London ০২:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাষ্ট্রপতি প্রশ্নে চাতুরী না করার আহ্বান

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সংবাদ সম্মেলন। গতকাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছবি

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের অপসারণ প্রশ্নে বিএনপির নেতাদের বক্তব্যে সন্তুষ্ট নয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। এই দুই সংগঠনের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত না নেওয়া এবং ছলচাতুরীর আশ্রয় না নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

জাতীয় ঐক্যের জন্য শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট শাসনের অংশ রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে অপসারণের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং এই রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলার আহ্বানও জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি।

রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গতকাল বুধবার এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানান সংগঠন দুটির নেতারা। এর আগে গতকাল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের পর বিএনপি নেতারা বলেন, রাষ্ট্রপতি পদ নিয়ে এই মুহূর্তে দেশে সাংবিধানিক, রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক সংকট তৈরি হোক, তা বিএনপি চায় না।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সন্ধ্যায় জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাতীয় নাগরিক কমিটি। এতে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘আজকে (গতকাল) প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বৈঠক ছিল। সেখানে তারা হাসিনার ফ্যাসিস্ট রেজিমের অংশগুলো এখনো রাখা বা বাস্তবায়নের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, বিএনপি বলছে সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হবে। বিরাজমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিকভাবে অপ্রাসঙ্গিক আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মতো দল ছাড়া প্রাসঙ্গিক দলগুলোর প্রতি আমরা জাতীয় ঐক্যের ডাক দিচ্ছি।’

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘চুপ্পু (রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ডাকনাম) বলেছেন, তিনি রাজপথে ছাত্রলীগের প্রোগ্রাম দিয়ে উঠে এসেছেন, উনি ভেসে আসেন নাই। গণ-অভ্যুত্থানের হাজারো শহীদের জীবনের ওপর শপথ করে আমরা বলছি, আমরাও ভেসে আসি নাই; ফ্যাসিস্ট রেজিমের কোনো অংশ আমরা বাংলাদেশে বিরাজমান দেখতে চাই না। এই ফয়সালা রাজনৈতিকভাবে করতে হবে।’

রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি নাসীরুদ্দীন বলেন, ‘দেশবাসীর কাছে আমাদের আহ্বান, কোনো রাজনৈতিক দল যদি ফ্যাসিস্ট রেজিমের অংশ চুপ্পুকে সরানোর আন্দোলনে না আসে, আমরা তাদের ত্যাগ করে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা চাই না, বাহাত্তরের পচা-গলা বাকশালি সংবিধান দেশে বিরাজমান থাকুক। আমাদের সব সংকটের মূলে বাহাত্তরের এই সংবিধান।’

যারা অভ্যুত্থানের এক দফা দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে, যারা গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষে, তারা কখনোই বাহাত্তরের সংবিধানের পক্ষে থাকতে পারে না—এমন মন্তব্য করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আজকে আমাদের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে (বক্তব্য এসেছে যে তারা) সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার দোহাই দিয়ে চুপ্পুকে রাষ্ট্রপতি পদে আসীন দেখতে চায়। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী ও ফ্যাসিবাদবিরোধী প্রতিটি রাজনৈতিক দলের কাছে আমাদের আহ্বান থাকবে, বাহাত্তরের সংবিধান ও অভ্যুত্থানের প্রশ্নে আপনাদের অবস্থান স্পষ্ট করা জরুরি। কারণ, যারা গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষে, তারা কোনো দিন বাহাত্তরের সংবিধানের পক্ষে থাকতে পারে না।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গত মঙ্গলবার যে পাঁচ দফা দাবি ঘোষণা করেছে, তা গণ-অভ্যুত্থানকে বিপ্লবে পরিণত করার চূড়ান্ত দফা বলে জানান হাসনাত। দাবিগুলো হলো বাহাত্তরের মুজিববাদী সংবিধান বাতিল করে ’২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে নতুন করে সংবিধান লেখা, চলতি সপ্তাহের মধ্যে ছাত্রলীগকে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করা (গত রাতে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে), এই সপ্তাহেই রাষ্ট্রপতির পদচ্যুতি, এই সপ্তাহের মধ্যে নতুন করে প্রক্লেমেশন অব রিপাবলিক ঘোষণা এবং ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণা করা।

পরবর্তী রাষ্ট্রপতি কে হবেন, সে বিষয়ে কোনো পছন্দ আছে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে নাসীরুদ্দীন বলেন, ‘আমরা একটা রাজনৈতিক সমাধান চাই। রাজনৈতিক দলগুলো একসঙ্গে বসুক, সমাজের বিজ্ঞজনেরা একসঙ্গে বসুক। বসে তারা একটা সিদ্ধান্ত নিক। দেশের জন্য যিনি সবচেয়ে মঙ্গলজনক ও কল্যাণকর, তাঁকেই আমরা চাইব।’

সংবাদ সম্মেলনে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠন আবদুল হান্নান, সংগঠনটির মুখপাত্র উমামা ফাতেমা, নাগরিক কমিটির সদস্য মানজুর আল মতিন, সংগঠনের মুখপাত্র সামান্তা শারমিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০২:৩১:০১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪
২৮
Translate »

