London ০১:৩০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম:
আত্রাইয়ে জমি দখলের চেষ্টার বিরুদ্ধে চেয়ারম্যান প্রার্থীর ফেসবুক লাইভে তীব্র প্রতিবাদ ফেনী সমিতি ইঊকের নাম,লোগো,রেজিষ্টেশন নাম্বার ব্যবহার করে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন। ‘বড় মানুষ হয়ে গড়ে উঠতে অনুপ্রেরণা যোগাবে কায়সার কামালের অভিনন্দন বার্তা’ এনসিপির উপর ছাত্রলীগের হামলা অগ্নিসংযোগ ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে গাইবান্ধায় জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই আন্দোলনে শহীদ ছাদের স্মরণে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও শীর্ষ নেতাদের সম্পর্কে অশালীন বক্তব্যের প্রতিবাদ গাইবান্ধায় বৃষ্টিতে ভিজে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ কালিয়াকৈরে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় প্রজন্মের দ্বৈরথে জমজমাট ফুটবল ম্যাচ সিলেট সদর ইউনাইটেড ইউকের ব্যতিক্রমী আয়োজন ড্যাগেনহামে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যাচারের প্রতিবাদে রাজধানীর “আজিমপুর ছাপড়া মসজিদ” সংলগ্ন এলাকায় বিক্ষোভ ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজশাহীতে অভিনব কৌশলে হিরোইন পাচার

নাটোরে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে বিএনপি নেতাকর্মীরা! দলীয় প্রার্থী ঘোষিত না হওয়ায় বাড়ছে গ্রুপিং

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসন্ন, নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি হাইকমান্ড দলীয় কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। এ প্রেক্ষিতে ঘোষিত হয় নাটোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি। আর এই কমিটি গঠণকে কেন্দ্র করে ক্রমেই পুরো নাটোরে বাড়তে থাকে গ্রুপিং, যা এখন দৃশ্যমান। গ্রুপিংয়ের কারণে নেতাকর্মীরা হয়ে পড়েছেন দ্বিধা বিভক্ত।

এদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে যাদের বাধা নেই, সেই সব রাজনৈতিক দলে কোন গ্রুপিং না থাকায় বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন তারা।
তথ্যমতে, দীর্ঘদিন থেকেই নাটোর জেলা বিএনপির নেতৃত্বে আছেন সাবেক ভূমি উপমন্ত্রী ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। কেন্দ্রীয় বিএনপি বিগত আওয়ামী শাসনামলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নাটোর (সদর- নলডাঙ্গা) আসনে এমপি মনোনয়ন দেয় দুলু অথবা দুলু জেলে থাকাকালে তার স্ত্রী জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি সাবিনা ইয়াসমিন ছবিকে।
অপরদিকে, রুহুল কুদ্দুস দুলু কেন্দ্রীয় বিএনপির পদধারী হওয়ার পর জেলা বিএনপির সভাপতিসহ পূর্ণাঙ্গ কমিটি ছিল তার নিয়ন্ত্রণে। দীর্ঘ সময় নাটোর জেলা বিএনপি রুহুল কুদ্দুস দুলুর নিয়ন্ত্রণে থাকা অবস্থায় দলীয় সিদ্ধান্তে নাটোরে সক্রিয় হন শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী মোঃ আবুল কাশেম। মুলতঃ জাগদলের মধ্যদিয়ে আবুল কাশেমের রাজনৈতিক জীবনের সূচনা। সেই থেকে তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি শহীদ জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আদর্শে বিশ্বাসী এবং আগামীর রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমানের একনিষ্ঠ সৈনিক। তাই দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে আবুল কাশেমকে দেয়া হয় নাটোর জেলা বিএনপিকে সুসংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ করার দায়িত্ব। জেলা রাজনীতিতে তার আবির্ভাব বিএনপির ক্ষুদ্র একটি মহল কোন ভাবেই মেনে নিতে পারেনি। কিন্তু আবুল কাশেম তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে পুরো নাটোর জেলায় শুরু করেন, লোক সমাগম, মতবিনিময়, কর্মী সভা সহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড। তার সবচেয়ে আলোচিত কাজ হচ্ছে সাধারণ মানুষ ও নেতাকর্মীদের নিয়ে তৃপ্তি সহকারে আহার করা। যা জেলা জুড়ে এরমধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
এদিকে, আসন্ন সংসদ নির্বাচনে নাটোর (সদর- নলডাঙ্গা) আসনে আবুল কাশেমকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হবে বলে আমজনতার মধ্যে ব্যাপক আলোচনা চলছে। এই ধরনের ঘোষণা আঁচ করতে পেরে রুহুল কুদ্দুস দুলু, তার সহধর্মিণী সাবিনা ইয়াসমিন ছবি ও দুলু অনুসারীরা আদা-জল খেয়ে মাঠে নেমেছেন। প্রতিদিন কোন না কোন ভাবে আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও নেতাকর্মীর মাঝে দ্বন্দ্ব ও হতাশা বিরাজ করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নীচু বাজার, উপর বাজার, বাসস্ট্যান্ড, ফুলবাগান, মোহনপুর,দ্বিগাপাতিয়া, হাফরাস্তা, দত্তপাড়া, কান্দি ভিটা, কানাইখালী এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু নিজের মিটিং মিছিলে লোকসমাগম দেখে বুঝা উচিত, কোথায় গিয়ে ঠেকেছে তার জনপ্রিয়তা! কোন মিটিং মিছিলে ৪/৫’শ লোকের বেশি হয়না। মিছিল তোলার লোক না থাকায়, তিনি নিজেই নিজের এবং ধানের শীষের শ্লোগান দিয়ে থাকেন। এমনকি তিনি বলেন, দুলু ভাইয়ের মার্কা….!

