London ১১:২৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রমজানের শেষ দশকের করণীয় সম্পর্কে হাদিসে যা বলা হয়েছে

অনলাইন ডেস্ক

পুরো রমজান মাস ফজিলত ও বরকতে পূর্ণ। এই মাসের প্রথমভাগে আল্লাহ তায়ালা রহমত নাজিল করেন, মধ্যভাগে মাগফেরাত ও ভাগে নাজিল হয় নাজাত। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, রমজান এমন এক মাস, যার শুরুতে রহমত, মাঝে মাগফিরাত এবং শেষে জাহান্নাম থেকে মুক্তি। (ইবন খুজাইমা, হাদিস : ১৮৮৭)

রমজানের শেষ ভাগ বা শেষ দশকে নাজাতের পাশাপাশি আরও গুরুত্বপূর্ণ কিছু আমল ও ফজিলত রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো সুন্নত ইতিকাফ, শবে কদর অনুসন্ধান, সদকতুল ফিতর আদায়, ঈদের চাঁদ দেখা ও ঈদুল ফিতরের দিনের সুন্নত আমলের প্রস্তুতি গ্রহণ। এখানে রমজানের শেষ দশকের এমন কিছু আমল ও ফজিলত তুলে ধরা হলো—

ইতিকাফ

ইতিকাফ সম্পর্কে  কোরআনুল কারিমে বলা হয়েছে, ‘মনে কর সেই সময়কে, যখন আমি কাবা ঘরকে মানুষের মিলনক্ষেত্র ও আশ্রয়স্থল করেছিলাম। আর আমি বলেছিলাম, তোমরা ইব্রাহিমের দাঁড়ানোর জায়গাকেই নামাজের জায়গারূপে গ্রহণ কর। আর আমি ইব্রাহিম ও ইসমাইলকে আদেশ করি; তোমরা আমার ঘরকে পবিত্র রাখবে, তাদের জন্য যারা এটা প্রদক্ষিণ করবে, এখানে বসে ইতিকাফ করবে এবং এখানে রুকু ও সিজদা করবে।’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ১২৫)।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক নফল ইবাদত করতেন আবার কখনো ছেড়ে দিতেন; কিন্তু মদিনায় হিজরতের পর জীবদ্দশায় রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ কখনো ছাড়েননি। (সহিহ বুখারি : ২০২৬)

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসের শেষ দশদিন ইতিকাফ করবে, তাকে দুটি হজ ও দুটি ওমরা পালন করার সওয়াব দান করা হবে। (শুয়াবুল ঈমান, হাদিস : ৩৬৮০)

সদকাতুল ফিতর আদায়

ঈদুল ফিতরের নামাজের আগে সদকাতুল ফিতর আদায়ের বিধান দেওয়া হয়েছে। তবে রমজানের শেষ দশকে বা শেষ দশকের আগে তা আদায় করা উত্তম। এতে করে অসহায় মানুষদের জন্য সুবিধা। তারা তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারবেন।

কোনো কোনো সাহাবী থেকে ঈদের কয়েকদিন পূর্বে ফিতরা আদায়ের কথা প্রমাণিত আছে। যেমন নাফে রাহ. বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. ঈদের দু’ একদিন পূর্বেই তা (ফিতরা) আদায় করে দিতেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১৬০৬)

আর নাফে রাহ. থেকে অপর একটি বর্ণনায় এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. ঈদের দু’ তিনদিন পূর্বে ফিতরা উসূলকারীর নিকট সদকাতুল ফিতর পাঠিয়ে দিতেন। (মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হাদীস : ৩১৬)

আরেক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, অর্থহীন, অশালীন কথা ও কাজে রোজার যে ক্ষতি হয় তা পূরণের জন্য এবং নিঃস্ব লোকের আহার যোগানোর জন্য সদকাতুল ফিতর প্রদান করা হয়। (সুনানে আবু দাউদ)

শবে কদর অনুসন্ধান

রমজানের শেষ দশকের বিজোর রাতগুলোতে শবে কদর অনুসন্ধানের কথা বলা হয়েছে হাদিসে। বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের নিয়তে কদরের রাতে ইবাদত করবে, তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (বুখারি)

