London ১১:০৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৬ অগাস্ট ২০২৫, ২২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম:
ব্যারিস্টার কায়সার কামালের সহযোগিতায় চতুর্থ ধাপে বিনামূল্যে ৪৬ জন পেলেন চোখের চিকিৎসা বোয়ালমারী, মধুখালী ও আলফাডাঙ্গাতে জুলাই শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া মাহফিল। গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে আলফাডাঙ্গা’য় জামায়াতে ইসলামীর বিজয় র‍্যালি পাওনা টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে কলমাকান্দায় চা দোকানি খুন আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পতনের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে কালিয়াকৈরে বিজয় সমাবেশ ও র‍্যালি অনুষ্ঠিত জুলাই ঘোষণাপত্রে কী আছে, পড়ুন বিস্তারিত রাজশাহীতে নিষিদ্ধ কীটনাশক বিক্রির অভিযোগ মশার কোন উষধ দিচ্ছে না রাসিক পটুয়াখালীতে সংখ্যালঘুর ঘরে ডাকাতি জুলাই’২৪ গণঅভ্যুত্থান দিবসে শহীদদের স্মরণে সিরাজগঞ্জে বিএনপি’র পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি ও দোয়া মাহফিল

রাজশাহীতে নিষিদ্ধ কীটনাশক বিক্রির অভিযোগ

মো: গোলাম কিবরিয়া,রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি

রাজশাহীর বিভিন্ন কীটনাশকের দোকানে অবাধে বিক্রি হচ্ছে সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ও বিপজ্জনক বালাইনাশক ওষুধ। এসব ওষুধ ব্যবহারের ফলে কৃষক ও সাধারণ ব্যবহারকারীরা সরাসরি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেই বলেই অভিযোগ গবেষণা সংশ্লিষ্টদের।

সম্প্রতি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজিনাস নলেজ (বারসিক) পরিচালিত একটি অনুসন্ধানমূলক মাঠসমীক্ষায় উঠে এসেছে এই ভয়াবহ চিত্র। ‘জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর কীটনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব’ শীর্ষক এই গবেষণাটি রাজশাহীর আটটি উপজেলার ১৯টি কৃষিপ্রধান গ্রামে করা হয়।

সমীক্ষায় দেখা গেছে, নিষিদ্ধ ওষুধ ব্যবহারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অন্তত ৬৮ শতাংশ ব্যবহারকারী। আরও উদ্বেগজনক তথ্য হলো, ৯৩.৩৭ শতাংশ ব্যবহারকারী জানেনই না যে তারা যেসব কীটনাশক ব্যবহার করছেন তা নিষিদ্ধ এবং মানবদেহ ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

গবেষণায় উঠে আসে, অধিকাংশ দোকানে এসব ওষুধ বিক্রি করা হচ্ছে মোড়ক পরিবর্তন করে, ফলে সাধারণ ক্রেতারা বুঝতেই পারছেন না ওষুধটি নিষিদ্ধ কি না। গবেষণা অনুযায়ী, এসব দোকানের ৯৯ শতাংশেই নিয়মিত বিক্রি হচ্ছে এসব বিষাক্ত পণ্য।

সমীক্ষায় দেশ-বিদেশে নিষিদ্ধ এমন বেশ কয়েকটি কীটনাশকের নামও উল্লেখ করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে: জিরো হার্ব-২০ এসএল (প্যারাকোয়াট), ফুরাডান ৫জি (কার্বারাইল), এরোক্সান-২০ এসএল (প্যারাকোয়াট), গ্যাস ট্যাবলেট (অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড), কার্বোফোরান-৩ জিএসআই (কার্বোফোরান), ইঁদুর মারার বিষ (ব্রোডিফ্যাকোয়াম), তালাফ-২০ এসএল (প্যারাকোয়াট)

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব নিষিদ্ধ ওষুধের মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক হলো প্যারাকোয়াট। এটি আগাছা দমনে ব্যবহৃত হলেও মানবদেহে প্রবেশ করলে কিডনি বিকল-সহ মারাত্মক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতি করে। আত্মহত্যার ক্ষেত্রেও এই বিষ ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে।

রাজশাহীর একটি রেঁস্তোরায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন বারসিকের আঞ্চলিক সমন্বয়ক শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, নিষিদ্ধ ওষুধ ব্যবহারের ফলে শুধু কৃষক নয়, জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যও হুমকির মুখে পড়ছে।

বারসিকের নির্বাহী পরিচালক পাভেল পার্থ বলেন, আমি নিজেও রাজশাহীর বিভিন্ন দোকান থেকে বেশকিছু নিষিদ্ধ কীটনাশক কিনেছি এবং তার রসিদও আমার কাছে রয়েছে। এটি একটি ফৌজদারি অপরাধ। প্রশাসনের উচিত দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