রাষ্ট্রপতি প্রশ্নে চাতুরী না করার আহ্বান

আপডেট : ০২:৩১:০১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সংবাদ সম্মেলন। গতকাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছবি

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের অপসারণ প্রশ্নে বিএনপির নেতাদের বক্তব্যে সন্তুষ্ট নয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। এই দুই সংগঠনের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত না নেওয়া এবং ছলচাতুরীর আশ্রয় না নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

জাতীয় ঐক্যের জন্য শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট শাসনের অংশ রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে অপসারণের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং এই রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলার আহ্বানও জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি।

রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গতকাল বুধবার এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানান সংগঠন দুটির নেতারা। এর আগে গতকাল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের পর বিএনপি নেতারা বলেন, রাষ্ট্রপতি পদ নিয়ে এই মুহূর্তে দেশে সাংবিধানিক, রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক সংকট তৈরি হোক, তা বিএনপি চায় না।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সন্ধ্যায় জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাতীয় নাগরিক কমিটি। এতে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘আজকে (গতকাল) প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বৈঠক ছিল। সেখানে তারা হাসিনার ফ্যাসিস্ট রেজিমের অংশগুলো এখনো রাখা বা বাস্তবায়নের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, বিএনপি বলছে সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হবে। বিরাজমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিকভাবে অপ্রাসঙ্গিক আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মতো দল ছাড়া প্রাসঙ্গিক দলগুলোর প্রতি আমরা জাতীয় ঐক্যের ডাক দিচ্ছি।’

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘চুপ্পু (রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ডাকনাম) বলেছেন, তিনি রাজপথে ছাত্রলীগের প্রোগ্রাম দিয়ে উঠে এসেছেন, উনি ভেসে আসেন নাই। গণ-অভ্যুত্থানের হাজারো শহীদের জীবনের ওপর শপথ করে আমরা বলছি, আমরাও ভেসে আসি নাই; ফ্যাসিস্ট রেজিমের কোনো অংশ আমরা বাংলাদেশে বিরাজমান দেখতে চাই না। এই ফয়সালা রাজনৈতিকভাবে করতে হবে।’

রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি নাসীরুদ্দীন বলেন, ‘দেশবাসীর কাছে আমাদের আহ্বান, কোনো রাজনৈতিক দল যদি ফ্যাসিস্ট রেজিমের অংশ চুপ্পুকে সরানোর আন্দোলনে না আসে, আমরা তাদের ত্যাগ করে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা চাই না, বাহাত্তরের পচা-গলা বাকশালি সংবিধান দেশে বিরাজমান থাকুক। আমাদের সব সংকটের মূলে বাহাত্তরের এই সংবিধান।’

যারা অভ্যুত্থানের এক দফা দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে, যারা গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষে, তারা কখনোই বাহাত্তরের সংবিধানের পক্ষে থাকতে পারে না—এমন মন্তব্য করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আজকে আমাদের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে (বক্তব্য এসেছে যে তারা) সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার দোহাই দিয়ে চুপ্পুকে রাষ্ট্রপতি পদে আসীন দেখতে চায়। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী ও ফ্যাসিবাদবিরোধী প্রতিটি রাজনৈতিক দলের কাছে আমাদের আহ্বান থাকবে, বাহাত্তরের সংবিধান ও অভ্যুত্থানের প্রশ্নে আপনাদের অবস্থান স্পষ্ট করা জরুরি। কারণ, যারা গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষে, তারা কোনো দিন বাহাত্তরের সংবিধানের পক্ষে থাকতে পারে না।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গত মঙ্গলবার যে পাঁচ দফা দাবি ঘোষণা করেছে, তা গণ-অভ্যুত্থানকে বিপ্লবে পরিণত করার চূড়ান্ত দফা বলে জানান হাসনাত। দাবিগুলো হলো বাহাত্তরের মুজিববাদী সংবিধান বাতিল করে ’২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে নতুন করে সংবিধান লেখা, চলতি সপ্তাহের মধ্যে ছাত্রলীগকে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করা (গত রাতে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে), এই সপ্তাহেই রাষ্ট্রপতির পদচ্যুতি, এই সপ্তাহের মধ্যে নতুন করে প্রক্লেমেশন অব রিপাবলিক ঘোষণা এবং ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণা করা।

পরবর্তী রাষ্ট্রপতি কে হবেন, সে বিষয়ে কোনো পছন্দ আছে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে নাসীরুদ্দীন বলেন, ‘আমরা একটা রাজনৈতিক সমাধান চাই। রাজনৈতিক দলগুলো একসঙ্গে বসুক, সমাজের বিজ্ঞজনেরা একসঙ্গে বসুক। বসে তারা একটা সিদ্ধান্ত নিক। দেশের জন্য যিনি সবচেয়ে মঙ্গলজনক ও কল্যাণকর, তাঁকেই আমরা চাইব।’

সংবাদ সম্মেলনে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠন আবদুল হান্নান, সংগঠনটির মুখপাত্র উমামা ফাতেমা, নাগরিক কমিটির সদস্য মানজুর আল মতিন, সংগঠনের মুখপাত্র সামান্তা শারমিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।