শবে কদরের ফজিলত সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,  ‘আমি কোরআন নাজিল করেছি কদরের রাতে। আপনি কি জানেন, কদরের রাত কী? কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।’ (সূরা কদর, আয়াত : ১-৩)

চাঁদ দেখে ঈদ করা

প্রত্যেক মাসের চাঁদ দেখা, বিশেষ করে ঈদের জন্য চাঁদ দেখা সুন্নত। ২৯ রমজানে সবার উচিত নিজের সাধ্যমতো চাঁদ দেখার চেষ্টা করা।

চাঁদ দেখা প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘লোকেরা আপনাকে নতুন মাসের চাঁদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। আপনি তাদের বলে দিন, এটা মানুষের (বিভিন্ন কাজকর্মের) এবং হজের সময় নির্ধারণ করার জন্য।’ (সুরা আল-বাকারা, আয়াত : ১৮৯)

হাদিস শরিফে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন—  তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখো এবং চাঁদ দেখে ঈদ করো। যদি আকাশে মেঘ থাকে, তাহলে গণনায় ৩০ পূর্ণ করে নাও। (বুখারি)

ঈদের দিনের কিছু সুন্নত

পাঁয়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া মুস্তাহাব। রাসূল (সা.) পায়ে হেঁটে  ঈদগাহে যেতেন এবং পায়ে হেঁটে ফিরতেন। (ইবনে মাজাহ)।

রাসূল সা. ঈদুল ফিতরে নামাজের আগে খেজুর খেয়ে বের হতেন। তিনি বেজোড় সংখ্যক খেজুর খেতেন। (বুখারি)

ঈদের দিন সাহাবিরা দোয়া সুলভ বাক্যে সৌজন্য বিনিময় করতেন। তারা পরস্পর সাক্ষাতে বলতেন, তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম। অর্থাৎ আল্লাহ আমাদের এবং তোমার আমলগুলো কবুল করুন। (ফাতহুল বারী)

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৭:০১:০৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫
২১
Translate »

রমজানের শেষ দশকের করণীয় সম্পর্কে হাদিসে যা বলা হয়েছে

আপডেট : ০৭:০১:০৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫

পুরো রমজান মাস ফজিলত ও বরকতে পূর্ণ। এই মাসের প্রথমভাগে আল্লাহ তায়ালা রহমত নাজিল করেন, মধ্যভাগে মাগফেরাত ও ভাগে নাজিল হয় নাজাত। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, রমজান এমন এক মাস, যার শুরুতে রহমত, মাঝে মাগফিরাত এবং শেষে জাহান্নাম থেকে মুক্তি। (ইবন খুজাইমা, হাদিস : ১৮৮৭)

রমজানের শেষ ভাগ বা শেষ দশকে নাজাতের পাশাপাশি আরও গুরুত্বপূর্ণ কিছু আমল ও ফজিলত রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো সুন্নত ইতিকাফ, শবে কদর অনুসন্ধান, সদকতুল ফিতর আদায়, ঈদের চাঁদ দেখা ও ঈদুল ফিতরের দিনের সুন্নত আমলের প্রস্তুতি গ্রহণ। এখানে রমজানের শেষ দশকের এমন কিছু আমল ও ফজিলত তুলে ধরা হলো—

ইতিকাফ

ইতিকাফ সম্পর্কে  কোরআনুল কারিমে বলা হয়েছে, ‘মনে কর সেই সময়কে, যখন আমি কাবা ঘরকে মানুষের মিলনক্ষেত্র ও আশ্রয়স্থল করেছিলাম। আর আমি বলেছিলাম, তোমরা ইব্রাহিমের দাঁড়ানোর জায়গাকেই নামাজের জায়গারূপে গ্রহণ কর। আর আমি ইব্রাহিম ও ইসমাইলকে আদেশ করি; তোমরা আমার ঘরকে পবিত্র রাখবে, তাদের জন্য যারা এটা প্রদক্ষিণ করবে, এখানে বসে ইতিকাফ করবে এবং এখানে রুকু ও সিজদা করবে।’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ১২৫)।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক নফল ইবাদত করতেন আবার কখনো ছেড়ে দিতেন; কিন্তু মদিনায় হিজরতের পর জীবদ্দশায় রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ কখনো ছাড়েননি। (সহিহ বুখারি : ২০২৬)