ষ্টেশন বাজার, মাদ্রাসার মোড়, পিপরুল, মাধনগর, বড় হরিশপুরের একাধিক
বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, পার্শ্ববর্তী জেলার তাহিরপুর ও বাঘমারার সিদ্দিক ও মন্টু রুহুল কুদ্দুস দুলুর জনসভায় লোক সাপ্লাইয়ের কাজ করে। কিন্তু ইদানিং নাকি টাকা দিয়েও সভায় লোকজন আনতে পারছেন না তারা।

উল্লেখ্য, বেগম খালেদা জিয়ার গাড়ী বহর একবার নাটোর যাওয়ার সময় হামলার শিকার হয়। পরে ঐ ঘটনায় দোষীদের শাস্তিও দেয়া হয়। অন্যদিকে, সুকৌশলে দুলু ও তার সহযোগীরা মোঃ আবুল কাশেমকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে ব্যাপক নির্যাতন নিপীড়ন করে। ঢাকায় চিকিৎসা নিতে না পারায়, তাকে যেতে হয় সিঙ্গাপুর। মূলতঃ এরপর থেকে দলীয় সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের সিদ্ধান্তে নাটোর বিএনপির রাজনীতীতে অনুপস্থিত থাকেন তিনি। কিন্তু তিনি দায়িত্ব পালন করেন ঢাকার গাজীপুর বিএনপি এবং আমরা বিএনপি পরিবার সংগঠনের উপদেষ্টা হিসাবে। এ দায়িত্ব তিনি দীর্ঘদিন নিষ্ঠার সাথে পালন করে, তিনি কেন্দ্রীয় বিএনপি ছাড়াও দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আস্থা অর্জনে সক্ষম হন।

