London ০৬:৩৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাশিয়া থেকে চীন, কেমন হবে কমলা-ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি

কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্পফাইল ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট গ্রহণ আগামী মঙ্গলবার। অবশ্য ইতিমধ্যে প্রায় ছয় কোটি আগাম ভোট পড়েছে। সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

নির্বাচনী প্রচারে কমলা ও ট্রাম্প অভ্যন্তরীণ নীতির পাশাপাশি পররাষ্ট্রনীতি নিয়েও নিজেদের অবস্থান তুলে ধরছেন। বিশেষ করে দুজনের পররাষ্ট্রনীতির ওপর বহির্বিশ্বের বাড়তি আগ্রহ রয়েছে। কমলা ও ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতির দিকগুলো নিয়ে কিছুটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

রাশিয়া

কমলা হ্যারিস রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সহায়তার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। ইউক্রেনকে সমর্থন দিতে ইউরোপের মিত্রদের ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রে তিনি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে সাহায্য করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে রাশিয়ার রপ্তানি খাত এবং দেশটির কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপে ভূমিকা রাখা। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে সাতবার সাক্ষাৎ করেছেন কমলা। শান্তির জন্য ইউক্রেনের ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শকে ‘আত্মসমর্পণের প্রস্তাব’ আখ্যায়িত করেছেন তিনি।

অন্যদিকে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে শান্তি আলোচনার আহ্বান জানিয়ে আসছেন ট্রাম্প। তাঁর এ আহ্বান মেনে নেওয়ার অর্থ শেষ পর্যন্ত ইউক্রেনের কিছু অংশ রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। ট্রাম্প বলে আসছেন, তিনি ইউক্রেনকে আর অর্থ দেবেন না এবং দেশটিকে সহায়তা দিতে কংগ্রেসে আনা প্রস্তাবেরও বিরোধিতা করেছেন। অবশ্য ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের জন্য ইউক্রেনের নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ। এই যুদ্ধ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিনি বন্ধ করতে পারবেন বলেও দাবি করেছেন, তবে সেটা কীভাবে করবেন, তা নিয়ে কিছু বলেননি তিনি।

ইসরায়েল

গত বছরের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের হামলার পর ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারের প্রতি প্রেসিডেন্ট বাইডেনের মতো অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে আসছেন কমলা। তবে গাজায় ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ক্রমেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সমালোচক হয়ে ওঠেন তিনি। কমলা ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি তুলনামূলক বেশি সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন, যদিও বাইডেন প্রশাসনের নীতি পরিবর্তনে উল্লেখযোগ্য কোনো প্রস্তাব দেননি।

অন্যদিকে ট্রাম্প ইসরায়েলের কড়া সমর্থক। প্রেসিডেন্ট থাকার সময় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তর করেন এবং কয়েকটি আরব দেশ ও ইসরায়েলের মধ্যে একের পর এক চুক্তির মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের অপ্রাসঙ্গিক করে তোলেন। গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতি সমর্থন দিয়ে আসছেন ট্রাম্প। তবে তিনি বলেছেন, দ্রুত এই সংঘাতের অবসান হওয়া উচিত।

ন্যাটো

সামরিক জোট ন্যাটোকে শক্তিশালী করতে মার্কিন প্রশাসনে কাজ করা ব্যক্তিদের একজন কমলা। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের জবাবে এই জোটের সম্প্রসারণের বিষয়টি তদারক করেছিলেন তিনি। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের মতো কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা সহযোগিতাকে এই জোটের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে মানেন কমলা। মিত্রদের মধ্যে যারা ন্যায্য হিস্যা অনুযায়ী ন্যাটোর জন্য ব্যয় করবে না, তাদের ওপর হামলা চালাতে রাশিয়াকে আমন্ত্রণ জানানোয় ট্রাম্পের সমালোচনাও করেন তিনি।

