London ০২:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল রাজনৈতিক দল গঠনে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করা হচ্ছে

অনলাইন ডেস্ক

অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতার অবস্থান বজায় রাখতে হবে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, কোনো মহলকে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের এজেন্ডা যেন সরকারের কর্মপরিকল্পনার অংশ না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

শনিবার (২২ মার্চ) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।

অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টা ক্ষমতায় থেকে রাজনৈতিক দল গঠন প্রক্রিয়ায় প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত থাকায় জনমনে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।  সংস্কার আগে- নির্বাচন পরে, কিংবা নির্বাচন আগে- সংস্কার পরে এ ধরনের অনাবাশ্যক বিতর্কের কোনো অবকাশ নেই বলেও মনে করেন তিনি।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যেহেতু সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া দুটোই একই সঙ্গে চলতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমতের ভিত্তিতে একটি সংস্কার সনদ তৈরি হতেই পারে, নির্বাচিত সরকার পরবর্তীতে যা বাস্তবায়ন করবে।এমতাবস্থায় এখন অন্তর্বর্তী সরকারের মূলত করণীয় হচ্ছে- একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা এবং নির্বাচিত সরকারের নিকট দায়িত্ব হস্তান্তর করা।

তিনি বলেন, নির্বাচিত সরকার জনগণের কাঙ্খিত ঐক্যমত্যের সংস্কারগুলো সম্পন্ন করবে। কেননা জনগণের নিকট দায়বদ্ধ এবং ন্যায়বিচার ও সুশাসন নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ নির্বাচিত সরকারের পক্ষেই গ্রহণযোগ্য সংস্কার সম্পাদন সম্ভব। অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টা ক্ষমতায় থেকে রাজনৈতিক দল গঠন প্রক্রিয়ায় প্রত্যক্ষ -পরোক্ষভাবে জড়িত থাকায় জনমনে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় প্রশাসন যন্ত্রকে ব্যবহার করার নানা প্রকার লক্ষণ ও প্রমান ক্রমেই প্রকাশ পাচ্ছে, যা দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য মোটেই সুখকর নয়।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কর্তৃক প্রেরিত স্প্রেডশিটে যে অপশন/পছন্দগুলোর ঘরে টিক চিহ্ন দিতে বলা হয়েছে তাতে একটি বিষয় প্রতিভাত হয়েছে যে, যে বিষয়গুলো প্রস্তবাকারে আসতে পারতো তা প্রস্তাব না রেখে হ্যাঁ, না, উত্তর দিতে বলা হয়েছে। যেমন, প্রস্তাবগুলো গণপরিষদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন চাই কি না? হ্যাঁ অথবা না বলুন। কিন্তু প্রথমে সিদ্ধান্ত আসতে হবে যে, গণপরিষদের প্রস্তাবে আমরা একমত কিনা? একইভাবে ‘গণভোট’, ‘গণপরিষদ এবং আইন সভা’ হিসেবে নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন চাই কিনা ইত্যাদি হ্যাঁ – না বলুন।

সংবিধানের ‘প্রস্তাবনার’ মতো অতিগুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংস্কার কমিশনের সুপারিশে থাকলেও তা স্প্রেডশিটে উল্লেখ করা হয়নি। স্প্রেডশিটে ৭০টির মত প্রস্তাব উল্লেখ করা হলেও মূল প্রতিবেদনে সুপারিশ সংখ্যা প্রায় ১২৩টির মতো।

মির্জা ফখরুল বলেন, একইভাবে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের মূল প্রতিবেদনে ১৫০টির মত সুপারিশ তুলে ধরা হলেও স্প্রেডশিটে মাত্র ২৭টি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে, তার মধ্যে অধিকাংশই সংবিধান সংস্কারের সাথে সংশ্লিষ্ট। তাই আমরা মনে করছি- স্প্রেডশিটের সঙ্গে মূল সুপারিশমালার উপর আমাদের মতামত সংযুক্ত করে দিলে বিভ্রান্তি এড়ানো যাবে।

জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের স্প্রেডশিটের অবস্থা এবং কমিশন সদস্যদের বিভিন্ন সময়ের বক্তব্য ও বিশেষ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের বক্তব্য বিবৃতির মধ্যে মিল পাওয়া যায় যাতে জনমনে প্রশ্নের জন্ম হতে পারে যে, সকল বিষয় যেন একটি পূর্ব নির্ধারিত কর্মপরিকল্পনার অংশ, যা গণতন্ত্রের স্বার্থের পক্ষে কিনা বলা মুশকিল।

সুপারিশসমূহ পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, এতে ভবিষ্যতে অনির্বাচিত ব্যক্তিদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে নিয়োগের অযৌক্তিক প্রচেষ্টা রয়েছে যা অনভিপ্রেত।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সেলিমা রহমান ও সালেহ উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৬:৪১:২৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫
১৮
Translate »

সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল রাজনৈতিক দল গঠনে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করা হচ্ছে

আপডেট : ০৬:৪১:২৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫

অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতার অবস্থান বজায় রাখতে হবে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, কোনো মহলকে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের এজেন্ডা যেন সরকারের কর্মপরিকল্পনার অংশ না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

শনিবার (২২ মার্চ) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।

অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টা ক্ষমতায় থেকে রাজনৈতিক দল গঠন প্রক্রিয়ায় প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত থাকায় জনমনে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।  সংস্কার আগে- নির্বাচন পরে, কিংবা নির্বাচন আগে- সংস্কার পরে এ ধরনের অনাবাশ্যক বিতর্কের কোনো অবকাশ নেই বলেও মনে করেন তিনি।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যেহেতু সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া দুটোই একই সঙ্গে চলতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমতের ভিত্তিতে একটি সংস্কার সনদ তৈরি হতেই পারে, নির্বাচিত সরকার পরবর্তীতে যা বাস্তবায়ন করবে।এমতাবস্থায় এখন অন্তর্বর্তী সরকারের মূলত করণীয় হচ্ছে- একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা এবং নির্বাচিত সরকারের নিকট দায়িত্ব হস্তান্তর করা।

তিনি বলেন, নির্বাচিত সরকার জনগণের কাঙ্খিত ঐক্যমত্যের সংস্কারগুলো সম্পন্ন করবে। কেননা জনগণের নিকট দায়বদ্ধ এবং ন্যায়বিচার ও সুশাসন নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ নির্বাচিত সরকারের পক্ষেই গ্রহণযোগ্য সংস্কার সম্পাদন সম্ভব। অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টা ক্ষমতায় থেকে রাজনৈতিক দল গঠন প্রক্রিয়ায় প্রত্যক্ষ -পরোক্ষভাবে জড়িত থাকায় জনমনে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় প্রশাসন যন্ত্রকে ব্যবহার করার নানা প্রকার লক্ষণ ও প্রমান ক্রমেই প্রকাশ পাচ্ছে, যা দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য মোটেই সুখকর নয়।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কর্তৃক প্রেরিত স্প্রেডশিটে যে অপশন/পছন্দগুলোর ঘরে টিক চিহ্ন দিতে বলা হয়েছে তাতে একটি বিষয় প্রতিভাত হয়েছে যে, যে বিষয়গুলো প্রস্তবাকারে আসতে পারতো তা প্রস্তাব না রেখে হ্যাঁ, না, উত্তর দিতে বলা হয়েছে। যেমন, প্রস্তাবগুলো গণপরিষদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন চাই কি না? হ্যাঁ অথবা না বলুন। কিন্তু প্রথমে সিদ্ধান্ত আসতে হবে যে, গণপরিষদের প্রস্তাবে আমরা একমত কিনা? একইভাবে ‘গণভোট’, ‘গণপরিষদ এবং আইন সভা’ হিসেবে নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন চাই কিনা ইত্যাদি হ্যাঁ – না বলুন।

সংবিধানের ‘প্রস্তাবনার’ মতো অতিগুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংস্কার কমিশনের সুপারিশে থাকলেও তা স্প্রেডশিটে উল্লেখ করা হয়নি। স্প্রেডশিটে ৭০টির মত প্রস্তাব উল্লেখ করা হলেও মূল প্রতিবেদনে সুপারিশ সংখ্যা প্রায় ১২৩টির মতো।

মির্জা ফখরুল বলেন, একইভাবে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের মূল প্রতিবেদনে ১৫০টির মত সুপারিশ তুলে ধরা হলেও স্প্রেডশিটে মাত্র ২৭টি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে, তার মধ্যে অধিকাংশই সংবিধান সংস্কারের সাথে সংশ্লিষ্ট। তাই আমরা মনে করছি- স্প্রেডশিটের সঙ্গে মূল সুপারিশমালার উপর আমাদের মতামত সংযুক্ত করে দিলে বিভ্রান্তি এড়ানো যাবে।

জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের স্প্রেডশিটের অবস্থা এবং কমিশন সদস্যদের বিভিন্ন সময়ের বক্তব্য ও বিশেষ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের বক্তব্য বিবৃতির মধ্যে মিল পাওয়া যায় যাতে জনমনে প্রশ্নের জন্ম হতে পারে যে, সকল বিষয় যেন একটি পূর্ব নির্ধারিত কর্মপরিকল্পনার অংশ, যা গণতন্ত্রের স্বার্থের পক্ষে কিনা বলা মুশকিল।

সুপারিশসমূহ পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, এতে ভবিষ্যতে অনির্বাচিত ব্যক্তিদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে নিয়োগের অযৌক্তিক প্রচেষ্টা রয়েছে যা অনভিপ্রেত।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সেলিমা রহমান ও সালেহ উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।