এসব কারণে গত ৫ আগষ্ট আওয়ামী শাসনামলের অবসানের পর গঠিত নাটোর জেলা বিএনপি কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয় আবুল কাশেমকে। এছাড়া ওই কমিটিতে লালপুর, বড়াইগ্রাম, সিংড়া, গুরুদাসপুর উপজেলা থেকেও সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু ওই কমিটি থেকে বাদ পরেন দুলুর ঘনিষ্ঠখ্যাত ফরহাদ আলী দেওয়ান শাহীনসহ ঘনিষ্ঠ আরো কিছু নেতা। শুধু তাই নয়, ওই জেলা কমিটিতে রাখা হয়নি রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুকে।
এতে ছড়িয়ে পরে কিছুটা ক্ষোভ! কিন্তু কয়েক দিন যেতেই থেমে যায় ক্ষোভের আগুন। এসব কারণে রুহুল কুদ্দুস দুলু আবুল কাশেমকে হত্যার প্রকাশ্যে হুমকি ধমকিতে দিয়ে যাচ্ছেন।
অপরদিকে জেলা কমিটিতে নাম চলে আসায় এবং নাটোর জেলার দায়িত্ব পাওয়ায় রাজনীতিতে পুরোপুরি সক্রিয় হয়ে উঠৈন শিল্পপতি আবুল কাশেম। বিভিন্ন মিটিংয়ে তিনি আসন্ন সংসদ নির্বাচনে বিএনপি তাকে প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা দিলে, সবাইকে নিয়ে ধানের শীষের বিজয় ছিনিয়ে আনার ইঙ্গিত দেন। এদিকে রুহুল কুদ্দুস দুলুও পাল্টা বিভিন্ন সভা সমাবেশ করে আসন্ন নির্বাচনে এমপি প্রার্থী হিসাবে নিজের নাম ইঙ্গিত করেন। এতে বেকায়দায় পরে যায় জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ।এক সময়ের বিএনপি ঘাঁটি খ্যাত নাটোর-২ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৮৪ হাজার ২৯ জন। সচেতন মহলের দাবী, এই আসনে বিএনপির একক প্রার্থী হলে নিঃসন্দেহে বিজয়ী হবে। আর যদি বিএনপির মধ্যে চলমান দ্বন্দ্ব বজায় থাকে তবে জামায়াত বা অন্য কোন দলের প্রার্থী এমপি নির্বাচিত হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বিএনপির ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের দাবী, এক সময় নাটোর সদর আসনে দুলুর কোন বিকল্প ছিল না। শুধু তাই নয়, পুরো জেলায় বিএনপির রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। তবে কালের পরিক্রমায় জেলার সকল উপজেলায় দুলুর সেই নিয়ন্ত্রণ এখন অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে।
খাজুড়া, ব্রহ্মপুর, তেঘরিয়া, তমালতলা, লক্ষ্মীপুর, হালসা, বড় হরিশপুর, হাপুনিয়া, লালবাজারের অনেকের মতে আত্মীয় কেন্দ্রীক মনোভাব, চাঁদাবাজি, একনায়কতন্ত্র, স্কুল পরিচালনা কমিটি গঠনে বাণিজ্য ও অযোগ্যদের নিযুক্ত এবং টাকার বিনিময়ে আওয়ামী পুনর্বাসনের কারণে রুহুল কুদ্দুস দুলুর জনপ্রিয়তা ও দলীয় মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে। দুলুর জনপ্রিয়তা হ্রাস এবং কর্মকাণ্ডে জনরোষ বেড়ে যাওয়ায় পুরো নাটোরে প্রকাশ্যে চলে আসে দুলর প্রতিপক্ষরা। প্রকৃত ত্যাগী নেতাদের এক পক্ষের দাবী, জেলা বিএনপিতে দুলু পরিবার ও ঘনিষ্ঠজনদের একচ্ছত্র নেতৃত্ব চলেছে দীর্ঘদিন। আর একারণে দীর্ঘদিন থেকে যোগ্য হওয়া স্বত্বেও জেলার বিভিন্ন উপজেলার ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন হননি। এতে নাটোর জেলা বিএনপিতে গণতন্ত্রের চর্চা সর্বোচ্চ মাত্রায় উপেক্ষিত হয়েছে। বিএনপির বৃহত্তর স্বার্থে এ অবস্থার পরিবর্তন হওয়া এবং বিকল্প নেতৃত্ব মাঠে আসা প্রয়োজন। যার নমুনা হিসাবে সদর আসনে আবুল কাশেমের আবির্ভাব।
অন্য পক্ষের দাবী, নাটোর জেলায় দুলুর নেতৃত্বে যে বিএনপি তা অনেক দৃঢ় ও শক্তিশালী। নাটোর জেলা বিএনপি মানেই দুলু। দুলুর নেতৃত্ব ছাড়া নাটোর জেলা বিএনপি শক্তিহীন। তাদের আরো দাবী, নাটোর সদর-
নলডাঙ্গা উপজেলার রামশার কাজিপুরে ১৮টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট মামলায় ৭ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ায় গত দুটি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেননি দুলু। ওই দুই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তার সহধর্মিণী তৎকালীন জেলা বিএনপির সহসভাপতি সাবিনা ইয়াসমিন ছবি। চলতি বছরের শুরুতে আদালতে আপিলের রায়ে দুলুসহ ৬৮ জন দণ্ডপ্রাপ্তকে খালাস দেওয়ায় এখন আর তার প্রার্থী হতে কোনো বাধা নেই। ফলে নাটোর সদর আসনে এবার বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশাী অ্যাডভোকেট এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক রহিম নেওয়াজ বলেন, আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠে কাজ করছেন রুহুল কুদ্দুস দুলু। তার সাথে জেলা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলসহ সব অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা আছে। ওই সব সমাবেশে দুলুকে সমর্থন জানাতে মানুষের জোয়ার সৃষ্টি হয়।
এদিকে আবুল কাশেমের অনুসারী বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তারেক রহমান ও খালেদা জিয়ার সাথে আবুল কাশেমের রয়েছে বিশ্বস্ততা ও যোগাযোগ। কেন্দ্রীয় বিএনপি ও নাটোর জেলা বিএনপির একটি অংশ প্রচ্ছন্ন ভাবে আবুল কাশেমকে সমর্থন করছেন। অপরদিকে দুলুর বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় বিএনপিতে রয়েছে জেএমবি সৃষ্টিসহ নানা অভিযোগ। এগুলো বিবেচনায় আগামী নির্বাচনে আবুল কাশেমের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাব্যতা উড়িয়ে দেয়া যায় না। কাশেমের ঘনিষ্ঠজন খ্যাত, বিএনপির এক নেতা জানান, কেন্দ্রীয় বিএনপি, তারেক রহমান ও খালেদা জিয়ার সম্মতিতে যাকেই মনোনয়ন দিক না কেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা তাকেই ধানের শীষ প্রতীকে বিজয়ী করবেন। এক্ষেত্রে প্রার্থী কোন বিষয় নয়। তিনি দাবী করেন, দুলুকে মনোনয়ন দিলে নাটোরে আবারও বিএনপিতে দুলুর পরিবারতন্ত্র কায়েম হবে, যা এতদিন চলমান ছিল। এটি কেন্দ্রীয় বিএনপিসহ জেলা, উপজেলার ত্যাগী ও প্রকৃত নেতা কর্মীরা চান না। ফলে আগামী নির্বাচনে আবুল কাশেমের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশী।
তিনি আরো দাবী করেন, শিল্পপতি আবুল কাশেম শহীদ জিয়ার আদর্শের সৈনিক। খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়ার অনুসারী, একজন প্রকৃত জনদরদী। তিনি প্রকাশ্য ও গোপনে দীর্ঘদিন ধরে জেলার সাধারণ মানুষ, মসজিদ, মাদ্রাসা ও নানা সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনে আর্থিক সহযোগিতা করে আসছেন। এলাকার কোন মানুষ তার কাছে সহযোগিতা চেয়ে কখনোই খালি হাতে ফেরেননি। বিশেষ করে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের যে কোন নেতা-কর্মীর সমস্যায় সব সময়ই তিনি পাশে থাকেন।

