London ১১:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৪ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাকিবের প্রথম ইচ্ছা পূরণ, এরপর কী

মিরপুরে খেলে টেস্টকে বিদায় জানানোর সুযোগ পেয়েছেন সাকিব আল হাসানবিসিবি

কানপুরে ঘোষণাটা দিতে গিয়ে দুটো ‘যদি’ জুড়ে দিয়েছিলেন সেদিন। বলেছিলেন, ‘যদি সুযোগ থাকে’, ‘যদি দেশে যাই’। ‘যদি’ নামের অনিশ্চয়তায় ভর করে সাকিব আল হাসান বলেছিলেন, ‘মিরপুর টেস্ট হবে আমার জন্য শেষ।’

আজ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মিরপুর টেস্টের জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড যে দলটা ঘোষণা করেছে, তাতে ‘যদি’ নামের প্রথম শর্তটা পূরণ হয়ে গেছে। সাকিব সুযোগ পেয়েছেন মিরপুর টেস্টের দলে। এখন বাকি দেশে ফেরা। সেটাও হয়ে যাচ্ছে আগামীকালই।

সব ঠিক থাকলে ২১ অক্টোবর মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলতে নামছেন সাকিব। কিন্তু কানপুর স্টেডিয়ামের ‘ইচ্ছা প্রকাশ’ যে পথ ধরে ‘ইচ্ছাপূরণে’ এসে পৌঁছেছে, তাতে ঘটেছে অনেক কিছুই। সাকিবের বহুবর্ণিল দেড় যুগের ক্যারিয়ারে যা একেবারেই নতুন কিছু, হয়তো অভাবনীয়ও।

যে সাকিব একাধিকবার নানা কারণ দেখিয়ে টেস্ট খেলা থেকে ছুটি নিয়েছেন, তাঁকেই শেষ টেস্টের জন্য আকুতি জানাতে হয়েছে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণে। ছিলেন দ্বাদশ সংসদের আওয়ামী লীগদলীয় সংসদ সদস্য। ৫ আগস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তনের সঙ্গে সরকারের মতো সাকিবও অনেকের চোখে ‘পতিত’। যেখানে আওয়ামী লীগদলীয় কোনো সংসদ সদস্য প্রকাশ্যে নেই, সেখানে খেলোয়াড়ি পরিচয়ে সাকিবের খেলে যাওয়া নিয়ে আপত্তির আওয়াজ বেশ প্রবলই।

কানপুরে টেস্ট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন সাকিব আল হাসান

কানপুরে টেস্ট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন সাকিব আল হাসান

আর এমন এক প্রেক্ষাপটে ২৬ সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ-ভারত কানপুর টেস্ট শুরুর আগে অবসরের ঘোষণা দিয়ে বসেন সাকিব। দেশের মাটিতে খেলার সম্ভাবনা নিয়ে অকপটেই বলেছিলেন, ‘দেশে যেহেতু অনেক পরিস্থিতি আছে, সবকিছু অবশ্যই আমার ওপরে না।’

মিরপুরে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে খেলে অবসর নিতে চান জানাতে গিয়ে দেশে এসে খেলে নির্বিঘ্নে দেশ ছেড়ে যাওয়ার নিশ্চয়তা চেয়েছিলেন সাকিব। একজন ক্রিকেটার হিসেবে সাকিব নিরাপত্তা এমনিতেই পান। কিন্তু যে নিরাপত্তা চেয়েছিলেন, সেই চাওয়াটা ছিল সরকারের কাছে।

হত্যা মামলার আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার বা দেশ থেকে বের হতে না পারার যে শঙ্কা, সে ব্যাপারেই আশ্বস্ত হতে চেয়েছিলেন। এর তিন দিন পরই যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ জানান, সাকিবকে রাজনৈতিক জায়গা থেকে তাঁর অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে। পরিষ্কার বলতে জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিষয়ে তাঁর মনোভাব জানানো। যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা মূলত সাকিবের কোর্টে বল ঠেলে দিয়েছিলেন। দেশের মাটিতে খেলতে চাইলে অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করার দায়িত্বটা তাঁর নিজেরই।