ট্রাম্প বলছেন, ন্যাটোর কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের অপচয় হচ্ছে। তিনি এই জোট থেকে সরে আসারও হুমকি দিয়েছেন। ইউক্রেনকে দেওয়া ২০ হাজার কোটি ডলারের অস্ত্র-গোলাবারুদের অর্থ যুক্তরাষ্ট্রকে পরিশোধ করতে ইউরোপের দেশগুলোকে বলেছেন ট্রাম্প। তাঁর একজন উপদেষ্টা সদস্যদেশগুলোর ব্যয়ের ওপর ভিত্তি করে সুরক্ষাব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব করেছেন।

চীন

জাপান ও ফিলিপাইন থেকে শুরু করে ভিয়েতনাম-চীনের উত্থানে শঙ্কিত এশিয়ার এমন দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে সময় ব্যয় করেছেন কমলা। উদ্দেশ্য ছিল চীনের আগ্রাসন প্রতিরোধে জোট তৈরি করা। তিনি প্রেসিডেন্ট বাইডেনের চীনের সঙ্গে সম্পর্ক মসৃণ করার প্রচেষ্টার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ চালিয়ে যাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে চীনে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি চিপ রপ্তানি কমিয়ে আনবেন কমলা।

অন্যদিকে ট্রাম্প চীনের আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানোর অঙ্গীকার করেছেন, যার ফলে নতুন বাণিজ্যযুদ্ধ শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের আবাসন ও জ্বালানি অবকাঠামো এবং প্রযুক্তি খাতে চীনা কোম্পানির মালিকানা নিষিদ্ধ করতে চান। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালে তাইওয়ান ও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকদের মধ্যে যোগাযোগ চালু করেছিলেন, যা চীনকে ক্ষুব্ধ করে। চীন আগ্রাসন চালালে তাইওয়ানকে রক্ষা করবেন কি না—এমন প্রশ্নে গত বছর এ নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০১:০৫:০৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২ নভেম্বর ২০২৪
২৬
Translate »

রাশিয়া থেকে চীন, কেমন হবে কমলা-ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি

আপডেট : ০১:০৫:০৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২ নভেম্বর ২০২৪

কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্পফাইল ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট গ্রহণ আগামী মঙ্গলবার। অবশ্য ইতিমধ্যে প্রায় ছয় কোটি আগাম ভোট পড়েছে। সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

নির্বাচনী প্রচারে কমলা ও ট্রাম্প অভ্যন্তরীণ নীতির পাশাপাশি পররাষ্ট্রনীতি নিয়েও নিজেদের অবস্থান তুলে ধরছেন। বিশেষ করে দুজনের পররাষ্ট্রনীতির ওপর বহির্বিশ্বের বাড়তি আগ্রহ রয়েছে। কমলা ও ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতির দিকগুলো নিয়ে কিছুটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

রাশিয়া

কমলা হ্যারিস রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সহায়তার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। ইউক্রেনকে সমর্থন দিতে ইউরোপের মিত্রদের ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রে তিনি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে সাহায্য করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে রাশিয়ার রপ্তানি খাত এবং দেশটির কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপে ভূমিকা রাখা। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে সাতবার সাক্ষাৎ করেছেন কমলা। শান্তির জন্য ইউক্রেনের ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শকে ‘আত্মসমর্পণের প্রস্তাব’ আখ্যায়িত করেছেন তিনি।

অন্যদিকে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে শান্তি আলোচনার আহ্বান জানিয়ে আসছেন ট্রাম্প। তাঁর এ আহ্বান মেনে নেওয়ার অর্থ শেষ পর্যন্ত ইউক্রেনের কিছু অংশ রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। ট্রাম্প বলে আসছেন, তিনি ইউক্রেনকে আর অর্থ দেবেন না এবং দেশটিকে সহায়তা দিতে কংগ্রেসে আনা প্রস্তাবেরও বিরোধিতা করেছেন। অবশ্য ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের জন্য ইউক্রেনের নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ। এই যুদ্ধ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিনি বন্ধ করতে পারবেন বলেও দাবি করেছেন, তবে সেটা কীভাবে করবেন, তা নিয়ে কিছু বলেননি তিনি।