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসের শেষ দশদিন ইতিকাফ করবে, তাকে দুটি হজ ও দুটি ওমরা পালন করার সওয়াব দান করা হবে। (শুয়াবুল ঈমান, হাদিস : ৩৬৮০)

সদকাতুল ফিতর আদায়

ঈদুল ফিতরের নামাজের আগে সদকাতুল ফিতর আদায়ের বিধান দেওয়া হয়েছে। তবে রমজানের শেষ দশকে বা শেষ দশকের আগে তা আদায় করা উত্তম। এতে করে অসহায় মানুষদের জন্য সুবিধা। তারা তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারবেন।

কোনো কোনো সাহাবী থেকে ঈদের কয়েকদিন পূর্বে ফিতরা আদায়ের কথা প্রমাণিত আছে। যেমন নাফে রাহ. বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. ঈদের দু’ একদিন পূর্বেই তা (ফিতরা) আদায় করে দিতেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১৬০৬)

আর নাফে রাহ. থেকে অপর একটি বর্ণনায় এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. ঈদের দু’ তিনদিন পূর্বে ফিতরা উসূলকারীর নিকট সদকাতুল ফিতর পাঠিয়ে দিতেন। (মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হাদীস : ৩১৬)

আরেক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, অর্থহীন, অশালীন কথা ও কাজে রোজার যে ক্ষতি হয় তা পূরণের জন্য এবং নিঃস্ব লোকের আহার যোগানোর জন্য সদকাতুল ফিতর প্রদান করা হয়। (সুনানে আবু দাউদ)

শবে কদর অনুসন্ধান

রমজানের শেষ দশকের বিজোর রাতগুলোতে শবে কদর অনুসন্ধানের কথা বলা হয়েছে হাদিসে। বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের নিয়তে কদরের রাতে ইবাদত করবে, তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (বুখারি)

শবে কদরের ফজিলত সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,  ‘আমি কোরআন নাজিল করেছি কদরের রাতে। আপনি কি জানেন, কদরের রাত কী? কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।’ (সূরা কদর, আয়াত : ১-৩)

চাঁদ দেখে ঈদ করা

প্রত্যেক মাসের চাঁদ দেখা, বিশেষ করে ঈদের জন্য চাঁদ দেখা সুন্নত। ২৯ রমজানে সবার উচিত নিজের সাধ্যমতো চাঁদ দেখার চেষ্টা করা।

চাঁদ দেখা প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘লোকেরা আপনাকে নতুন মাসের চাঁদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। আপনি তাদের বলে দিন, এটা মানুষের (বিভিন্ন কাজকর্মের) এবং হজের সময় নির্ধারণ করার জন্য।’ (সুরা আল-বাকারা, আয়াত : ১৮৯)

হাদিস শরিফে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন—  তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখো এবং চাঁদ দেখে ঈদ করো। যদি আকাশে মেঘ থাকে, তাহলে গণনায় ৩০ পূর্ণ করে নাও। (বুখারি)

ঈদের দিনের কিছু সুন্নত

পাঁয়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া মুস্তাহাব। রাসূল (সা.) পায়ে হেঁটে  ঈদগাহে যেতেন এবং পায়ে হেঁটে ফিরতেন। (ইবনে মাজাহ)।

রাসূল সা. ঈদুল ফিতরে নামাজের আগে খেজুর খেয়ে বের হতেন। তিনি বেজোড় সংখ্যক খেজুর খেতেন। (বুখারি)

ঈদের দিন সাহাবিরা দোয়া সুলভ বাক্যে সৌজন্য বিনিময় করতেন। তারা পরস্পর সাক্ষাতে বলতেন, তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম। অর্থাৎ আল্লাহ আমাদের এবং তোমার আমলগুলো কবুল করুন। (ফাতহুল বারী)