London ০৮:৫৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম:
সালাম-বরকত-রফিকের রক্তের অঙ্গীকারে ছিলো গণঅভ্যুত্থানের শক্তি ,প্রধান উপদেষ্টা সম্মেলন স্থগিত, অনির্দিষ্টকালের হরতাল ডেকেছে বিএনপি কুয়েতের মরুভূমিতে বাংলাদেশিদের মিলনমেলা গরুচুরির অভিযোগে স্বেচ্ছাসেবক দলের দুই নেতাকে গণপিটুনি গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই লুটিয়ে পড়লেন সাবিনা ইয়াসমিন পুলিশকে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের নির্দেশ রাজনৈতিক নেতৃত্বই দিয়েছিল এইচআরডব্লিউ ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ কোন পথে’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত নেত্রকোনা সীমান্তে টংক আন্দোলনের নেত্রী রাশি মণি’র হাজংয়ের ৭৯তম প্রয়াণ দিবস পালিত ফরিদপুরে রিকশা ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে চালককে হত্যা বিয়ে করলেন সারজিস আলম

লক্ষ্মীপুরে ছাত্র হত্যার আসামি সালাহ উদ্দিন এখন সৌদি আরবে

নিজের ফেসবুক ওয়ালে সৌদি আরবে অবস্থানের ছবি পোস্ট করেছেন লক্ষ্মীপুরের উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান এ কে এম সালাহ উদ্দিনছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

লক্ষ্মীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রকাশ্যে গুলি করে চার শিক্ষার্থীসহ ১২ জনকে খুনের ঘটনার দুই মাস পেরিয়ে গেছে। তবে হত্যা মামলার প্রধান অভিযুক্ত লক্ষ্মীপুরের এ কে এম সালাহ উদ্দিনসহ অস্ত্রধারী আসামিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। সালাহ উদ্দিন পৌরসভার সাবেক আলোচিত মেয়র প্রয়াত আবু তাহেরের ছেলে ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। বর্তমানে তিনি সৌদি আরবে অবস্থান করছেন বলে প্রথম আলোকে মুঠোফোনে জানিয়েছেন। তবে কীভাবে তিনি বিদেশে পাড়ি দিলেন, সে বিষয়ে কোনো তথ্য জানাতে চাননি।

গত ৪ আগস্ট আন্দোলনে গিয়ে গুলিতে প্রাণ হারানো দালাল বাজার ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেনের বাবা আমির হোসেন বাদী হয়ে ১৪ আগস্ট থানায় হত্যা মামলা করেন। তবে এখনো মামলার আসামিরা ধরা পড়েননি। প্রথম আলোকে আমির হোসেন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের হত্যার সঙ্গে সালাহ উদ্দিন সরাসরি জড়িত। তাঁর নৃশংসতার কাহিনি এরশাদ শিকদারকেও হার মানিয়েছে। আমাদের দাবি এখন একটাই, সালাহ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হোক।’

সাব্বির ছাড়া নিহত অন্য শিক্ষার্থীরা হলেন লক্ষ্মীপুর ভিক্টোরিয়া কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী সাদ আল আফনান, লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী কাউছার হোসেন ও একই কলেজের ওসমান গণি। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ৮ জন মারা যান এবং আহত হন শতাধিক।

৪ আগস্ট আন্দোলন চলাকালে বাসভবনের ছাদের ওপর থেকে টানা চার ঘণ্টা গুলি চালিয়ে শতাধিক ছাত্র-জনতাকে আহত করেন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি এ কে এম সালাহ উদ্দিন, তাঁর গাড়িচালক মো. রাসেল ও সহযোগীরা। এর আগে ২ আগস্ট অস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করেন মো. রাসেল। শিক্ষার্থী সাদ আল আফনান ও সাব্বির হোসেন হত্যা মামলার প্রধান আসামি ও পুলিশের ওপর হামলার মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি তিনি।

লক্ষ্মীপুর জেলা মানবাধিকার উন্নয়ন ফোরামের আহ্বায়ক নুর মোহাম্মদ বলেন, সালাহ উদ্দিনের পেছনে প্রভাবশালী কেউ আছেন। এ কারণেই তিনি আলোচিত চার শিক্ষার্থী খুনের আসামি হয়েও দুই মাসে ধরা পড়েননি। তাঁর গাড়িচালক মো. রাসেল অস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করেছেন। তাঁকেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তবে প্রভাবশালীদেরও বার্তা দিতে হবে, অপরাধ করে পার পাওয়ার সুযোগ নেই।

এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল মুন্নাফ বলেন, শিক্ষার্থী হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করতে আন্তরিকতার সঙ্গে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের সময় ব্যবহৃত অস্ত্রগুলো উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে।

পুলিশ খোঁজ না পেলেও সালাহ উদ্দিন নিজের ফেসবুকে সৌদি আরবে অবস্থানের ছবি দিয়েছেন। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আজ শনিবার দুপুরে ফেসবুক মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোনও ধরেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমি সৌদি আরবে আছি। ছাত্রদের ওপর আমি গুলি করিনি। গুলি করেছি ওপরের দিকে। আত্মরক্ষার্থে ও পরিবার–পরিজনকে হেফাজতের জন্য গুলি করেছি। হত্যার সঙ্গেও আমি জড়িত নই। রাজনৈতিকভাবে আমি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাচ্ছি, এ কারণে দলের ভেতরের ও বাইরের লোকজন অপপ্রচার চালাচ্ছেন। আমি কোনো অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না।’