তিনি কীটনাশক বিক্রয় ও ব্যবহার সংক্রান্ত আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ, কীটনাশক-সম্পর্কিত স্বাস্থ্যঝুঁকি রেজিস্ট্রার চালু এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য একটি ক্ষতিপূরণ তহবিল গঠনের সুপারিশ করেন।

রাজশাহী বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ড. মো. আজিজুর রহমান বারসিকের গবেষণা প্রতিবেদন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, নিষিদ্ধ কীটনাশক বিক্রির বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ১২:৩৬:১৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ অগাস্ট ২০২৫
Translate »

রাজশাহীতে নিষিদ্ধ কীটনাশক বিক্রির অভিযোগ

আপডেট : ১২:৩৬:১৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ অগাস্ট ২০২৫

রাজশাহীর বিভিন্ন কীটনাশকের দোকানে অবাধে বিক্রি হচ্ছে সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ও বিপজ্জনক বালাইনাশক ওষুধ। এসব ওষুধ ব্যবহারের ফলে কৃষক ও সাধারণ ব্যবহারকারীরা সরাসরি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেই বলেই অভিযোগ গবেষণা সংশ্লিষ্টদের।

সম্প্রতি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজিনাস নলেজ (বারসিক) পরিচালিত একটি অনুসন্ধানমূলক মাঠসমীক্ষায় উঠে এসেছে এই ভয়াবহ চিত্র। ‘জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর কীটনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব’ শীর্ষক এই গবেষণাটি রাজশাহীর আটটি উপজেলার ১৯টি কৃষিপ্রধান গ্রামে করা হয়।

সমীক্ষায় দেখা গেছে, নিষিদ্ধ ওষুধ ব্যবহারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অন্তত ৬৮ শতাংশ ব্যবহারকারী। আরও উদ্বেগজনক তথ্য হলো, ৯৩.৩৭ শতাংশ ব্যবহারকারী জানেনই না যে তারা যেসব কীটনাশক ব্যবহার করছেন তা নিষিদ্ধ এবং মানবদেহ ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

গবেষণায় উঠে আসে, অধিকাংশ দোকানে এসব ওষুধ বিক্রি করা হচ্ছে মোড়ক পরিবর্তন করে, ফলে সাধারণ ক্রেতারা বুঝতেই পারছেন না ওষুধটি নিষিদ্ধ কি না। গবেষণা অনুযায়ী, এসব দোকানের ৯৯ শতাংশেই নিয়মিত বিক্রি হচ্ছে এসব বিষাক্ত পণ্য।

সমীক্ষায় দেশ-বিদেশে নিষিদ্ধ এমন বেশ কয়েকটি কীটনাশকের নামও উল্লেখ করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে: জিরো হার্ব-২০ এসএল (প্যারাকোয়াট), ফুরাডান ৫জি (কার্বারাইল), এরোক্সান-২০ এসএল (প্যারাকোয়াট), গ্যাস ট্যাবলেট (অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড), কার্বোফোরান-৩ জিএসআই (কার্বোফোরান), ইঁদুর মারার বিষ (ব্রোডিফ্যাকোয়াম), তালাফ-২০ এসএল (প্যারাকোয়াট)

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব নিষিদ্ধ ওষুধের মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক হলো প্যারাকোয়াট। এটি আগাছা দমনে ব্যবহৃত হলেও মানবদেহে প্রবেশ করলে কিডনি বিকল-সহ মারাত্মক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতি করে। আত্মহত্যার ক্ষেত্রেও এই বিষ ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে।

রাজশাহীর একটি রেঁস্তোরায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন বারসিকের আঞ্চলিক সমন্বয়ক শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, নিষিদ্ধ ওষুধ ব্যবহারের ফলে শুধু কৃষক নয়, জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যও হুমকির মুখে পড়ছে।

বারসিকের নির্বাহী পরিচালক পাভেল পার্থ বলেন, আমি নিজেও রাজশাহীর বিভিন্ন দোকান থেকে বেশকিছু নিষিদ্ধ কীটনাশক কিনেছি এবং তার রসিদও আমার কাছে রয়েছে। এটি একটি ফৌজদারি অপরাধ। প্রশাসনের উচিত দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

তিনি কীটনাশক বিক্রয় ও ব্যবহার সংক্রান্ত আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ, কীটনাশক-সম্পর্কিত স্বাস্থ্যঝুঁকি রেজিস্ট্রার চালু এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য একটি ক্ষতিপূরণ তহবিল গঠনের সুপারিশ করেন।

রাজশাহী বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ড. মো. আজিজুর রহমান বারসিকের গবেষণা প্রতিবেদন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, নিষিদ্ধ কীটনাশক বিক্রির বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।