এই আবুল কাশেম শুধুমাত্র বিএনপি করার কারণে হামজা গ্রুপের মালিক হয়েও নানা ভাবে বিগত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার বিভিন্ন ভাবে বাধা বিঘ্ন ও আর্থিক ক্ষতির সম্মুক্ষিণ করে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী শাসনামলে তাকে ডিজিএফআই তিনদিন গুম করে রাখে। পরে ঢাকা মতিঝিলের কাউন্সিলর শামিম তাকে মুক্তি দেওয়ার শর্তে তিন কেটি টাকা মুক্তিপণ আদায় করে। এছাড়া গত ১৬ বছরে বিএনপি করার কারণে তার প্রায় দেড় শত কোটি টাকার ক্ষতি হলেও বিএনপি ছাড়েননি আবুল কাশেম। এমন ত্যাগী ও জনদরদী নেতারই আগামী সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া শোভা পায় বলে মন্তব্য করেন এই নেতা।

এদিকে নাটোর জেলা বিএনপির একটি অংশ নাম প্রকাশ না করার শর্তে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন,
নাটোর সদর-নলডাঙ্গা আসনে নাটোর জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির ও বাগতিপাড়া সরকারি কলেজের ইংরেজি বিষয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক ইউনুস আলীকে তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। চলতি বছরের শুরুতে নাটোর নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারি কলেজ মাঠে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে জনসমাবেশে তাকে প্রাথী হিসাবে বিজয়ী করতে ভোটও চাওয়া হয়েছে। এরআগে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রয়াত শংকর গোবিন্দ চৌধুরীর কাছে খুব সামান্য ভোটে ইউনুস আলী পরাজিত হয়ে পুরো নাটোরে সাড়া ফেলেছিল।

