London ১১:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম:
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পেলেন ১০ গুণীজন মেডিকেলে ভর্তির টাকা এখনো জোগাড় হয়নি ইমার যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকার আহ্বান সেনাপ্রধানের স্ত্রীকে হত্যার পর প্রেশার কুকারে রান্না করলেন সাবেক সৈনিক খোলাবাজার থেকে ১০ হাজার বিনামূল্যের পাঠ্যবই জব্দ, গ্রেপ্তার ২ শেরপুরে মাধ্যমিকের ৯ হাজার সরকারি বই জব্দ! আটক ১ মেডিকেলে চান্স পেয়েও অর্থের অভাবে ডাক্তারী লেখা পড়া নিয়ে দুশ্চিন্তা প্রান্তি ও পরিবার খাগড়াছড়িতে একক আধিপত্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার, গড়েছেন হাজার কোটি টাকার সম্পদ নোয়াখালীতে শর্টসার্কিটের আগুনে পুড়ে ছাই ১১ দোকান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দিন দিন উন্নত হচ্ছে : ইসি মাছউদ

বাহারি চায়ে ভাগ্যবদল

গাজীপুরের কাপাসিয়ার সর্বউত্তরের জনপদ টোক ইউনিয়নের টোক নয়ন বাজার। বাজারটির সুনাম ও সুখ্যাতি রয়েছে সুলতানি আমল থেকেই। এ বাজারের অল্প দূরেই রয়েছে সুলতানি আমলের নিদর্শন টোক শাহি মজজিদ।

বানার ও ব্রহ্মপুত্র নদের মোহনায় অবস্থিত এ বাজারটি কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও গাজীপুর জেলার মিলনস্থল বলে পরিচিত। এই তিন জেলা থেকে আসা হাজারো লোকের পদচারণায় সকাল থেকে রাত ২টা-আড়াইটা পর্যন্ত সরগরম থাকে এ বাজার। বাজারে আসা মানুষের আপ্যায়নের প্রধান উপাদান বাহারি রকমের চা। কারও পছন্দ লাল চা, কারও দুধ চা, কেউবা আবার মালাই চা অথবা কেউ খেতে পছন্দ করেন শুধু দুধ অথবা শুধুই মালাই।

বড় কড়াইয়ে জ্বাল করা লালচে দুধের বগলানো ও মনকাড়া ঘ্রাণ আকৃষ্ট করে সবাইকে। তবে চাপ্রেমীদের প্রধান আকর্ষণ দেশি গরুর খাঁটি দুধের মালাই চা। দূরদূরান্ত থেকে অনেকেই ছুটে আসেন টোক বাজারের মালাই চায়ের স্বাদ নিতে। মানুষের চাহিদার কারণে মালাই চায়ের দোকানের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। পাশাপাশি এই চা বিক্রি করে অনেকে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন।

টোক নয়ন বাজারের পাশাপাশি একই ইউনিয়নের বীর উজলী বাজারের মালাই চাও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। দুই বাজারে ছোট-বড় ১৪টি স্টলে প্রতিদিন গড়ে ৭ হাজার কাপ দুধ চা, মালাই চা, মালাই ও রং চা বিক্রি হয়। তবে এ বাজারের চায়ের দামটা অন্যসব হাট-বাজারের তুলনায় একটু বেশি। রং ও দুধ চা বিক্রি হয় ১০ টাকা, মালাই চা ৩০-৫০ টাকা এবং প্রতি কাপ মালাই বিক্রি হয় ১০০ টাকায়। প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০০ কেজি দুধের চা বিক্রি হয় দুই বাজারে। খেতে খুব সুস্বাদু হওয়ায় মানুষ চা স্টলগুলোতে সারাক্ষণ ভিড় করেন। প্রতিটি চায়ের দোকানে একসঙ্গে ৪০-৫০ জন মানুষের বসার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

টোক নয়ন বাজারের বটতলার চা দোকানি মো. মফিজউদ্দিন ও মো. নুরুজ্জামান সহোদর ভাই। প্রায় ২৩ বছর ধরে তাদের সকাল শুরু হয় চায়ের কাপে চামচের ঝনঝনানিতে। এ কর্মযজ্ঞ চলে মাঝরাত পর্যন্ত। দৈনিক ৫০ থেকে ৬০ কেজি দেশি গাভির খাঁটি দুধে কমপক্ষে ২ হাজার কাপ দুধ চা, মালাই চা ও মালাই বিক্রি করেন তারা। এখানে কর্মরত দু’জন কর্মচারীকে দৈনিক ১ হাজার ২০০ টাকা বেতন দেন তারা। সব মিলিয়ে দৈনিক ৭ হাজার টাকা খরচ বাদ দিয়ে অন্তত পাঁচ-ছয় হাজার টাকা লাভ হয় তাদের। ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার খরচ চালিয়ে ঘরবাড়ি তৈরি করে পরিবার পরিজন নিয়ে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে রয়েছেন তারা।

একই বাজারের নদীর ঘাটে দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে চা বিক্রি করেন মিলন মিয়া। তিনি জানান, প্রতিদিন তিনি ৫০ কেজি দুধ জ্বাল দেন। তাঁর দোকানে কর্মরত দু’জন কর্মচারীকে দৈনিক ১ হাজার টাকা বেতন দেন তিনি। বিভিন্ন ধরনের চা ও মালাই বিক্রি করে দিন শেষে গড়ে ৫ হাজার টাকা লাভ হয় তাঁর। 

