London ০৮:৪৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫, ১১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জিজ্ঞাসাবাদে সংঘবদ্ধ চক্রের তথ্য দিলেন ফারুকুল

গ্রেপ্তার ফারুকুল ইসলামফাইল ছবি

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে দুই তরুণীকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর, কান ধরে ওঠবসসহ হেনস্তার ঘটনার সঙ্গে জড়িত সংঘবদ্ধ চক্রের তথ্য দিয়েছেন এ ঘটনায় গ্রেপ্তার ফারুকুল ইসলাম।

গত বৃহস্পতিবার এক দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের সময় পুলিশকে এই তথ্য দিয়েছেন ফারুকুল। পুলিশ জানিয়েছে, তারা অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে আজ রোববার দুপুরে চক্রের কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।

পুলিশ জানায়, ১৪ সেপ্টেম্বর বিকেলে হেনস্তার শিকার দুই নারীর একজন বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মোহাম্মদ ফারুকুল ইসলাম ও নয়ন রুদ্র নামের দুই তরুণের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

এর আগে ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে শহরের ভোলা বাবুর পেট্রলপাম্প-সংলগ্ন এলাকা থেকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গ্রেপ্তার করে ফারুকুল ইসলামকে। ফারুকুল চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি এলাকার বাসিন্দা মাজেদুল ইসলামের ছেলে। তিনি মাদ্রাসার ছাত্র। কয়েক বছর ধরে তিনি শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাহারছড়া এলাকায় থাকেন। ১৫ সেপ্টেম্বর পুলিশ ফারুকুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। ১৭ সেপ্টেম্বর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শ্রীজ্ঞান তঞ্চঙ্গ্যা এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গত বৃহস্পতিবার রিমান্ডে এনে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে ফারুকুল ইসলামকে।

রিমান্ডে সৈকতে তরুণী হেনস্তার ঘটনার সঙ্গে জড়িত সংঘবদ্ধ চক্রের বেশ কয়েকজনের নামও প্রকাশ করেন তিনি। এর সত্যতা নিশ্চিত করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। সমুদ্রসৈকত এলাকায় এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে, সে ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে। ফারুকুল ইসলাম বর্তমানে জেলা কারাগারে।

পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে, ১১ সেপ্টেম্বর রাত ১০টা থেকে ১২টার মধ্যে মামলার বাদী তাঁর একজন বান্ধবীর সঙ্গে সুগন্ধা সৈকতে ঘুরতে যান। তখন ফারুকুল ইসলাম ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে তাঁদের গতিরোধ করেন এবং গালিগালাজ করতে থাকেন। সমুদ্রসৈকতে অপকর্ম করার অভিযোগ তুলে ফারুকুল ইসলামসহ কয়েকজন একপর্যায়ে তাঁদের লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটাতে শুরু করেন। লাঠির আঘাতে বাদী ডান হাতের বাহুতে আঘাত পেয়েছেন। তাঁর হাতের হাড় ভেঙে গেছে। লাঠির আঘাতে তাঁর ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা বান্ধবীও আঘাত পেয়েছেন বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

১৩ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সৈকতে দুই তরুণীকে মারধর, কান ধরে ওঠবস ও হয়রানির তিনটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। তা দেখে বিভিন্ন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, এক তরুণীকে কান ধরে ওঠবস করানো হচ্ছে। তাঁকে ঘিরে রেখেছেন কয়েকজন তরুণ-যুবক। বেশির ভাগ তরুণ মুঠোফোনে মারধরের ভিডিও ধারণ করছিলেন। তরুণীকে লাঠি দিয়ে মারধর করে সৈকত থেকে চলে যেতে বলা হচ্ছিল।

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তরুণীদের হেনস্তার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় পর্যটকসহ নানা শ্রেণি–পেশার মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। হেনস্তার শিকার এক তরুণী আজ রোববার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার পর থেকে তাঁরা কোথাও স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারছেন না। হামলার আশঙ্কায় তাঁরা সৈকতেও যেতে পারছেন না।

গ্রেপ্তার ফারুকুল এখনো আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি না দিলেও জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন এবং দুঃখ প্রকাশও করেছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হিমেল হাসান বলেন, ফারুকুল এখনো আদালতে জবানবন্দি দেননি। রিমান্ড শেষে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ১২:৪৪:৪২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
৬৬
Translate »