ঢাকায় ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলবেন সাকিব আল হাসান

ঢাকায় ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলবেন সাকিব আল হাসানএএফপি

ভারতে টেস্ট সিরিজ শেষ করে সাকিব চলে গিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে। ৯ অক্টোবর সেখানে থাকতেই নিজের অফিশিয়াল ফেসবুজ পেজে ৩২৭ শব্দের একটি দীর্ঘ বার্তা পোস্ট করেন সাকিব। যার শুরুতেই ছিল, ‘শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি সে সকল আত্মত্যাগকারী ছাত্রদের, যারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছেন ও আহত হয়েছেন।’ দীর্ঘ বার্তায় ছাত্র আন্দোলনে নিজের নীরবতায় দুঃখ প্রকাশের পাশাপাশি রাজনীতিতে নামার ব্যাখ্যাও দেন সাকিব। শেষ করেন বিদায়বেলায় সবাই তাঁর সঙ্গে থাকবেন বলে বিশ্বাস রেখে।

সাকিবের সেই বিশ্বাস কতটা পূরণ হবে, আপাতত তা অজানা। এরই মধ্যে সাকিবের খেলার পক্ষে-বিপক্ষে শুধু কথাই নয়, মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে জমায়েতও হয়েছে। ছোটখাটো অপ্রীতিকর ঘটনাও। সব পেছনে রেখে মিরপুরে সাকিবের ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলার পথটা এখন খোলা। যেটি হবে তাঁর ৭২তম টেস্ট। বিসিবি তাঁকে দলে রেখেছে, সরকার থেকেও পর্যাপ্ত নিরাপত্তার আশ্বাস আছে। কিন্তু যে প্রজন্ম সাকিবের দলকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করেছে, সে প্রজন্ম তাঁর ‘আত্মোপলব্ধি’ আমলে নেবে তো!

১৭ অক্টোবর সাকিবের ঢাকায় ফেরা আর ২১ অক্টোবর মিরপুরের সবুজ উইকেটে খেলতে নামার দৃশ্যগুলোয় কৌতূহলী চোখ তাই থাকছেই।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০২:১৬:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪
৩১
Translate »

সাকিবের প্রথম ইচ্ছা পূরণ, এরপর কী

আপডেট : ০২:১৬:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪

মিরপুরে খেলে টেস্টকে বিদায় জানানোর সুযোগ পেয়েছেন সাকিব আল হাসানবিসিবি

কানপুরে ঘোষণাটা দিতে গিয়ে দুটো ‘যদি’ জুড়ে দিয়েছিলেন সেদিন। বলেছিলেন, ‘যদি সুযোগ থাকে’, ‘যদি দেশে যাই’। ‘যদি’ নামের অনিশ্চয়তায় ভর করে সাকিব আল হাসান বলেছিলেন, ‘মিরপুর টেস্ট হবে আমার জন্য শেষ।’

আজ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মিরপুর টেস্টের জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড যে দলটা ঘোষণা করেছে, তাতে ‘যদি’ নামের প্রথম শর্তটা পূরণ হয়ে গেছে। সাকিব সুযোগ পেয়েছেন মিরপুর টেস্টের দলে। এখন বাকি দেশে ফেরা। সেটাও হয়ে যাচ্ছে আগামীকালই।

সব ঠিক থাকলে ২১ অক্টোবর মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলতে নামছেন সাকিব। কিন্তু কানপুর স্টেডিয়ামের ‘ইচ্ছা প্রকাশ’ যে পথ ধরে ‘ইচ্ছাপূরণে’ এসে পৌঁছেছে, তাতে ঘটেছে অনেক কিছুই। সাকিবের বহুবর্ণিল দেড় যুগের ক্যারিয়ারে যা একেবারেই নতুন কিছু, হয়তো অভাবনীয়ও।

যে সাকিব একাধিকবার নানা কারণ দেখিয়ে টেস্ট খেলা থেকে ছুটি নিয়েছেন, তাঁকেই শেষ টেস্টের জন্য আকুতি জানাতে হয়েছে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণে। ছিলেন দ্বাদশ সংসদের আওয়ামী লীগদলীয় সংসদ সদস্য। ৫ আগস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তনের সঙ্গে সরকারের মতো সাকিবও অনেকের চোখে ‘পতিত’। যেখানে আওয়ামী লীগদলীয় কোনো সংসদ সদস্য প্রকাশ্যে নেই, সেখানে খেলোয়াড়ি পরিচয়ে সাকিবের খেলে যাওয়া নিয়ে আপত্তির আওয়াজ বেশ প্রবলই।

