London ০১:১২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মিয়ানমারে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী শহর থেকে শত শত সেনাসহ জেনারেল আটক

অনলাইন ডেস্ক

রোহিঙ্গা যোদ্ধাসহ মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর শত শত সৈন্যকে আটকের কথা জানিয়েছে দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। আটককৃতদের মধ্যে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর কুখ্যাত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থুরেইন তুনও রয়েছেন বলে জানিয়েছে আরাকান আর্মি।

বুধবার (১১ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতী।

আরাকান আর্মি (এএ) বুধবার ঘোষণা করেছে, তারা বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইন প্রদেশের মংডু শহরের শেষ জান্তা ঘাঁটিটি গত রোববার দখলে নিয়েছে এবং এসময় কুখ্যাত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থুরেইন তুনসহ শত শত সরকারি সেনাকে বন্দি করেছে।

এদিকে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মংডু শহর দখলে নেওয়ার ফলে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের প্রায় পৌনে তিনশ কিলোমিটার সীমান্তের পুরোটাই আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির সশস্ত্র এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি জান্তার শেষ অবশিষ্ট সীমান্ত ঘাঁটি মংডু শহরের বাইরে অবস্থিত বর্ডার গার্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন নং ৫ বেশ কয়েক মাস লড়াইয়ের পর রোববার সকালে দখল করে নেয়।

ব্যাপক সুরক্ষিত এই ঘাঁটিটি আরাকান রোহিঙ্গা আর্মি (এআরএ), আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ) এবং রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও)-এর রোহিঙ্গা মিলিশিয়াসহ ৭ শতাধিক পুলিশ অফিসার এবং সৈন্যদের মাধ্যমে পরিচালিত হতো।

আরাকান আর্মি বলেছে, তারা জান্তা বাহিনীর বিমান হামলার মধ্যে ৫৫ দিনের লড়াইয়ের পরে রোববার এই ঘাঁটি দখল করতে সক্ষম হয়। তারা আরও বলেছে, বর্ডার গার্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে লড়াইয়ের সময় ৪৫০ জনেরও বেশি সরকারি সৈন্য নিহত হয়েছে এবং আরাকান আর্মির সৈন্যরা প্রচুর অস্ত্র ও গোলাবারুদ জব্দ করেছে।

আরাকান আর্মির হাতে ঘাঁটিটির পতনের পর সরকারি সেনাসহ অন্যরা পালিয়ে যায়। তবে ঘাঁটি থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর প্রায় ৮০ জন রোহিঙ্গা বিদ্রোহীসহ সরকারি সৈন্যদের সাথে জান্তার মিলিটারি অপারেশন কমান্ড (এমওসি) ১৫ এর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থুরেইন তুনকে গ্রেপ্তার করে আরাকান আর্মি।

ঘাঁটিটি দখল হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে ভেতরে আটকে থাকা জান্তা সৈন্যরা সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও পোস্ট করেছিল যাতে তারা তাদের সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য জান্তা নেতার কাছে আবেদন করে। ভিডিওতে সরকারি সৈন্যদের বলতে শোনা যায়, তারা তিন মাস ধরে ঘাঁটিতে আটকে আছে। কিন্তু এরপরও নেতারা তাদের সরিয়ে নেওয়ার কোনও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেননি এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থুরেইন তুন তাদের পরিত্যাগ করেছেন।

ইরাবতী বলছে, ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পরে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালেতে শান্তিপূর্ণ অভ্যুত্থান বিরোধী বিক্ষোভের ওপর প্রাণঘাতী ক্র্যাকডাউন চালানোর জন্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থুরেইন তুন কুখ্যাত। এছাড়া এই জেনারেল রাখাইন প্রদেশের উত্তরে জান্তার পক্ষে লড়াই করার জন্য রোহিঙ্গাদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দেওয়ার অভিযোগেও অভিযুক্ত।

২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পরে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী থেকে বের হয়ে আসা সাবেক সেনা ক্যাপ্টেন জিন ইয়াও দ্য ইরাবতীকে বলেন, বন্দি কুখ্যাত এই ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তার ঊর্ধ্বতনদের প্রতি অটল আনুগত্য দেখানোর জন্য এবং তার কমান্ডের অধীনে থাকা সৈন্যদের প্রতি নির্দয় আচরণের জন্য পরিচিত ছিলেন।

আরাকান আর্মি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থুরেইন তুনসহ বন্দি জান্তা সৈন্যদের ছবি প্রকাশ করেছে। সেইসাথে ঘাঁটি থেকে জব্দ করা অস্ত্র ও গোলাবারুদের একটি বড় সংগ্রহের ছবিও প্রকাশ করেছে তারা।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৭:১১:৩৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪
১৭
Translate »