অভিজ্ঞ রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, জামায়াতে ইসলামসহ অন্যান্য ইসলামী দল ও এনসিপি জোটবদ্ধভাবে একক প্রার্থী ঘোষণা করলে তাদের ভোট সংখ্যা কিন্তু একেবারে কম না। যা বিএনপি প্রার্থীর বিজয়ের ক্ষেত্রে অনেকটা চ্যালেঞ্জ স্বরূপ। এ অবস্থায় বিএনপি ঐক্যবদ্ধ প্রার্থী মনোনয়নে ব্যর্থ হলে, ধানের শীষ প্রতীকের বিজয়ী হওয়ার ক্ষেত্রে নানা জটিলতা সৃষ্টি হবে। এই পরিস্থিতিতে যত দ্রুত সময়ের মধ্যে নাটোর সদর আসনে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করবে এবং দলীয় বিভাজন বন্ধে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব পদক্ষেপ নিবেন, তাতেই সুফল ও সাফল্য বয়ে আসবে পুরো নাটোর জেলায়, এমনটাই দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন নাটোরের প্রকৃত ও পরীক্ষিত জাতীয়তাবাদী শক্তি।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৬:৪৯:৪০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫
৩৫
Translate »

নাটোরে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে বিএনপি নেতাকর্মীরা! দলীয় প্রার্থী ঘোষিত না হওয়ায় বাড়ছে গ্রুপিং

আপডেট : ০৬:৪৯:৪০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫

জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসন্ন, নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি হাইকমান্ড দলীয় কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। এ প্রেক্ষিতে ঘোষিত হয় নাটোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি। আর এই কমিটি গঠণকে কেন্দ্র করে ক্রমেই পুরো নাটোরে বাড়তে থাকে গ্রুপিং, যা এখন দৃশ্যমান। গ্রুপিংয়ের কারণে নেতাকর্মীরা হয়ে পড়েছেন দ্বিধা বিভক্ত।

এদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে যাদের বাধা নেই, সেই সব রাজনৈতিক দলে কোন গ্রুপিং না থাকায় বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন তারা।
তথ্যমতে, দীর্ঘদিন থেকেই নাটোর জেলা বিএনপির নেতৃত্বে আছেন সাবেক ভূমি উপমন্ত্রী ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। কেন্দ্রীয় বিএনপি বিগত আওয়ামী শাসনামলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নাটোর (সদর- নলডাঙ্গা) আসনে এমপি মনোনয়ন দেয় দুলু অথবা দুলু জেলে থাকাকালে তার স্ত্রী জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি সাবিনা ইয়াসমিন ছবিকে।
অপরদিকে, রুহুল কুদ্দুস দুলু কেন্দ্রীয় বিএনপির পদধারী হওয়ার পর জেলা বিএনপির সভাপতিসহ পূর্ণাঙ্গ কমিটি ছিল তার নিয়ন্ত্রণে। দীর্ঘ সময় নাটোর জেলা বিএনপি রুহুল কুদ্দুস দুলুর নিয়ন্ত্রণে থাকা অবস্থায় দলীয় সিদ্ধান্তে নাটোরে সক্রিয় হন শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী মোঃ আবুল কাশেম। মুলতঃ জাগদলের মধ্যদিয়ে আবুল কাশেমের রাজনৈতিক জীবনের সূচনা। সেই থেকে তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি শহীদ জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আদর্শে বিশ্বাসী এবং আগামীর রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমানের একনিষ্ঠ সৈনিক। তাই দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে আবুল কাশেমকে দেয়া হয় নাটোর জেলা বিএনপিকে সুসংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ করার দায়িত্ব। জেলা রাজনীতিতে তার আবির্ভাব বিএনপির ক্ষুদ্র একটি মহল কোন ভাবেই মেনে নিতে পারেনি। কিন্তু আবুল কাশেম তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে পুরো নাটোর জেলায় শুরু করেন, লোক সমাগম, মতবিনিময়, কর্মী সভা সহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড। তার সবচেয়ে আলোচিত কাজ হচ্ছে সাধারণ মানুষ ও নেতাকর্মীদের নিয়ে তৃপ্তি সহকারে আহার করা। যা জেলা জুড়ে এরমধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
এদিকে, আসন্ন সংসদ নির্বাচনে নাটোর (সদর- নলডাঙ্গা) আসনে আবুল কাশেমকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হবে বলে আমজনতার মধ্যে ব্যাপক আলোচনা চলছে। এই ধরনের ঘোষণা আঁচ করতে পেরে রুহুল কুদ্দুস দুলু, তার সহধর্মিণী সাবিনা ইয়াসমিন ছবি ও দুলু অনুসারীরা আদা-জল খেয়ে মাঠে নেমেছেন। প্রতিদিন কোন না কোন ভাবে আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও নেতাকর্মীর মাঝে দ্বন্দ্ব ও হতাশা বিরাজ করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নীচু বাজার, উপর বাজার, বাসস্ট্যান্ড, ফুলবাগান, মোহনপুর,দ্বিগাপাতিয়া, হাফরাস্তা, দত্তপাড়া, কান্দি ভিটা, কানাইখালী এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু নিজের মিটিং মিছিলে লোকসমাগম দেখে বুঝা উচিত, কোথায় গিয়ে ঠেকেছে তার জনপ্রিয়তা! কোন মিটিং মিছিলে ৪/৫’শ লোকের বেশি হয়না। মিছিল তোলার লোক না থাকায়, তিনি নিজেই নিজের এবং ধানের শীষের শ্লোগান দিয়ে থাকেন। এমনকি তিনি বলেন, দুলু ভাইয়ের মার্কা….!

