London ০৫:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শুল্ক ৩ মাসের জন্য স্থগিত করায় ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানালেন ড. ইউনূস

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

নতুন পাল্টা শুল্ক স্থগিত করায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানালেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বুধবার (৯ এপ্রিল) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড পেজে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, আমাদের অনুরোধে ইতিবাচক সাড়া দিয়ে শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করায় আপনাকে ধন্যবাদ, মিস্টার প্রেসিডেন্ট। আপনার বাণিজ্য এজেন্ডাকে সহযোগিতা করার জন্য আপনার প্রশাসনের সঙ্গে আমরা কাজ চালিয়ে যাব।

jagonews24.com

এর আগে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর নতুন করে ৩৭ শতাংশ রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ বা পাল্টা শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। নতুন শুল্কের কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের বড় বাজারটিতে পণ্য রপ্তানি, বিশেষ করে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বড় ধাক্কার আশঙ্কাও করেন রপ্তানিকারকরা।

এতদিন বাংলাদেশের মোট পণ্য রপ্তানির ১৮ শতাংশের গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক ছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ বা পাল্টা শুল্ক আরোপের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে দুটি চিঠি পাঠানো হবে বলে রোববার (৬ এপ্রিল) সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সোমবার (৭ এপ্রিল) বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা ৩৭ শতাংশ শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত চেয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

চিঠিতে বলা হয়, আমরা আপনাকে আশ্বস্ত করছি, আপনার বাণিজ্য এজেন্ডা সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়নে সহযোগিতার জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে বাংলাদেশে। আপনার ঘোষণার পর আমি আমার উচ্চ প্রতিনিধিকে ওয়াশিংটন ডিসিতে পাঠিয়েছি যাতে ১৭ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশের দ্রুত বর্ধনশীল বাজারে আমেরিকান রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো যায়। আমরাই প্রথম দেশ যারা এ ধরনের ইতিবাচক উদ্যোগ নিয়েছি।

‘আমরাই প্রথম দেশ যারা রপ্তানির ওপর স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়ার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির জন্য বহু বছরের চুক্তি করেছি। আমাদের কর্মকর্তারা তখন থেকেই বাংলাদেশে আমেরিকান রপ্তানি দ্রুত বাড়ানোর জন্য সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা চিহ্নিত করতে কাজ করছেন। বাণিজ্য উপদেষ্টা আমাদের বিশদ কার্যক্রম নিয়ে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদারে কাজ করবেন।’

চিঠিতে বলা হয়, আমাদের কর্মপরিকল্পনার মূল ফোকাস তুলা, গম, ভুট্টা, সয়াবিনসহ এ জাতীয় মার্কিন পণ্যের আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো, যা মার্কিন কৃষকদের আয় ও জীবিকা নির্বাহে অবদান রাখবে। মার্কিন তুলার বাজারে গতি বাড়াতে আমরা বাংলাদেশে বন্ডেড ওয়্যারহাউজিং (গুদামজাতকরণ) সুবিধা চূড়ান্ত করছি, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কমুক্ত সুবিধা থাকবে।

ড. ইউনূস চিঠিতে বলেন, দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে বেশিরভাগ মার্কিন রপ্তানিতে বাংলাদেশের শুল্ক রয়েছে। আমরা উপরোক্ত মার্কিন কৃষিপণ্য ও স্ক্র্যাপ ধাতুর ওপর শূন্য শুল্ক দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা শীর্ষ মার্কিন রপ্তানি পণ্য গ্যাস টারবাইন, সেমিকন্ডাক্টর ও চিকিৎসা সরঞ্জামের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক কমানোর জন্য কাজ করছি।

‘আমরা এরই মধ্যে বাংলাদেশে স্টারলিংক চালু করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সম্পন্ন করেছি। ইন্টারনেটের এই গতি বেসামরিক বিমান চলাচল এবং প্রতিরক্ষাসহ বেশ কয়েকটি উন্নত প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশে মার্কিন ব্যবসার জন্য একটি নতুন যুগের সূচনা করবে।’

চিঠিতে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আরও লেখেন, আমরা পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে চলমান ও পরিকল্পিত কর্মপরিকল্পনাগুলো সম্পন্ন করবো বলে আশাবাদী। অনুগ্রহ করে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সুচারুভাবে বাস্তবায়নে আমাদের প্রয়োজনীয় সময় দিন। আপনাকে অনুরোধ করে বলতে চাই, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানির ওপর পারস্পরিক শুল্ক আরোপের বিষয়টি তিন মাসের জন্য স্থগিত করুন। আমি আন্তরিকভাবে আশা করি আপনি এ অনুরোধটি রাখবেন।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০১:৩৭:৩৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫
১৩
Translate »