মিয়ানমারে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী শহর থেকে শত শত সেনাসহ জেনারেল আটক

আপডেট : ০৭:১১:৩৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪

রোহিঙ্গা যোদ্ধাসহ মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর শত শত সৈন্যকে আটকের কথা জানিয়েছে দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। আটককৃতদের মধ্যে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর কুখ্যাত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থুরেইন তুনও রয়েছেন বলে জানিয়েছে আরাকান আর্মি।

বুধবার (১১ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতী।

আরাকান আর্মি (এএ) বুধবার ঘোষণা করেছে, তারা বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইন প্রদেশের মংডু শহরের শেষ জান্তা ঘাঁটিটি গত রোববার দখলে নিয়েছে এবং এসময় কুখ্যাত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থুরেইন তুনসহ শত শত সরকারি সেনাকে বন্দি করেছে।

এদিকে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মংডু শহর দখলে নেওয়ার ফলে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের প্রায় পৌনে তিনশ কিলোমিটার সীমান্তের পুরোটাই আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির সশস্ত্র এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি জান্তার শেষ অবশিষ্ট সীমান্ত ঘাঁটি মংডু শহরের বাইরে অবস্থিত বর্ডার গার্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন নং ৫ বেশ কয়েক মাস লড়াইয়ের পর রোববার সকালে দখল করে নেয়।

ব্যাপক সুরক্ষিত এই ঘাঁটিটি আরাকান রোহিঙ্গা আর্মি (এআরএ), আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ) এবং রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও)-এর রোহিঙ্গা মিলিশিয়াসহ ৭ শতাধিক পুলিশ অফিসার এবং সৈন্যদের মাধ্যমে পরিচালিত হতো।

আরাকান আর্মি বলেছে, তারা জান্তা বাহিনীর বিমান হামলার মধ্যে ৫৫ দিনের লড়াইয়ের পরে রোববার এই ঘাঁটি দখল করতে সক্ষম হয়। তারা আরও বলেছে, বর্ডার গার্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে লড়াইয়ের সময় ৪৫০ জনেরও বেশি সরকারি সৈন্য নিহত হয়েছে এবং আরাকান আর্মির সৈন্যরা প্রচুর অস্ত্র ও গোলাবারুদ জব্দ করেছে।

আরাকান আর্মির হাতে ঘাঁটিটির পতনের পর সরকারি সেনাসহ অন্যরা পালিয়ে যায়। তবে ঘাঁটি থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর প্রায় ৮০ জন রোহিঙ্গা বিদ্রোহীসহ সরকারি সৈন্যদের সাথে জান্তার মিলিটারি অপারেশন কমান্ড (এমওসি) ১৫ এর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থুরেইন তুনকে গ্রেপ্তার করে আরাকান আর্মি।

ঘাঁটিটি দখল হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে ভেতরে আটকে থাকা জান্তা সৈন্যরা সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও পোস্ট করেছিল যাতে তারা তাদের সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য জান্তা নেতার কাছে আবেদন করে। ভিডিওতে সরকারি সৈন্যদের বলতে শোনা যায়, তারা তিন মাস ধরে ঘাঁটিতে আটকে আছে। কিন্তু এরপরও নেতারা তাদের সরিয়ে নেওয়ার কোনও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেননি এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থুরেইন তুন তাদের পরিত্যাগ করেছেন।

ইরাবতী বলছে, ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পরে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালেতে শান্তিপূর্ণ অভ্যুত্থান বিরোধী বিক্ষোভের ওপর প্রাণঘাতী ক্র্যাকডাউন চালানোর জন্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থুরেইন তুন কুখ্যাত। এছাড়া এই জেনারেল রাখাইন প্রদেশের উত্তরে জান্তার পক্ষে লড়াই করার জন্য রোহিঙ্গাদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দেওয়ার অভিযোগেও অভিযুক্ত।

২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পরে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী থেকে বের হয়ে আসা সাবেক সেনা ক্যাপ্টেন জিন ইয়াও দ্য ইরাবতীকে বলেন, বন্দি কুখ্যাত এই ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তার ঊর্ধ্বতনদের প্রতি অটল আনুগত্য দেখানোর জন্য এবং তার কমান্ডের অধীনে থাকা সৈন্যদের প্রতি নির্দয় আচরণের জন্য পরিচিত ছিলেন।

আরাকান আর্মি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থুরেইন তুনসহ বন্দি জান্তা সৈন্যদের ছবি প্রকাশ করেছে। সেইসাথে ঘাঁটি থেকে জব্দ করা অস্ত্র ও গোলাবারুদের একটি বড় সংগ্রহের ছবিও প্রকাশ করেছে তারা।