ষ্টেশন বাজার, মাদ্রাসার মোড়, পিপরুল, মাধনগর, বড় হরিশপুরের একাধিক
বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, পার্শ্ববর্তী জেলার তাহিরপুর ও বাঘমারার সিদ্দিক ও মন্টু রুহুল কুদ্দুস দুলুর জনসভায় লোক সাপ্লাইয়ের কাজ করে। কিন্তু ইদানিং নাকি টাকা দিয়েও সভায় লোকজন আনতে পারছেন না তারা।

উল্লেখ্য, বেগম খালেদা জিয়ার গাড়ী বহর একবার নাটোর যাওয়ার সময় হামলার শিকার হয়। পরে ঐ ঘটনায় দোষীদের শাস্তিও দেয়া হয়। অন্যদিকে, সুকৌশলে দুলু ও তার সহযোগীরা মোঃ আবুল কাশেমকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে ব্যাপক নির্যাতন নিপীড়ন করে। ঢাকায় চিকিৎসা নিতে না পারায়, তাকে যেতে হয় সিঙ্গাপুর। মূলতঃ এরপর থেকে দলীয় সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের সিদ্ধান্তে নাটোর বিএনপির রাজনীতীতে অনুপস্থিত থাকেন তিনি। কিন্তু তিনি দায়িত্ব পালন করেন ঢাকার গাজীপুর বিএনপি এবং আমরা বিএনপি পরিবার সংগঠনের উপদেষ্টা হিসাবে। এ দায়িত্ব তিনি দীর্ঘদিন নিষ্ঠার সাথে পালন করে, তিনি কেন্দ্রীয় বিএনপি ছাড়াও দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আস্থা অর্জনে সক্ষম হন।