শুল্ক ৩ মাসের জন্য স্থগিত করায় ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানালেন ড. ইউনূস

আপডেট : ০১:৩৭:৩৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫

নতুন পাল্টা শুল্ক স্থগিত করায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানালেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বুধবার (৯ এপ্রিল) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড পেজে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, আমাদের অনুরোধে ইতিবাচক সাড়া দিয়ে শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করায় আপনাকে ধন্যবাদ, মিস্টার প্রেসিডেন্ট। আপনার বাণিজ্য এজেন্ডাকে সহযোগিতা করার জন্য আপনার প্রশাসনের সঙ্গে আমরা কাজ চালিয়ে যাব।

jagonews24.com

এর আগে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর নতুন করে ৩৭ শতাংশ রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ বা পাল্টা শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। নতুন শুল্কের কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের বড় বাজারটিতে পণ্য রপ্তানি, বিশেষ করে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বড় ধাক্কার আশঙ্কাও করেন রপ্তানিকারকরা।

এতদিন বাংলাদেশের মোট পণ্য রপ্তানির ১৮ শতাংশের গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক ছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ বা পাল্টা শুল্ক আরোপের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে দুটি চিঠি পাঠানো হবে বলে রোববার (৬ এপ্রিল) সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সোমবার (৭ এপ্রিল) বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা ৩৭ শতাংশ শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত চেয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

চিঠিতে বলা হয়, আমরা আপনাকে আশ্বস্ত করছি, আপনার বাণিজ্য এজেন্ডা সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়নে সহযোগিতার জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে বাংলাদেশে। আপনার ঘোষণার পর আমি আমার উচ্চ প্রতিনিধিকে ওয়াশিংটন ডিসিতে পাঠিয়েছি যাতে ১৭ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশের দ্রুত বর্ধনশীল বাজারে আমেরিকান রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো যায়। আমরাই প্রথম দেশ যারা এ ধরনের ইতিবাচক উদ্যোগ নিয়েছি।

‘আমরাই প্রথম দেশ যারা রপ্তানির ওপর স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়ার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির জন্য বহু বছরের চুক্তি করেছি। আমাদের কর্মকর্তারা তখন থেকেই বাংলাদেশে আমেরিকান রপ্তানি দ্রুত বাড়ানোর জন্য সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা চিহ্নিত করতে কাজ করছেন। বাণিজ্য উপদেষ্টা আমাদের বিশদ কার্যক্রম নিয়ে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদারে কাজ করবেন।’

চিঠিতে বলা হয়, আমাদের কর্মপরিকল্পনার মূল ফোকাস তুলা, গম, ভুট্টা, সয়াবিনসহ এ জাতীয় মার্কিন পণ্যের আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো, যা মার্কিন কৃষকদের আয় ও জীবিকা নির্বাহে অবদান রাখবে। মার্কিন তুলার বাজারে গতি বাড়াতে আমরা বাংলাদেশে বন্ডেড ওয়্যারহাউজিং (গুদামজাতকরণ) সুবিধা চূড়ান্ত করছি, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কমুক্ত সুবিধা থাকবে।

ড. ইউনূস চিঠিতে বলেন, দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে বেশিরভাগ মার্কিন রপ্তানিতে বাংলাদেশের শুল্ক রয়েছে। আমরা উপরোক্ত মার্কিন কৃষিপণ্য ও স্ক্র্যাপ ধাতুর ওপর শূন্য শুল্ক দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা শীর্ষ মার্কিন রপ্তানি পণ্য গ্যাস টারবাইন, সেমিকন্ডাক্টর ও চিকিৎসা সরঞ্জামের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক কমানোর জন্য কাজ করছি।

‘আমরা এরই মধ্যে বাংলাদেশে স্টারলিংক চালু করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সম্পন্ন করেছি। ইন্টারনেটের এই গতি বেসামরিক বিমান চলাচল এবং প্রতিরক্ষাসহ বেশ কয়েকটি উন্নত প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশে মার্কিন ব্যবসার জন্য একটি নতুন যুগের সূচনা করবে।’

চিঠিতে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আরও লেখেন, আমরা পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে চলমান ও পরিকল্পিত কর্মপরিকল্পনাগুলো সম্পন্ন করবো বলে আশাবাদী। অনুগ্রহ করে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সুচারুভাবে বাস্তবায়নে আমাদের প্রয়োজনীয় সময় দিন। আপনাকে অনুরোধ করে বলতে চাই, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানির ওপর পারস্পরিক শুল্ক আরোপের বিষয়টি তিন মাসের জন্য স্থগিত করুন। আমি আন্তরিকভাবে আশা করি আপনি এ অনুরোধটি রাখবেন।