London ১১:৩২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শবে কদরে যে দোয়া পড়বেন

অনলাইন ডেস্ক:

পরিত্র মাহে রমজানে এমন একটি রাত রয়েছে, যে রাত হাজার রাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। ওই রাতেই পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছিল। কোরআনে ওই রাতের বর্ণনা এসেছে সুরা কাদরে। আল্লাহ বলেন,

اِنَّاۤ اَنۡزَلۡنٰهُ فِیۡ لَیۡلَۃِ الۡقَدۡرِ وَمَاۤ اَدۡرٰىکَ مَا لَیۡلَۃُ الۡقَدۡرِلَیۡلَۃُ الۡقَدۡرِ خَیۡرٌ مِّنۡ اَلۡفِ شَهۡرٍ تَنَزَّلُ الۡمَلٰٓئِکَۃُ وَ الرُّوۡحُ فِیۡهَا بِاِذۡنِ رَبِّهِمۡ مِنۡ کُلِّ اَمۡرٍ سَلٰمٌ هِیَ حَتّٰی مَطۡلَعِ الۡفَجۡرِ

নিশ্চয়ই আমি এটি নাজিল করেছি ‘লাইলাতুল কদরে।’ তোমাকে কিসে জানাবে ‘লাইলাতুল কদর’ কী? ‘লাইলাতুল কদর’ হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতারা ও রূহ (জিবরাইল) তাদের রবের অনুমতিক্রমে সকল সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতরণ করে। শান্তিময় সেই রাত, ফজরের সূচনা পর্যন্ত। (সুরা কাদর: ১-৫)

কোরআনে আরবি ভাষায় যে রাতটিকে বলা হয়েছে ‘লাইলাতুল কদর’ ফার্সি ভাষায় তাই ‘শবে কদর’ অর্থাৎ কদরের রাত বা সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত। আমাদের দেশে কদরের রাত বোঝাতে ‘শবে কদর’ই বেশি ব্যবহৃত হয়।

লাইলাতুল কদর বা শবে কদর রমজানেরই একটি রাত এটা সুনিশ্চিত। তবে রমজানের কোন রাতটি লাইলাতুল কদর তা সুনির্দিষ্ট করে বলে দেওয়া হয়নি। একাধিক বর্ণনায় এসেছে, নবিজি (সা.) বলেছেন, লাইলাতুল কদর রমজানের শেষ দশকের একটি রাত। যে কারণে তিনি রমজানের শেষ দশকটি ইতেকাফে কাটাতেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করতেন এবং বলতেন, আপনারা লাইলাতুল কদরকে রমজানের শেষ দশকে অনুসন্ধান করুন। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)

আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: আমাকে লাইলাতুল কদর দেখানো হয়েছিল, তারপর আমার পরিবারের একজন আমাকে জাগিয়ে দিলেন, ফলে আমি তা ভুলে গেলাম। আপনারা লাইলাতুল কদর রমজানের শেষ দশ রাতে অনুসন্ধান করুন। (সহিহ মুসলিম)

কিছু বর্ণনায় এসেছে, নবিজি (সা.) রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর খোঁজার নির্দেশ দিয়েছেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, রমজান মাসের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে আপনারা লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করুন। (সহিহ বুখারি)

অর্থাৎ রমজানের শেষ দশকের যে কোনো একটি রাত অথবা ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ রমজানের দিবসপূর্ব রাতগুলোর কোনো একটি রাত লাইলাতুল কদর।

তাই রমজানের শেষ দশকের প্রতটি রাত বিশেষত বেজোড় রাতগুলো যতো বেশি সম্ভব আল্লাহ তাআলার ইবাদতে কাটানোর চেষ্টা করা উচিত। নিজের ভুলত্রুটির জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত।

নবিজি (সা.) নিজের স্ত্রী আয়েশাকে (রা.) লাইলাতুল কদরে এ দোয়াটি পড়তে বলেছেন,

اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুওউন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি

অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাকারী, আপনি ক্ষমা করতেই ভালোবাসেন। তাই আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন।

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহর রাসুলকে (সা.) তিনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন, আমি যদি কদরের রাত পেয়ে যাই তবে কী দোয়া পড়বো? আল্লাহর রাসুল (সা.) তাকে এ দোয়াটি পড়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। (সুনানে তিরমিজি)

লাইলাতুল কদর হওয়ার সম্ভাবনাপূর্ণ রাতগুলোতে আমরাও এ দোয়াটি পড়তে পারি।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৮:২৩:২৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫
১৩
Translate »

