London ১০:৩৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম:
সহায়-সম্বলহীন শুক্কুরী বেগমকে ঘর উপহার দিলেন তারেক রহমান পটুয়াখালীতে মার্কিন নাগরিককে গণধর্ষণ মামলার ০৩ আসামি গ্রেফতার র‌্যাব-১২ এর অভিযানে বিপুল গাঁজা উদ্ধার, গ্রেফতার ১ কালিয়াকৈরে প্রথম বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন, দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় সংগ্রামী জীবনের প্রতিচ্ছবি: উল্লাপাড়ায় আলোচনায় ডিআইজি (অব.) খান সাঈদ হাসান রাজশাহীতে ৯ টা মামলার চার্জশিট দাখিল গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট নিয়ে লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের বিশেষ আলোচনা: ‘আর্থিক স্বাধীনতা ছাড়া গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সম্ভব নয়’ — কামাল আহমদ তরুণদের ক্ষমতায়নে ১৩.৭ মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ করেছে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল: সমাপ্ত হলো সামার ফেয়ার ৯ দিন ধরে নিখোঁজ সামিরা,এলাকার বাসির মানব বন্ধনে প্রশাসনের গাফলতির অভিযোগ পটুয়াখালীতে নদী থেকে দুই যুবকের মরদেহ উদ্ধার

শোকে বাড়ছে রোগের চাপ জুলাই স্বাস্থ্য কার্ডের দাবী শহীদ পরিবারের

মুহাম্মাদ রাকিব, পটুয়াখালী প্রতিনিধি:

গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসজুড়ে সারা দেশে চলা গণ-আন্দোলন ও অভ্যুত্থানের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ছিল পটুয়াখালী। আন্দোলনকালে এই জেলার বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান ২৫ জন আন্দোলনকারী—যাদের শহীদ ঘোষণা করা হয় পরবর্তীতে। আহত হন আরও ১৮৫ জন, যাঁরা পরিচিত ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে।

কিন্তু এক বছর পার হয়ে গেলেও শহীদদের পরিবারগুলোর জীবনে ফেরেনি স্বস্তি বা স্বাভাবিকতা। বরং স্বজন হারানোর শোকের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দারিদ্র্য, অনিশ্চয়তা এবং শারীরিক ও মানসিক রোগের চাপ। বহু পরিবার আজ কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি—কারও ঘর নেই, কারও উপার্জনক্ষম সদস্য হারিয়েছে, আবার কারও শিশুসন্তান সংসারের হাল ধরতে বাধ্য হচ্ছে।
শহীদ পরিবারগুলোর অধিকাংশই নিম্নআয়ের মানুষ। যাঁরা আন্দোলনে নিহত হয়েছেন, তাঁদের অনেকেই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। ফলে মৃত্যু শুধু একজন সদস্যকে কেড়ে নেয়নি, পুরো পরিবারের জীবিকা ও ভবিষ্যৎকেও অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে।
এই পরিবারগুলোর ভাঙনের শুরু হয়েছে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা দিয়ে, পরে তা ছড়িয়ে পড়েছে সম্পর্কের বন্ধন ও মানসিক স্বাস্থ্যেও। দুঃশ্চিন্তা, বিষণ্নতা, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগসহ নানা জটিল রোগ বাসা বেঁধেছে শহীদ পরিবারে। চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য না থাকায় রোগ আরও জটিল রূপ নিচ্ছে।

কিছু পরিবার আজ মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়েছে। কেউ ভাড়া বাড়িতে থেকেও মাস শেষে ভাড়া দিতে পারছে না। কেউ বাধ্য হয়ে অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়েকে পাঠাচ্ছে শ্রমবাজারে—গার্মেন্টস, চায়ের দোকান, এমনকি নির্মাণ কাজেও। স্কুলে ফেরা তো দূরের কথা, অনেকে এখন দুই বেলা খাবার নিশ্চিত করতেই ব্যস্ত।

সরকারের পক্ষ থেকে আহতদের চিকিৎসা সহায়তার জন্য ‘জুলাই যোদ্ধা স্বাস্থ্য কার্ড’ চালু থাকলেও শহীদদের পরিবার এই সুবিধার বাইরে থেকে গেছে। পরিবারগুলোর দাবি, আহতদের মতো শহীদদের স্ত্রী, সন্তান, মা-বাবাকেও এই কার্ডের আওতায় আনতে হবে। তাঁরা অন্তত ন্যূনতম চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ পেতে চান—যাতে প্রতিদিনের জীবন সংগ্রামে আরেকটু সহনীয়তা আসে।
শহীদ বাচ্চু হাওলাদারের স্ত্রী লাইলী বেগম বলেন, “ছেলেটার বয়স মাত্র ১৪। স্কুলে থাকার কথা ছিল ওর। কিন্তু স্বামীকে হারিয়ে সংসার চালাতে পারছি না। বাধ্য হয়ে ওকে ঢাকায় পাঠিয়েছি কাজে। নিজের ওষুধ কেনার টাকাও নেই।”
শহীদ রায়হানের বাবা কামাল আকন বলেন, “ছেলেকে হারিয়ে আমিও এখন রোগী। হৃদরোগ, ডায়াবেটিসে ভুগছি। চিকিৎসা করাতে পারি না। রাষ্ট্রের জন্য ছেলেকে দিয়েছি, কিন্তু এখন পরিবারসহ ধুকে ধুকে মরছি।” আমার স্ত্রী ও একমাত্র মেয়েটাও রোগে নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক তোফাজ্জেল হোসেন জানান, “যারা দেশের জন্য জীবন দিয়েছে, তাদের পরিবার আজ পথে বসার মতো অবস্থা। স্বাস্থ্য কার্ড, ঘর, সহায়তা—সব কিছুরই দরকার আছে। সরকার দ্রুত কিছু না করলে এরা ভেঙে পড়বে।”
সিভিল সার্জন ডাক্তার মোহাম্মদ খালেদুর রহমান মিয়া বলেন, “জুলাই আন্দোলনে আহতদের জন্য স্বাস্থ্য কার্ড বিতরণ কার্যক্রম চালু রয়েছে। এর আওতায় তারা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন। শহীদ পরিবারের দাবীর বিষয়েও প্রস্তাবনা পাঠানো যেতে পারে।”