ইসরায়েল

গত বছরের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের হামলার পর ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারের প্রতি প্রেসিডেন্ট বাইডেনের মতো অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে আসছেন কমলা। তবে গাজায় ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ক্রমেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সমালোচক হয়ে ওঠেন তিনি। কমলা ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি তুলনামূলক বেশি সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন, যদিও বাইডেন প্রশাসনের নীতি পরিবর্তনে উল্লেখযোগ্য কোনো প্রস্তাব দেননি।

অন্যদিকে ট্রাম্প ইসরায়েলের কড়া সমর্থক। প্রেসিডেন্ট থাকার সময় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তর করেন এবং কয়েকটি আরব দেশ ও ইসরায়েলের মধ্যে একের পর এক চুক্তির মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের অপ্রাসঙ্গিক করে তোলেন। গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতি সমর্থন দিয়ে আসছেন ট্রাম্প। তবে তিনি বলেছেন, দ্রুত এই সংঘাতের অবসান হওয়া উচিত।

ন্যাটো

সামরিক জোট ন্যাটোকে শক্তিশালী করতে মার্কিন প্রশাসনে কাজ করা ব্যক্তিদের একজন কমলা। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের জবাবে এই জোটের সম্প্রসারণের বিষয়টি তদারক করেছিলেন তিনি। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের মতো কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা সহযোগিতাকে এই জোটের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে মানেন কমলা। মিত্রদের মধ্যে যারা ন্যায্য হিস্যা অনুযায়ী ন্যাটোর জন্য ব্যয় করবে না, তাদের ওপর হামলা চালাতে রাশিয়াকে আমন্ত্রণ জানানোয় ট্রাম্পের সমালোচনাও করেন তিনি।

ট্রাম্প বলছেন, ন্যাটোর কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের অপচয় হচ্ছে। তিনি এই জোট থেকে সরে আসারও হুমকি দিয়েছেন। ইউক্রেনকে দেওয়া ২০ হাজার কোটি ডলারের অস্ত্র-গোলাবারুদের অর্থ যুক্তরাষ্ট্রকে পরিশোধ করতে ইউরোপের দেশগুলোকে বলেছেন ট্রাম্প। তাঁর একজন উপদেষ্টা সদস্যদেশগুলোর ব্যয়ের ওপর ভিত্তি করে সুরক্ষাব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব করেছেন।

চীন

জাপান ও ফিলিপাইন থেকে শুরু করে ভিয়েতনাম-চীনের উত্থানে শঙ্কিত এশিয়ার এমন দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে সময় ব্যয় করেছেন কমলা। উদ্দেশ্য ছিল চীনের আগ্রাসন প্রতিরোধে জোট তৈরি করা। তিনি প্রেসিডেন্ট বাইডেনের চীনের সঙ্গে সম্পর্ক মসৃণ করার প্রচেষ্টার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ চালিয়ে যাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে চীনে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি চিপ রপ্তানি কমিয়ে আনবেন কমলা।

অন্যদিকে ট্রাম্প চীনের আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানোর অঙ্গীকার করেছেন, যার ফলে নতুন বাণিজ্যযুদ্ধ শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের আবাসন ও জ্বালানি অবকাঠামো এবং প্রযুক্তি খাতে চীনা কোম্পানির মালিকানা নিষিদ্ধ করতে চান। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালে তাইওয়ান ও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকদের মধ্যে যোগাযোগ চালু করেছিলেন, যা চীনকে ক্ষুব্ধ করে। চীন আগ্রাসন চালালে তাইওয়ানকে রক্ষা করবেন কি না—এমন প্রশ্নে গত বছর এ নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।