কীভাবে সৌদি আরব এলেন, এমন প্রশ্ন করা হলে সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘অনেক কথা হয়েছে, এবার রাখি।’ এই বলে দ্রুত লাইন কেটে দেন।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৩:১২:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪
৩৮
Translate »

লক্ষ্মীপুরে ছাত্র হত্যার আসামি সালাহ উদ্দিন এখন সৌদি আরবে

আপডেট : ০৩:১২:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪

নিজের ফেসবুক ওয়ালে সৌদি আরবে অবস্থানের ছবি পোস্ট করেছেন লক্ষ্মীপুরের উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান এ কে এম সালাহ উদ্দিনছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

লক্ষ্মীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রকাশ্যে গুলি করে চার শিক্ষার্থীসহ ১২ জনকে খুনের ঘটনার দুই মাস পেরিয়ে গেছে। তবে হত্যা মামলার প্রধান অভিযুক্ত লক্ষ্মীপুরের এ কে এম সালাহ উদ্দিনসহ অস্ত্রধারী আসামিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। সালাহ উদ্দিন পৌরসভার সাবেক আলোচিত মেয়র প্রয়াত আবু তাহেরের ছেলে ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। বর্তমানে তিনি সৌদি আরবে অবস্থান করছেন বলে প্রথম আলোকে মুঠোফোনে জানিয়েছেন। তবে কীভাবে তিনি বিদেশে পাড়ি দিলেন, সে বিষয়ে কোনো তথ্য জানাতে চাননি।

গত ৪ আগস্ট আন্দোলনে গিয়ে গুলিতে প্রাণ হারানো দালাল বাজার ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেনের বাবা আমির হোসেন বাদী হয়ে ১৪ আগস্ট থানায় হত্যা মামলা করেন। তবে এখনো মামলার আসামিরা ধরা পড়েননি। প্রথম আলোকে আমির হোসেন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের হত্যার সঙ্গে সালাহ উদ্দিন সরাসরি জড়িত। তাঁর নৃশংসতার কাহিনি এরশাদ শিকদারকেও হার মানিয়েছে। আমাদের দাবি এখন একটাই, সালাহ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হোক।’

সাব্বির ছাড়া নিহত অন্য শিক্ষার্থীরা হলেন লক্ষ্মীপুর ভিক্টোরিয়া কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী সাদ আল আফনান, লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী কাউছার হোসেন ও একই কলেজের ওসমান গণি। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ৮ জন মারা যান এবং আহত হন শতাধিক।

৪ আগস্ট আন্দোলন চলাকালে বাসভবনের ছাদের ওপর থেকে টানা চার ঘণ্টা গুলি চালিয়ে শতাধিক ছাত্র-জনতাকে আহত করেন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি এ কে এম সালাহ উদ্দিন, তাঁর গাড়িচালক মো. রাসেল ও সহযোগীরা। এর আগে ২ আগস্ট অস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করেন মো. রাসেল। শিক্ষার্থী সাদ আল আফনান ও সাব্বির হোসেন হত্যা মামলার প্রধান আসামি ও পুলিশের ওপর হামলার মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি তিনি।

লক্ষ্মীপুর জেলা মানবাধিকার উন্নয়ন ফোরামের আহ্বায়ক নুর মোহাম্মদ বলেন, সালাহ উদ্দিনের পেছনে প্রভাবশালী কেউ আছেন। এ কারণেই তিনি আলোচিত চার শিক্ষার্থী খুনের আসামি হয়েও দুই মাসে ধরা পড়েননি। তাঁর গাড়িচালক মো. রাসেল অস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করেছেন। তাঁকেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তবে প্রভাবশালীদেরও বার্তা দিতে হবে, অপরাধ করে পার পাওয়ার সুযোগ নেই।

এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল মুন্নাফ বলেন, শিক্ষার্থী হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করতে আন্তরিকতার সঙ্গে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের সময় ব্যবহৃত অস্ত্রগুলো উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে।

পুলিশ খোঁজ না পেলেও সালাহ উদ্দিন নিজের ফেসবুকে সৌদি আরবে অবস্থানের ছবি দিয়েছেন। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আজ শনিবার দুপুরে ফেসবুক মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোনও ধরেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমি সৌদি আরবে আছি। ছাত্রদের ওপর আমি গুলি করিনি। গুলি করেছি ওপরের দিকে। আত্মরক্ষার্থে ও পরিবার–পরিজনকে হেফাজতের জন্য গুলি করেছি। হত্যার সঙ্গেও আমি জড়িত নই। রাজনৈতিকভাবে আমি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাচ্ছি, এ কারণে দলের ভেতরের ও বাইরের লোকজন অপপ্রচার চালাচ্ছেন। আমি কোনো অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না।’

কীভাবে সৌদি আরব এলেন, এমন প্রশ্ন করা হলে সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘অনেক কথা হয়েছে, এবার রাখি।’ এই বলে দ্রুত লাইন কেটে দেন।