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০২:২৯:৫৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫
৩৩
Translate »

শোকে বাড়ছে রোগের চাপ জুলাই স্বাস্থ্য কার্ডের দাবী শহীদ পরিবারের

আপডেট : ০২:২৯:৫৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫

গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসজুড়ে সারা দেশে চলা গণ-আন্দোলন ও অভ্যুত্থানের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ছিল পটুয়াখালী। আন্দোলনকালে এই জেলার বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান ২৫ জন আন্দোলনকারী—যাদের শহীদ ঘোষণা করা হয় পরবর্তীতে। আহত হন আরও ১৮৫ জন, যাঁরা পরিচিত ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে।

কিন্তু এক বছর পার হয়ে গেলেও শহীদদের পরিবারগুলোর জীবনে ফেরেনি স্বস্তি বা স্বাভাবিকতা। বরং স্বজন হারানোর শোকের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দারিদ্র্য, অনিশ্চয়তা এবং শারীরিক ও মানসিক রোগের চাপ। বহু পরিবার আজ কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি—কারও ঘর নেই, কারও উপার্জনক্ষম সদস্য হারিয়েছে, আবার কারও শিশুসন্তান সংসারের হাল ধরতে বাধ্য হচ্ছে।
শহীদ পরিবারগুলোর অধিকাংশই নিম্নআয়ের মানুষ। যাঁরা আন্দোলনে নিহত হয়েছেন, তাঁদের অনেকেই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। ফলে মৃত্যু শুধু একজন সদস্যকে কেড়ে নেয়নি, পুরো পরিবারের জীবিকা ও ভবিষ্যৎকেও অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে।
এই পরিবারগুলোর ভাঙনের শুরু হয়েছে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা দিয়ে, পরে তা ছড়িয়ে পড়েছে সম্পর্কের বন্ধন ও মানসিক স্বাস্থ্যেও। দুঃশ্চিন্তা, বিষণ্নতা, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগসহ নানা জটিল রোগ বাসা বেঁধেছে শহীদ পরিবারে। চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য না থাকায় রোগ আরও জটিল রূপ নিচ্ছে।

কিছু পরিবার আজ মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়েছে। কেউ ভাড়া বাড়িতে থেকেও মাস শেষে ভাড়া দিতে পারছে না। কেউ বাধ্য হয়ে অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়েকে পাঠাচ্ছে শ্রমবাজারে—গার্মেন্টস, চায়ের দোকান, এমনকি নির্মাণ কাজেও। স্কুলে ফেরা তো দূরের কথা, অনেকে এখন দুই বেলা খাবার নিশ্চিত করতেই ব্যস্ত।

সরকারের পক্ষ থেকে আহতদের চিকিৎসা সহায়তার জন্য ‘জুলাই যোদ্ধা স্বাস্থ্য কার্ড’ চালু থাকলেও শহীদদের পরিবার এই সুবিধার বাইরে থেকে গেছে। পরিবারগুলোর দাবি, আহতদের মতো শহীদদের স্ত্রী, সন্তান, মা-বাবাকেও এই কার্ডের আওতায় আনতে হবে। তাঁরা অন্তত ন্যূনতম চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ পেতে চান—যাতে প্রতিদিনের জীবন সংগ্রামে আরেকটু সহনীয়তা আসে।
শহীদ বাচ্চু হাওলাদারের স্ত্রী লাইলী বেগম বলেন, “ছেলেটার বয়স মাত্র ১৪। স্কুলে থাকার কথা ছিল ওর। কিন্তু স্বামীকে হারিয়ে সংসার চালাতে পারছি না। বাধ্য হয়ে ওকে ঢাকায় পাঠিয়েছি কাজে। নিজের ওষুধ কেনার টাকাও নেই।”
শহীদ রায়হানের বাবা কামাল আকন বলেন, “ছেলেকে হারিয়ে আমিও এখন রোগী। হৃদরোগ, ডায়াবেটিসে ভুগছি। চিকিৎসা করাতে পারি না। রাষ্ট্রের জন্য ছেলেকে দিয়েছি, কিন্তু এখন পরিবারসহ ধুকে ধুকে মরছি।” আমার স্ত্রী ও একমাত্র মেয়েটাও রোগে নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক তোফাজ্জেল হোসেন জানান, “যারা দেশের জন্য জীবন দিয়েছে, তাদের পরিবার আজ পথে বসার মতো অবস্থা। স্বাস্থ্য কার্ড, ঘর, সহায়তা—সব কিছুরই দরকার আছে। সরকার দ্রুত কিছু না করলে এরা ভেঙে পড়বে।”
সিভিল সার্জন ডাক্তার মোহাম্মদ খালেদুর রহমান মিয়া বলেন, “জুলাই আন্দোলনে আহতদের জন্য স্বাস্থ্য কার্ড বিতরণ কার্যক্রম চালু রয়েছে। এর আওতায় তারা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন। শহীদ পরিবারের দাবীর বিষয়েও প্রস্তাবনা পাঠানো যেতে পারে।”