কানপুরে টেস্ট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন সাকিব আল হাসান

কানপুরে টেস্ট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন সাকিব আল হাসান

আর এমন এক প্রেক্ষাপটে ২৬ সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ-ভারত কানপুর টেস্ট শুরুর আগে অবসরের ঘোষণা দিয়ে বসেন সাকিব। দেশের মাটিতে খেলার সম্ভাবনা নিয়ে অকপটেই বলেছিলেন, ‘দেশে যেহেতু অনেক পরিস্থিতি আছে, সবকিছু অবশ্যই আমার ওপরে না।’

মিরপুরে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে খেলে অবসর নিতে চান জানাতে গিয়ে দেশে এসে খেলে নির্বিঘ্নে দেশ ছেড়ে যাওয়ার নিশ্চয়তা চেয়েছিলেন সাকিব। একজন ক্রিকেটার হিসেবে সাকিব নিরাপত্তা এমনিতেই পান। কিন্তু যে নিরাপত্তা চেয়েছিলেন, সেই চাওয়াটা ছিল সরকারের কাছে।

হত্যা মামলার আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার বা দেশ থেকে বের হতে না পারার যে শঙ্কা, সে ব্যাপারেই আশ্বস্ত হতে চেয়েছিলেন। এর তিন দিন পরই যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ জানান, সাকিবকে রাজনৈতিক জায়গা থেকে তাঁর অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে। পরিষ্কার বলতে জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিষয়ে তাঁর মনোভাব জানানো। যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা মূলত সাকিবের কোর্টে বল ঠেলে দিয়েছিলেন। দেশের মাটিতে খেলতে চাইলে অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করার দায়িত্বটা তাঁর নিজেরই।

ঢাকায় ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলবেন সাকিব আল হাসান

ঢাকায় ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলবেন সাকিব আল হাসানএএফপি

ভারতে টেস্ট সিরিজ শেষ করে সাকিব চলে গিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে। ৯ অক্টোবর সেখানে থাকতেই নিজের অফিশিয়াল ফেসবুজ পেজে ৩২৭ শব্দের একটি দীর্ঘ বার্তা পোস্ট করেন সাকিব। যার শুরুতেই ছিল, ‘শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি সে সকল আত্মত্যাগকারী ছাত্রদের, যারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছেন ও আহত হয়েছেন।’ দীর্ঘ বার্তায় ছাত্র আন্দোলনে নিজের নীরবতায় দুঃখ প্রকাশের পাশাপাশি রাজনীতিতে নামার ব্যাখ্যাও দেন সাকিব। শেষ করেন বিদায়বেলায় সবাই তাঁর সঙ্গে থাকবেন বলে বিশ্বাস রেখে।

সাকিবের সেই বিশ্বাস কতটা পূরণ হবে, আপাতত তা অজানা। এরই মধ্যে সাকিবের খেলার পক্ষে-বিপক্ষে শুধু কথাই নয়, মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে জমায়েতও হয়েছে। ছোটখাটো অপ্রীতিকর ঘটনাও। সব পেছনে রেখে মিরপুরে সাকিবের ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলার পথটা এখন খোলা। যেটি হবে তাঁর ৭২তম টেস্ট। বিসিবি তাঁকে দলে রেখেছে, সরকার থেকেও পর্যাপ্ত নিরাপত্তার আশ্বাস আছে। কিন্তু যে প্রজন্ম সাকিবের দলকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করেছে, সে প্রজন্ম তাঁর ‘আত্মোপলব্ধি’ আমলে নেবে তো!

১৭ অক্টোবর সাকিবের ঢাকায় ফেরা আর ২১ অক্টোবর মিরপুরের সবুজ উইকেটে খেলতে নামার দৃশ্যগুলোয় কৌতূহলী চোখ তাই থাকছেই।