বীর উজলী বাজারের ডুমদিয়া রোডের চা বিক্রেতা মফিজ উদ্দিন জানান, প্রতিদিন ৪০ কেজি দুধে গড়ে ৭০০ কাপ চা, মালাই চা ও মালাই বিক্রি করেন। তিনি চা বিক্রি করে ২৬ বছর ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। 

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০২:৪১:১৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর ২০২৪
৪৮
Translate »

বাহারি চায়ে ভাগ্যবদল

আপডেট : ০২:৪১:১৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর ২০২৪

গাজীপুরের কাপাসিয়ার সর্বউত্তরের জনপদ টোক ইউনিয়নের টোক নয়ন বাজার। বাজারটির সুনাম ও সুখ্যাতি রয়েছে সুলতানি আমল থেকেই। এ বাজারের অল্প দূরেই রয়েছে সুলতানি আমলের নিদর্শন টোক শাহি মজজিদ।

বানার ও ব্রহ্মপুত্র নদের মোহনায় অবস্থিত এ বাজারটি কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও গাজীপুর জেলার মিলনস্থল বলে পরিচিত। এই তিন জেলা থেকে আসা হাজারো লোকের পদচারণায় সকাল থেকে রাত ২টা-আড়াইটা পর্যন্ত সরগরম থাকে এ বাজার। বাজারে আসা মানুষের আপ্যায়নের প্রধান উপাদান বাহারি রকমের চা। কারও পছন্দ লাল চা, কারও দুধ চা, কেউবা আবার মালাই চা অথবা কেউ খেতে পছন্দ করেন শুধু দুধ অথবা শুধুই মালাই।

বড় কড়াইয়ে জ্বাল করা লালচে দুধের বগলানো ও মনকাড়া ঘ্রাণ আকৃষ্ট করে সবাইকে। তবে চাপ্রেমীদের প্রধান আকর্ষণ দেশি গরুর খাঁটি দুধের মালাই চা। দূরদূরান্ত থেকে অনেকেই ছুটে আসেন টোক বাজারের মালাই চায়ের স্বাদ নিতে। মানুষের চাহিদার কারণে মালাই চায়ের দোকানের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। পাশাপাশি এই চা বিক্রি করে অনেকে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন।

টোক নয়ন বাজারের পাশাপাশি একই ইউনিয়নের বীর উজলী বাজারের মালাই চাও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। দুই বাজারে ছোট-বড় ১৪টি স্টলে প্রতিদিন গড়ে ৭ হাজার কাপ দুধ চা, মালাই চা, মালাই ও রং চা বিক্রি হয়। তবে এ বাজারের চায়ের দামটা অন্যসব হাট-বাজারের তুলনায় একটু বেশি। রং ও দুধ চা বিক্রি হয় ১০ টাকা, মালাই চা ৩০-৫০ টাকা এবং প্রতি কাপ মালাই বিক্রি হয় ১০০ টাকায়। প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০০ কেজি দুধের চা বিক্রি হয় দুই বাজারে। খেতে খুব সুস্বাদু হওয়ায় মানুষ চা স্টলগুলোতে সারাক্ষণ ভিড় করেন। প্রতিটি চায়ের দোকানে একসঙ্গে ৪০-৫০ জন মানুষের বসার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

টোক নয়ন বাজারের বটতলার চা দোকানি মো. মফিজউদ্দিন ও মো. নুরুজ্জামান সহোদর ভাই। প্রায় ২৩ বছর ধরে তাদের সকাল শুরু হয় চায়ের কাপে চামচের ঝনঝনানিতে। এ কর্মযজ্ঞ চলে মাঝরাত পর্যন্ত। দৈনিক ৫০ থেকে ৬০ কেজি দেশি গাভির খাঁটি দুধে কমপক্ষে ২ হাজার কাপ দুধ চা, মালাই চা ও মালাই বিক্রি করেন তারা। এখানে কর্মরত দু’জন কর্মচারীকে দৈনিক ১ হাজার ২০০ টাকা বেতন দেন তারা। সব মিলিয়ে দৈনিক ৭ হাজার টাকা খরচ বাদ দিয়ে অন্তত পাঁচ-ছয় হাজার টাকা লাভ হয় তাদের। ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার খরচ চালিয়ে ঘরবাড়ি তৈরি করে পরিবার পরিজন নিয়ে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে রয়েছেন তারা।

একই বাজারের নদীর ঘাটে দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে চা বিক্রি করেন মিলন মিয়া। তিনি জানান, প্রতিদিন তিনি ৫০ কেজি দুধ জ্বাল দেন। তাঁর দোকানে কর্মরত দু’জন কর্মচারীকে দৈনিক ১ হাজার টাকা বেতন দেন তিনি। বিভিন্ন ধরনের চা ও মালাই বিক্রি করে দিন শেষে গড়ে ৫ হাজার টাকা লাভ হয় তাঁর। 

বীর উজলী বাজারের ডুমদিয়া রোডের চা বিক্রেতা মফিজ উদ্দিন জানান, প্রতিদিন ৪০ কেজি দুধে গড়ে ৭০০ কাপ চা, মালাই চা ও মালাই বিক্রি করেন। তিনি চা বিক্রি করে ২৬ বছর ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন।