London ০৮:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম:

তীব্র এ তাপমাত্রা মোকাবিলা করতে হবে সবাই মিলে, শুরু করুন আজই

অনলাইন ডেস্ক:

মে মাস চলছে, বৈশাখ মাস শেষের দিকে। গত কয়েকদিন থেকে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠে যাচ্ছে, এই তীব্র তাপদাহে মানুষের নাজেহাল অবস্থা। কিন্তু পৃথিবীর জলবায়ুর এই অকস্থা কি একদিনে হয়েছে? না, মানবজাতি প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করছে বহুদিন থেকেই।

দেশে বছর কয়েক ধরে তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে রেকর্ড হয়েই চলেছে। এবারও যে ব্যতিক্রম নয়, তা বোঝা যাচ্ছে এখন থেকেই। ২০২১ সালের ২৫ এপ্রিল দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা আগের ২৬ বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ভেঙেছিল। গত বছর পুরোনো সব রেকর্ড ভেঙে চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিলো ৪২.৭ ডিগ্রিতে।

রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি, জার্মান রেডক্রস এবং বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক গবেষণায় ৪৪ বছরের তাপমাত্রার একটি বিশ্লেষণে দেখা গেছে- এপ্রিল, মে ও জুন, এ তিন মাসে ঢাকায় সবচেয়ে বেশি গরম অনুভূত হলেও ধীরে ধীরে তা কমে যেত। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে অগাস্ট পর্যন্ত এ তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। এমনকি শীতকাল বা শীতের দিনের সংখ্যাও কমতে দেখা যাচ্ছে গত ১০/১২ বছর ধরে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পৃথিবীতে তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রধান কারণ মানুষের কিছু কার্যকলাপ। এগুলো হলো-

১. জীবাশ্ম জ্বালানি দহনের ফলে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউজ গ্যাসের নিঃসরণ বৃদ্ধি পায়। গ্রিনহাউজ গ্যাসগুলো বায়ুমণ্ডলে তাপ আটকে রাখে, যার ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।

২. বন উজাড়ের ফলে গাছপালা কমে যায়, যার ফলে বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণের মাত্রা কমিয়ে দিচ্ছে। গাছপালা কমে গেলে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, যা পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে।

৩. কৃষি কার্যক্রমে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের ফলে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউজ গ্যাসের নিঃসরণ হয়।

৪. শিল্প কারখানাগুলোও বর্জ্য বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউজ গ্যাসের পরিমাণ বাড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত।

৫. যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়া বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউজ গ্যাসের পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে।

৬. জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় প্রচুর গাছপালা কাটা হয়।

তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন ধরনের পরিবেশগত ও সামাজিক সমস্যা দেখা দেয়।
এর মধ্যে রয়েছে-

১. জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝড়, বন্যা, খরা, তাপপ্রবাহ এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২. পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে জীববৈচিত্র্য হ্রাস পাচ্ছে। অনেক প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী তাদের আবাসস্থল হারিয়ে ফেলছে।

৩. মানুষের স্বাস্থ্যের সমস্যার মধ্যে রয়েছে গরমের তাপপ্রবাহ, পানিবাহিত রোগ, খাদ্য ঘাটতি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা।

এসব সমস্যার প্রভাব একদিনে দেখা যায় না। তবে এসবের কারণে প্রতি বছর মানুষের জীবনযাত্রা আগের বছরের থেকে কষ্টকর হয়ে উঠছে। তাই তাপমাত্রা বৃদ্ধির এসব কারণ মোকাবেলা করতে হবে সবাই মিলে। একত্র হয়ে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় এগিয়ে না আসলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এ পৃথিবঅ আর বাসযোগ্য থাকবে না। তাপমাত্রা বৃদ্ধি মোকাবেলায় যা করবেন-

১. জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস করতে হবে।

২. সৌরবিদ্যুৎ এর মতো নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসের ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে।

৩. জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধি এবং যানবাহনের ব্যবহার হ্রাস করতে হবে।

৪. প্রচুর পরিমাণে গাছ লাগাতে হবে। একমাত্র বনায়ন দ্বারাই বাতাসের কার্বন ডাইঅক্সাইডে ভারসাম্য আনা সম্ভব।

৫. জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার জন্য বিভিন্ন প্রযুক্তিগত উন্নয়নে গুরুত্ব দিতে হবে।

৬. সেই সঙ্গে ব্যক্তিগত জীবনে প্লাস্টিক জাতীয় পরিবেশ দূষণকারী পদার্থ ব্যবহার কমাতে হবে। প্রত্যেক মানুষকে পরিবেশ রক্ষায় নিজ স্থান থেকে দায়িত্বশীল হতে হবে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ১০:৫৪:১৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ মে ২০২৫
১১
Translate »

তীব্র এ তাপমাত্রা মোকাবিলা করতে হবে সবাই মিলে, শুরু করুন আজই

আপডেট : ১০:৫৪:১৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ মে ২০২৫

মে মাস চলছে, বৈশাখ মাস শেষের দিকে। গত কয়েকদিন থেকে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠে যাচ্ছে, এই তীব্র তাপদাহে মানুষের নাজেহাল অবস্থা। কিন্তু পৃথিবীর জলবায়ুর এই অকস্থা কি একদিনে হয়েছে? না, মানবজাতি প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করছে বহুদিন থেকেই।

দেশে বছর কয়েক ধরে তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে রেকর্ড হয়েই চলেছে। এবারও যে ব্যতিক্রম নয়, তা বোঝা যাচ্ছে এখন থেকেই। ২০২১ সালের ২৫ এপ্রিল দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা আগের ২৬ বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ভেঙেছিল। গত বছর পুরোনো সব রেকর্ড ভেঙে চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিলো ৪২.৭ ডিগ্রিতে।

রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি, জার্মান রেডক্রস এবং বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক গবেষণায় ৪৪ বছরের তাপমাত্রার একটি বিশ্লেষণে দেখা গেছে- এপ্রিল, মে ও জুন, এ তিন মাসে ঢাকায় সবচেয়ে বেশি গরম অনুভূত হলেও ধীরে ধীরে তা কমে যেত। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে অগাস্ট পর্যন্ত এ তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। এমনকি শীতকাল বা শীতের দিনের সংখ্যাও কমতে দেখা যাচ্ছে গত ১০/১২ বছর ধরে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পৃথিবীতে তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রধান কারণ মানুষের কিছু কার্যকলাপ। এগুলো হলো-

১. জীবাশ্ম জ্বালানি দহনের ফলে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউজ গ্যাসের নিঃসরণ বৃদ্ধি পায়। গ্রিনহাউজ গ্যাসগুলো বায়ুমণ্ডলে তাপ আটকে রাখে, যার ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।

২. বন উজাড়ের ফলে গাছপালা কমে যায়, যার ফলে বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণের মাত্রা কমিয়ে দিচ্ছে। গাছপালা কমে গেলে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, যা পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে।

৩. কৃষি কার্যক্রমে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের ফলে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউজ গ্যাসের নিঃসরণ হয়।

৪. শিল্প কারখানাগুলোও বর্জ্য বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউজ গ্যাসের পরিমাণ বাড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত।

৫. যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়া বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউজ গ্যাসের পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে।

৬. জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় প্রচুর গাছপালা কাটা হয়।

তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন ধরনের পরিবেশগত ও সামাজিক সমস্যা দেখা দেয়।
এর মধ্যে রয়েছে-

১. জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝড়, বন্যা, খরা, তাপপ্রবাহ এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২. পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে জীববৈচিত্র্য হ্রাস পাচ্ছে। অনেক প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী তাদের আবাসস্থল হারিয়ে ফেলছে।

৩. মানুষের স্বাস্থ্যের সমস্যার মধ্যে রয়েছে গরমের তাপপ্রবাহ, পানিবাহিত রোগ, খাদ্য ঘাটতি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা।

এসব সমস্যার প্রভাব একদিনে দেখা যায় না। তবে এসবের কারণে প্রতি বছর মানুষের জীবনযাত্রা আগের বছরের থেকে কষ্টকর হয়ে উঠছে। তাই তাপমাত্রা বৃদ্ধির এসব কারণ মোকাবেলা করতে হবে সবাই মিলে। একত্র হয়ে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় এগিয়ে না আসলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এ পৃথিবঅ আর বাসযোগ্য থাকবে না। তাপমাত্রা বৃদ্ধি মোকাবেলায় যা করবেন-

১. জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস করতে হবে।

২. সৌরবিদ্যুৎ এর মতো নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসের ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে।

৩. জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধি এবং যানবাহনের ব্যবহার হ্রাস করতে হবে।

৪. প্রচুর পরিমাণে গাছ লাগাতে হবে। একমাত্র বনায়ন দ্বারাই বাতাসের কার্বন ডাইঅক্সাইডে ভারসাম্য আনা সম্ভব।

৫. জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার জন্য বিভিন্ন প্রযুক্তিগত উন্নয়নে গুরুত্ব দিতে হবে।

৬. সেই সঙ্গে ব্যক্তিগত জীবনে প্লাস্টিক জাতীয় পরিবেশ দূষণকারী পদার্থ ব্যবহার কমাতে হবে। প্রত্যেক মানুষকে পরিবেশ রক্ষায় নিজ স্থান থেকে দায়িত্বশীল হতে হবে।