শবে কদরে যে দোয়া পড়বেন

আপডেট : ০৮:২৩:২৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫

পরিত্র মাহে রমজানে এমন একটি রাত রয়েছে, যে রাত হাজার রাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। ওই রাতেই পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছিল। কোরআনে ওই রাতের বর্ণনা এসেছে সুরা কাদরে। আল্লাহ বলেন,

اِنَّاۤ اَنۡزَلۡنٰهُ فِیۡ لَیۡلَۃِ الۡقَدۡرِ وَمَاۤ اَدۡرٰىکَ مَا لَیۡلَۃُ الۡقَدۡرِلَیۡلَۃُ الۡقَدۡرِ خَیۡرٌ مِّنۡ اَلۡفِ شَهۡرٍ تَنَزَّلُ الۡمَلٰٓئِکَۃُ وَ الرُّوۡحُ فِیۡهَا بِاِذۡنِ رَبِّهِمۡ مِنۡ کُلِّ اَمۡرٍ سَلٰمٌ هِیَ حَتّٰی مَطۡلَعِ الۡفَجۡرِ

নিশ্চয়ই আমি এটি নাজিল করেছি ‘লাইলাতুল কদরে।’ তোমাকে কিসে জানাবে ‘লাইলাতুল কদর’ কী? ‘লাইলাতুল কদর’ হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতারা ও রূহ (জিবরাইল) তাদের রবের অনুমতিক্রমে সকল সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতরণ করে। শান্তিময় সেই রাত, ফজরের সূচনা পর্যন্ত। (সুরা কাদর: ১-৫)

কোরআনে আরবি ভাষায় যে রাতটিকে বলা হয়েছে ‘লাইলাতুল কদর’ ফার্সি ভাষায় তাই ‘শবে কদর’ অর্থাৎ কদরের রাত বা সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত। আমাদের দেশে কদরের রাত বোঝাতে ‘শবে কদর’ই বেশি ব্যবহৃত হয়।

লাইলাতুল কদর বা শবে কদর রমজানেরই একটি রাত এটা সুনিশ্চিত। তবে রমজানের কোন রাতটি লাইলাতুল কদর তা সুনির্দিষ্ট করে বলে দেওয়া হয়নি। একাধিক বর্ণনায় এসেছে, নবিজি (সা.) বলেছেন, লাইলাতুল কদর রমজানের শেষ দশকের একটি রাত। যে কারণে তিনি রমজানের শেষ দশকটি ইতেকাফে কাটাতেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করতেন এবং বলতেন, আপনারা লাইলাতুল কদরকে রমজানের শেষ দশকে অনুসন্ধান করুন। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)

আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: আমাকে লাইলাতুল কদর দেখানো হয়েছিল, তারপর আমার পরিবারের একজন আমাকে জাগিয়ে দিলেন, ফলে আমি তা ভুলে গেলাম। আপনারা লাইলাতুল কদর রমজানের শেষ দশ রাতে অনুসন্ধান করুন। (সহিহ মুসলিম)

কিছু বর্ণনায় এসেছে, নবিজি (সা.) রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর খোঁজার নির্দেশ দিয়েছেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, রমজান মাসের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে আপনারা লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করুন। (সহিহ বুখারি)

অর্থাৎ রমজানের শেষ দশকের যে কোনো একটি রাত অথবা ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ রমজানের দিবসপূর্ব রাতগুলোর কোনো একটি রাত লাইলাতুল কদর।

তাই রমজানের শেষ দশকের প্রতটি রাত বিশেষত বেজোড় রাতগুলো যতো বেশি সম্ভব আল্লাহ তাআলার ইবাদতে কাটানোর চেষ্টা করা উচিত। নিজের ভুলত্রুটির জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত।

নবিজি (সা.) নিজের স্ত্রী আয়েশাকে (রা.) লাইলাতুল কদরে এ দোয়াটি পড়তে বলেছেন,

اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুওউন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি

অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাকারী, আপনি ক্ষমা করতেই ভালোবাসেন। তাই আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন।

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহর রাসুলকে (সা.) তিনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন, আমি যদি কদরের রাত পেয়ে যাই তবে কী দোয়া পড়বো? আল্লাহর রাসুল (সা.) তাকে এ দোয়াটি পড়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। (সুনানে তিরমিজি)

লাইলাতুল কদর হওয়ার সম্ভাবনাপূর্ণ রাতগুলোতে আমরাও এ দোয়াটি পড়তে পারি।