লাগে। এখন সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আগামীকাল মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে বাঘ জরিপের ফল ঘোষণা করবেন।

বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের আয়তন ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে বনভূমি ৪ হাজার ৮৩২ এবং জলাভূমি ১ হাজার ১৮৫ বর্গকিলোমিটার। ২০১৫ সালের বাঘশুমারি অনুযায়ী, সুন্দরবনে বাঘ ছিল ১০৬টি। আর ২০১৮ সালের শুমারির তথ্য অনুযায়ী, বাঘের সংখ্যা ছিল ১১৪।

খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার দো বলেন, সুন্দরবনের খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলাকে মোট চারটি এলাকায় ভাগ করে সর্বাধুনিক পদ্ধতিতে বাঘের ওপর জরিপ চালানো হয়েছে। সামগ্রিক সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনার কারণে সুন্দরবনে আগের তুলনায় বাঘের সংখ্যা বেড়েছে। আগামীকাল মঙ্গলবার বাঘের সংখ্যা জানা যাবে। তিনি আরও বলেন, জরিপে দেখা গেছে, বনে বাঘের প্রধান শিকার চিত্রা হরিণ ও বন্য শূকরের সংখ্যাও বেড়েছে। খাবারের সংকট না থাকায় বাঘের লোকালয়ে হানা দেওয়া কমেছে। এ ছাড়া ঝড়, বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস থেকে বাঘকে রক্ষার জন্য বাঘের কেল্লা নির্মাণ করা হচ্ছে সুন্দরবনে।

বন বিভাগের ভাষ্য, বাঘ জরিপের জন্য সুন্দরবনে গাছের সঙ্গে মাটি থেকে ৫০ সেন্টিমিটার ওপরে ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। ক্যামেরার সামনে দিয়ে কোনো বাঘ বা অন্য যেকোনো প্রাণী গেলে ক্যামেরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেটির ছবি ও ১০ সেকেন্ডের ভিডিও ধারণ করে রাখে। এরপর ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ে পাওয়া ছবি বন অধিদপ্তরের রিসোর্স ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ইউনিটে বিশ্লেষণ করে বাঘের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়। এ ছাড়া সুন্দরবনের খালে সাধারণত সব বাঘ পানি খেতে আসে। এতে খালের পাড়ে বাঘের পায়ের ছাপ পড়ে। বাঘের ধরন অনুযায়ী ওই ছাপ ভিন্ন হয়। এভাবে পায়ের ছাপ দেখেও বাঘের সংখ্যা গোনা যায়।

বিশাল সুন্দরবনে ডোরাকাটা একই রঙের, একই রকম দেখতে বাঘগুলো কীভাবে আলাদাভাবে শনাক্ত করা হয়—এমন প্রশ্নের জবাবে বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের পরিচালক আবু নাসের মহসিন হোসেন বলেন, একজন মানুষের আঙুলের ছাপের সঙ্গে আরেকজনের ছাপের যেমন মিল নেই, তেমনি একটি বাঘের ডোরাকাটার সঙ্গে আরেকটি বাঘেরও মিল থাকে না। ক্যামেরায় একেকটি বাঘের শতাধিক ছবিও ওঠে। সেসব ছবি সংগ্রহের পর কম্পিউটারের সফটওয়্যারে প্রতিটি বাঘের আলাদা করে তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করেই জানা যায়, সুন্দরবনে ঠিক কতগুলো বাঘ আছে।

নয়নাভিরাম সুন্দরবনে ঘুরতে যাওয়া পর্যটক এবং বনে থাকা বনকর্মীরা প্রায়ই বাঘ দেখতে পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এ জেড এম হাছানুর রহমান। তিনি বলেন, কয়েক বছর ধরে সুন্দরবনে বাঘের দেখা বেশি মিলছে। বনে আগের তুলনায় বাঘের প্রজনন বেড়েছে, সেই সঙ্গে মৃত্যুর সংখ্যাও কমেছে।

সুন্দরবনের কচিখালী অভয়ারণ্য কার্যালয়ের বনরক্ষী মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি, আমাদের অফিসের বাইরে একটি বাঘ দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ বাঘটি দেখে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম। ভয়ে ভয়ে মুঠোফোন দিয়ে বাঘের ভিডিও করতে থাকি। কিছুক্ষণ পরে বাঘটি বনের দিকে চলে যায়।’

সুন্দরবনের পাটকোষ্টা টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শ্যামা প্রসাদ রায় বলেন, প্রায় রাতেই টহল ফাঁড়ির পেছনের পুকুরের দিক থেকে বাঘের গর্জন ভেসে আসে। বাঘকে নদী সাঁতরে জঙ্গলে প্রবেশ করতেও দেখেছেন। এর আগ এভাবে বনে বাঘের চলাচল লক্ষ করা যায়নি। সুন্দরবন বনদস্যুমুক্ত হওয়ার পর, চোরা শিকার বন্ধে স্মার্ট প্যাট্রোলিং চালুসহ বনরক্ষীদের নিয়মিত টহলের কারণে বাঘের সংখ্যা বাড়ছে বলে মনে করছেন তিনি।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ১১:১০:৫৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৭ অক্টোবর ২০২৪
৪২
Translate »

সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা জানা যাবে মঙ্গলবার

আপডেট : ১১:১০:৫৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৭ অক্টোবর ২০২৪

সুন্দরবনের বাঘফাইল ছবি

সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের সংখ্যা কত, তা আগামীকাল মঙ্গলবার জানা যাবে। এদিন সুন্দরবনের বাঘ জরিপের ফল চূড়ান্তভাবে প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের পরিচালক ও সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) আবু নাসের মহসিন হোসেন।

সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় বনের মধ্যে ১ হাজার ২০০–এর বেশি ক্যামেরা ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে বাঘের ছবি তোলা শেষ হয় গত মার্চ মাসে। এরপর ক্যামেরার তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই শেষে ২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবসে ফলাফল ঘোষণা করার কথা ছিল। কিন্তু যাচাই-বাছাই কাজে সময় লাগায় তা আর সম্ভব হয়নি।

আবু নাসের মহসিন হোসেন বলেন, জরিপ শেষে পর্যালোচনার কাজে সময় লেগেছে। ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতের পর রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ইন্টারনেটে সমস্যা, নতুন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ, পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে জরিপের তথ্য পর্যালোচনায় সময় লাগে। এখন সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আগামীকাল মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে বাঘ জরিপের ফল ঘোষণা করবেন।

বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের আয়তন ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে বনভূমি ৪ হাজার ৮৩২ এবং জলাভূমি ১ হাজার ১৮৫ বর্গকিলোমিটার। ২০১৫ সালের বাঘশুমারি অনুযায়ী, সুন্দরবনে বাঘ ছিল ১০৬টি। আর ২০১৮ সালের শুমারির তথ্য অনুযায়ী, বাঘের সংখ্যা ছিল ১১৪।

খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার দো বলেন, সুন্দরবনের খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলাকে মোট চারটি এলাকায় ভাগ করে সর্বাধুনিক পদ্ধতিতে বাঘের ওপর জরিপ চালানো হয়েছে। সামগ্রিক সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনার কারণে সুন্দরবনে আগের তুলনায় বাঘের সংখ্যা বেড়েছে। আগামীকাল মঙ্গলবার বাঘের সংখ্যা জানা যাবে। তিনি আরও বলেন, জরিপে দেখা গেছে, বনে বাঘের প্রধান শিকার চিত্রা হরিণ ও বন্য শূকরের সংখ্যাও বেড়েছে। খাবারের সংকট না থাকায় বাঘের লোকালয়ে হানা দেওয়া কমেছে। এ ছাড়া ঝড়, বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস থেকে বাঘকে রক্ষার জন্য বাঘের কেল্লা নির্মাণ করা হচ্ছে সুন্দরবনে।

বন বিভাগের ভাষ্য, বাঘ জরিপের জন্য সুন্দরবনে গাছের সঙ্গে মাটি থেকে ৫০ সেন্টিমিটার ওপরে ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। ক্যামেরার সামনে দিয়ে কোনো বাঘ বা অন্য যেকোনো প্রাণী গেলে ক্যামেরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেটির ছবি ও ১০ সেকেন্ডের ভিডিও ধারণ করে রাখে। এরপর ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ে পাওয়া ছবি বন অধিদপ্তরের রিসোর্স ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ইউনিটে বিশ্লেষণ করে বাঘের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়। এ ছাড়া সুন্দরবনের খালে সাধারণত সব বাঘ পানি খেতে আসে। এতে খালের পাড়ে বাঘের পায়ের ছাপ পড়ে। বাঘের ধরন অনুযায়ী ওই ছাপ ভিন্ন হয়। এভাবে পায়ের ছাপ দেখেও বাঘের সংখ্যা গোনা যায়।

বিশাল সুন্দরবনে ডোরাকাটা একই রঙের, একই রকম দেখতে বাঘগুলো কীভাবে আলাদাভাবে শনাক্ত করা হয়—এমন প্রশ্নের জবাবে বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের পরিচালক আবু নাসের মহসিন হোসেন বলেন, একজন মানুষের আঙুলের ছাপের সঙ্গে আরেকজনের ছাপের যেমন মিল নেই, তেমনি একটি বাঘের ডোরাকাটার সঙ্গে আরেকটি বাঘেরও মিল থাকে না। ক্যামেরায় একেকটি বাঘের শতাধিক ছবিও ওঠে। সেসব ছবি সংগ্রহের পর কম্পিউটারের সফটওয়্যারে প্রতিটি বাঘের আলাদা করে তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করেই জানা যায়, সুন্দরবনে ঠিক কতগুলো বাঘ আছে।

নয়নাভিরাম সুন্দরবনে ঘুরতে যাওয়া পর্যটক এবং বনে থাকা বনকর্মীরা প্রায়ই বাঘ দেখতে পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এ জেড এম হাছানুর রহমান। তিনি বলেন, কয়েক বছর ধরে সুন্দরবনে বাঘের দেখা বেশি মিলছে। বনে আগের তুলনায় বাঘের প্রজনন বেড়েছে, সেই সঙ্গে মৃত্যুর সংখ্যাও কমেছে।

সুন্দরবনের কচিখালী অভয়ারণ্য কার্যালয়ের বনরক্ষী মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি, আমাদের অফিসের বাইরে একটি বাঘ দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ বাঘটি দেখে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম। ভয়ে ভয়ে মুঠোফোন দিয়ে বাঘের ভিডিও করতে থাকি। কিছুক্ষণ পরে বাঘটি বনের দিকে চলে যায়।’

সুন্দরবনের পাটকোষ্টা টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শ্যামা প্রসাদ রায় বলেন, প্রায় রাতেই টহল ফাঁড়ির পেছনের পুকুরের দিক থেকে বাঘের গর্জন ভেসে আসে। বাঘকে নদী সাঁতরে জঙ্গলে প্রবেশ করতেও দেখেছেন। এর আগ এভাবে বনে বাঘের চলাচল লক্ষ করা যায়নি। সুন্দরবন বনদস্যুমুক্ত হওয়ার পর, চোরা শিকার বন্ধে স্মার্ট প্যাট্রোলিং চালুসহ বনরক্ষীদের নিয়মিত টহলের কারণে বাঘের সংখ্যা বাড়ছে বলে মনে করছেন তিনি।