জিজ্ঞাসাবাদে সংঘবদ্ধ চক্রের তথ্য দিলেন ফারুকুল

আপডেট : ১২:৪৪:৪২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

গ্রেপ্তার ফারুকুল ইসলামফাইল ছবি

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে দুই তরুণীকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর, কান ধরে ওঠবসসহ হেনস্তার ঘটনার সঙ্গে জড়িত সংঘবদ্ধ চক্রের তথ্য দিয়েছেন এ ঘটনায় গ্রেপ্তার ফারুকুল ইসলাম।

গত বৃহস্পতিবার এক দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের সময় পুলিশকে এই তথ্য দিয়েছেন ফারুকুল। পুলিশ জানিয়েছে, তারা অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে আজ রোববার দুপুরে চক্রের কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।

পুলিশ জানায়, ১৪ সেপ্টেম্বর বিকেলে হেনস্তার শিকার দুই নারীর একজন বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মোহাম্মদ ফারুকুল ইসলাম ও নয়ন রুদ্র নামের দুই তরুণের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

এর আগে ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে শহরের ভোলা বাবুর পেট্রলপাম্প-সংলগ্ন এলাকা থেকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গ্রেপ্তার করে ফারুকুল ইসলামকে। ফারুকুল চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি এলাকার বাসিন্দা মাজেদুল ইসলামের ছেলে। তিনি মাদ্রাসার ছাত্র। কয়েক বছর ধরে তিনি শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাহারছড়া এলাকায় থাকেন। ১৫ সেপ্টেম্বর পুলিশ ফারুকুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। ১৭ সেপ্টেম্বর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শ্রীজ্ঞান তঞ্চঙ্গ্যা এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গত বৃহস্পতিবার রিমান্ডে এনে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে ফারুকুল ইসলামকে।

রিমান্ডে সৈকতে তরুণী হেনস্তার ঘটনার সঙ্গে জড়িত সংঘবদ্ধ চক্রের বেশ কয়েকজনের নামও প্রকাশ করেন তিনি। এর সত্যতা নিশ্চিত করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। সমুদ্রসৈকত এলাকায় এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে, সে ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে। ফারুকুল ইসলাম বর্তমানে জেলা কারাগারে।

পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে, ১১ সেপ্টেম্বর রাত ১০টা থেকে ১২টার মধ্যে মামলার বাদী তাঁর একজন বান্ধবীর সঙ্গে সুগন্ধা সৈকতে ঘুরতে যান। তখন ফারুকুল ইসলাম ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে তাঁদের গতিরোধ করেন এবং গালিগালাজ করতে থাকেন। সমুদ্রসৈকতে অপকর্ম করার অভিযোগ তুলে ফারুকুল ইসলামসহ কয়েকজন একপর্যায়ে তাঁদের লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটাতে শুরু করেন। লাঠির আঘাতে বাদী ডান হাতের বাহুতে আঘাত পেয়েছেন। তাঁর হাতের হাড় ভেঙে গেছে। লাঠির আঘাতে তাঁর ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা বান্ধবীও আঘাত পেয়েছেন বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

১৩ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সৈকতে দুই তরুণীকে মারধর, কান ধরে ওঠবস ও হয়রানির তিনটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। তা দেখে বিভিন্ন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, এক তরুণীকে কান ধরে ওঠবস করানো হচ্ছে। তাঁকে ঘিরে রেখেছেন কয়েকজন তরুণ-যুবক। বেশির ভাগ তরুণ মুঠোফোনে মারধরের ভিডিও ধারণ করছিলেন। তরুণীকে লাঠি দিয়ে মারধর করে সৈকত থেকে চলে যেতে বলা হচ্ছিল।

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তরুণীদের হেনস্তার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় পর্যটকসহ নানা শ্রেণি–পেশার মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। হেনস্তার শিকার এক তরুণী আজ রোববার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার পর থেকে তাঁরা কোথাও স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারছেন না। হামলার আশঙ্কায় তাঁরা সৈকতেও যেতে পারছেন না।

গ্রেপ্তার ফারুকুল এখনো আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি না দিলেও জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন এবং দুঃখ প্রকাশও করেছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হিমেল হাসান বলেন, ফারুকুল এখনো আদালতে জবানবন্দি দেননি। রিমান্ড শেষে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।