এসব কারণে গত ৫ আগষ্ট আওয়ামী শাসনামলের অবসানের পর গঠিত নাটোর জেলা বিএনপি কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয় আবুল কাশেমকে। এছাড়া ওই কমিটিতে লালপুর, বড়াইগ্রাম, সিংড়া, গুরুদাসপুর উপজেলা থেকেও সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু ওই কমিটি থেকে বাদ পরেন দুলুর ঘনিষ্ঠখ্যাত ফরহাদ আলী দেওয়ান শাহীনসহ ঘনিষ্ঠ আরো কিছু নেতা। শুধু তাই নয়, ওই জেলা কমিটিতে রাখা হয়নি রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুকে।
এতে ছড়িয়ে পরে কিছুটা ক্ষোভ! কিন্তু কয়েক দিন যেতেই থেমে যায় ক্ষোভের আগুন। এসব কারণে রুহুল কুদ্দুস দুলু আবুল কাশেমকে হত্যার প্রকাশ্যে হুমকি ধমকিতে দিয়ে যাচ্ছেন।
অপরদিকে জেলা কমিটিতে নাম চলে আসায় এবং নাটোর জেলার দায়িত্ব পাওয়ায় রাজনীতিতে পুরোপুরি সক্রিয় হয়ে উঠৈন শিল্পপতি আবুল কাশেম। বিভিন্ন মিটিংয়ে তিনি আসন্ন সংসদ নির্বাচনে বিএনপি তাকে প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা দিলে, সবাইকে নিয়ে ধানের শীষের বিজয় ছিনিয়ে আনার ইঙ্গিত দেন। এদিকে রুহুল কুদ্দুস দুলুও পাল্টা বিভিন্ন সভা সমাবেশ করে আসন্ন নির্বাচনে এমপি প্রার্থী হিসাবে নিজের নাম ইঙ্গিত করেন। এতে বেকায়দায় পরে যায় জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ।এক সময়ের বিএনপি ঘাঁটি খ্যাত নাটোর-২ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৮৪ হাজার ২৯ জন। সচেতন মহলের দাবী, এই আসনে বিএনপির একক প্রার্থী হলে নিঃসন্দেহে বিজয়ী হবে। আর যদি বিএনপির মধ্যে চলমান দ্বন্দ্ব বজায় থাকে তবে জামায়াত বা অন্য কোন দলের প্রার্থী এমপি নির্বাচিত হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বিএনপির ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের দাবী, এক সময় নাটোর সদর আসনে দুলুর কোন বিকল্প ছিল না। শুধু তাই নয়, পুরো জেলায় বিএনপির রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। তবে কালের পরিক্রমায় জেলার সকল উপজেলায় দুলুর সেই নিয়ন্ত্রণ এখন অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে।
খাজুড়া, ব্রহ্মপুর, তেঘরিয়া, তমালতলা, লক্ষ্মীপুর, হালসা, বড় হরিশপুর, হাপুনিয়া, লালবাজারের অনেকের মতে আত্মীয় কেন্দ্রীক মনোভাব, চাঁদাবাজি, একনায়কতন্ত্র, স্কুল পরিচালনা কমিটি গঠনে বাণিজ্য ও অযোগ্যদের নিযুক্ত এবং টাকার বিনিময়ে আওয়ামী পুনর্বাসনের কারণে রুহুল কুদ্দুস দুলুর জনপ্রিয়তা ও দলীয় মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে। দুলুর জনপ্রিয়তা হ্রাস এবং কর্মকাণ্ডে জনরোষ বেড়ে যাওয়ায় পুরো নাটোরে প্রকাশ্যে চলে আসে দুলর প্রতিপক্ষরা। প্রকৃত ত্যাগী নেতাদের এক পক্ষের দাবী, জেলা বিএনপিতে দুলু পরিবার ও ঘনিষ্ঠজনদের একচ্ছত্র নেতৃত্ব চলেছে দীর্ঘদিন। আর একারণে দীর্ঘদিন থেকে যোগ্য হওয়া স্বত্বেও জেলার বিভিন্ন উপজেলার ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন হননি। এতে নাটোর জেলা বিএনপিতে গণতন্ত্রের চর্চা সর্বোচ্চ মাত্রায় উপেক্ষিত হয়েছে। বিএনপির বৃহত্তর স্বার্থে এ অবস্থার পরিবর্তন হওয়া এবং বিকল্প নেতৃত্ব মাঠে আসা প্রয়োজন। যার নমুনা হিসাবে সদর আসনে আবুল কাশেমের আবির্ভাব।
অন্য পক্ষের দাবী, নাটোর জেলায় দুলুর নেতৃত্বে যে বিএনপি তা অনেক দৃঢ় ও শক্তিশালী। নাটোর জেলা বিএনপি মানেই দুলু। দুলুর নেতৃত্ব ছাড়া নাটোর জেলা বিএনপি শক্তিহীন। তাদের আরো দাবী, নাটোর সদর-
নলডাঙ্গা উপজেলার রামশার কাজিপুরে ১৮টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট মামলায় ৭ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ায় গত দুটি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেননি দুলু। ওই দুই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তার সহধর্মিণী তৎকালীন জেলা বিএনপির সহসভাপতি সাবিনা ইয়াসমিন ছবি। চলতি বছরের শুরুতে আদালতে আপিলের রায়ে দুলুসহ ৬৮ জন দণ্ডপ্রাপ্তকে খালাস দেওয়ায় এখন আর তার প্রার্থী হতে কোনো বাধা নেই। ফলে নাটোর সদর আসনে এবার বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশাী অ্যাডভোকেট এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক রহিম নেওয়াজ বলেন, আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠে কাজ করছেন রুহুল কুদ্দুস দুলু। তার সাথে জেলা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলসহ সব অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা আছে। ওই সব সমাবেশে দুলুকে সমর্থন জানাতে মানুষের জোয়ার সৃষ্টি হয়।
এদিকে আবুল কাশেমের অনুসারী বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তারেক রহমান ও খালেদা জিয়ার সাথে আবুল কাশেমের রয়েছে বিশ্বস্ততা ও যোগাযোগ। কেন্দ্রীয় বিএনপি ও নাটোর জেলা বিএনপির একটি অংশ প্রচ্ছন্ন ভাবে আবুল কাশেমকে সমর্থন করছেন। অপরদিকে দুলুর বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় বিএনপিতে রয়েছে জেএমবি সৃষ্টিসহ নানা অভিযোগ। এগুলো বিবেচনায় আগামী নির্বাচনে আবুল কাশেমের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাব্যতা উড়িয়ে দেয়া যায় না। কাশেমের ঘনিষ্ঠজন খ্যাত, বিএনপির এক নেতা জানান, কেন্দ্রীয় বিএনপি, তারেক রহমান ও খালেদা জিয়ার সম্মতিতে যাকেই মনোনয়ন দিক না কেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা তাকেই ধানের শীষ প্রতীকে বিজয়ী করবেন। এক্ষেত্রে প্রার্থী কোন বিষয় নয়। তিনি দাবী করেন, দুলুকে মনোনয়ন দিলে নাটোরে আবারও বিএনপিতে দুলুর পরিবারতন্ত্র কায়েম হবে, যা এতদিন চলমান ছিল। এটি কেন্দ্রীয় বিএনপিসহ জেলা, উপজেলার ত্যাগী ও প্রকৃত নেতা কর্মীরা চান না। ফলে আগামী নির্বাচনে আবুল কাশেমের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশী।
তিনি আরো দাবী করেন, শিল্পপতি আবুল কাশেম শহীদ জিয়ার আদর্শের সৈনিক। খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়ার অনুসারী, একজন প্রকৃত জনদরদী। তিনি প্রকাশ্য ও গোপনে দীর্ঘদিন ধরে জেলার সাধারণ মানুষ, মসজিদ, মাদ্রাসা ও নানা সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনে আর্থিক সহযোগিতা করে আসছেন। এলাকার কোন মানুষ তার কাছে সহযোগিতা চেয়ে কখনোই খালি হাতে ফেরেননি। বিশেষ করে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের যে কোন নেতা-কর্মীর সমস্যায় সব সময়ই তিনি পাশে থাকেন।

এই আবুল কাশেম শুধুমাত্র বিএনপি করার কারণে হামজা গ্রুপের মালিক হয়েও নানা ভাবে বিগত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার বিভিন্ন ভাবে বাধা বিঘ্ন ও আর্থিক ক্ষতির সম্মুক্ষিণ করে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী শাসনামলে তাকে ডিজিএফআই তিনদিন গুম করে রাখে। পরে ঢাকা মতিঝিলের কাউন্সিলর শামিম তাকে মুক্তি দেওয়ার শর্তে তিন কেটি টাকা মুক্তিপণ আদায় করে। এছাড়া গত ১৬ বছরে বিএনপি করার কারণে তার প্রায় দেড় শত কোটি টাকার ক্ষতি হলেও বিএনপি ছাড়েননি আবুল কাশেম। এমন ত্যাগী ও জনদরদী নেতারই আগামী সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া শোভা পায় বলে মন্তব্য করেন এই নেতা।

এদিকে নাটোর জেলা বিএনপির একটি অংশ নাম প্রকাশ না করার শর্তে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন,
নাটোর সদর-নলডাঙ্গা আসনে নাটোর জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির ও বাগতিপাড়া সরকারি কলেজের ইংরেজি বিষয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক ইউনুস আলীকে তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। চলতি বছরের শুরুতে নাটোর নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারি কলেজ মাঠে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে জনসমাবেশে তাকে প্রাথী হিসাবে বিজয়ী করতে ভোটও চাওয়া হয়েছে। এরআগে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রয়াত শংকর গোবিন্দ চৌধুরীর কাছে খুব সামান্য ভোটে ইউনুস আলী পরাজিত হয়ে পুরো নাটোরে সাড়া ফেলেছিল।

অভিজ্ঞ রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, জামায়াতে ইসলামসহ অন্যান্য ইসলামী দল ও এনসিপি জোটবদ্ধভাবে একক প্রার্থী ঘোষণা করলে তাদের ভোট সংখ্যা কিন্তু একেবারে কম না। যা বিএনপি প্রার্থীর বিজয়ের ক্ষেত্রে অনেকটা চ্যালেঞ্জ স্বরূপ। এ অবস্থায় বিএনপি ঐক্যবদ্ধ প্রার্থী মনোনয়নে ব্যর্থ হলে, ধানের শীষ প্রতীকের বিজয়ী হওয়ার ক্ষেত্রে নানা জটিলতা সৃষ্টি হবে। এই পরিস্থিতিতে যত দ্রুত সময়ের মধ্যে নাটোর সদর আসনে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করবে এবং দলীয় বিভাজন বন্ধে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব পদক্ষেপ নিবেন, তাতেই সুফল ও সাফল্য বয়ে আসবে পুরো নাটোর জেলায়, এমনটাই দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন নাটোরের প্রকৃত ও পরীক্ষিত জাতীয়তাবাদী শক্তি।