চেন্নাইয়ে লাল মাটির উইকেট: একাদশে তিন পেসার নাকি তিন স্পিনার
চেন্নাইয়ে এমএ চিদাম্বারাম স্টেডিয়ামে সোমবার ভারতীয় দল অনুশীলন করেছে শুধু লাল মাটির উইকেটেই।
বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের জন্য চেন্নাইয়ে প্রস্তুতি শুরুর পর থেকে লাল মাটি ও কালো মাটির উইকেট মিলিয়েই অনুশীলন করছিল ভারতীয় দল। সোমবার তারা পুরোটা সময় নিজেদের ঝালিয়ে নিয়েছে শুধু লাল মাটির উইকেটে। ইঙ্গিতটা তাই পরিষ্কার, চেন্নাই টেস্ট হবে সম্ভবত লাল মাটির উইকেটেই। তাতে দুই দলের সম্ভাব্য একাদশ নিয়েও কৌতূহল আরও তীব্র হচ্ছে- তিন পেসার নাকি তিন স্পিনার?
এমএ চিদাম্বারাম স্টেডিয়ামের ৯টি উইকেটের ৩টি লাল মাটির উইকেট। এখানে ব্যবহৃত লাল মাটি আনা হয়েছে মুম্বাই থেকে। মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের উইকেটও এই একই মাটির। পেস-স্পিন, সব ধরনের বোলিংয়েই সেখানে সাধারণত সমান বাউন্স মেলে।
ক্রিকেট ওয়েবসাইট ইএসপিএনক্রিকইনফোর খবর, বাংলাদেশ-ভারত টেস্টে এবার চেন্নাইয়ে লাল মাটির একটি উইকেটেই খেলা হবে। সেখানে বাড়তি বাউন্স থাকবে, বল কিপারের কাছ যাবে অনেকটা লাফিয়ে। অবশ্য চেন্নাইয়ের তীব্র গরমে টেস্টের সময় যত গড়াবে, স্পিনারদের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। তবে ম্যাচজুড়ে পেসারদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা থাকবেই। বিশেষ করে, এই উইকেট ও কন্ডিশন রিভার্স সুইংয়ের জন্য সহায়ক হয়ে উঠতে পারে।
ভারতের সবচেয়ে বনেদি ভেন্যুগুলোর একটি হলেও এই মাঠে টেস্ট ক্রিকেট হবে এবার সাড়ে তিন বছর পর। সবশেষ ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারত-ইংল্যান্ড সিরিজের দুটি টেস্ট এখানে হয়েছিল। সেবার প্রথম টেস্টে প্রথম তিন দিনে উইকেট ছিল একদমই নিষ্প্রাণ। ভারতীয় স্পিনারদের পাত্তা না দিয়ে জো রুটের ডাবল সেঞ্চুরিতে বড় রান তুলেছিল ইংল্যান্ড। শেষ দুই দিনে স্পিনাররা কার্যকর হয়ে ওঠে। তবে বড় ব্যবধান গড়ে দেয় প্রথম ইনিংসই। ইংলিশরা বড় জয়ে এগিয়ে যায় সিরিজে।
পরের টেস্টেই অবশ্য চেন্নাইয়ের চিরায়ত উইকেট ফেরত আসে। রাভিচান্দ্রান অশ্বিন সেঞ্চুরি করার পাশাপাশি দুই ইনিংসে শিকার করেন আট উইকেট, অভিষেকে আকসার প্যাটেল নেন সাত উইকেট। প্রথম দিনে ১৬১ রানের অসাধারণ ইনিংস উপহার দেন রোহিত শার্মা। বিশাল জয়ে সিরিজে সমতা ফেরায় ভারত।
সেবার ওই দুই টেস্টের উইকেটে মূল পার্থক্য ছিল মাটিতে। প্রথম টেস্টের উইকেট ছিল পুরোই লাল মাটির। ম্যাচের শেষ ভাগের আগ পর্যন্ত উইকেট সেভাবে ভাঙেনি। পরের টেস্টের উইকেটে ভিত লাল মাটির হলেও উপরিভাগে ছিল কালচে মাটির স্তর। চেন্নাইয়ের গরমে দ্রুতই সেই উইকেট ভেঙে গিয়েছিল এবং ভারতীয় স্পিনাররা মহানন্দে শিকার ধরার উৎসব মেতেছিল।
এবারের উইকেট সেই ইংল্যান্ড সিরিজের প্রথম টেস্টের উইকেটে কাছাকাছি কিছু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেবারের চেয়ে আরেকটু বেশি বাউন্স এবার থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে দুই দলই তিন পেসার খেলানোর কথা ভাববে জোর দিয়ে।
আগামী নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়া সফরে যাবে ভারতীয় দল। বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির পাঁচ ম্যাচের সিরিজের প্রস্তুতির জন্য বাংলাদেশের বিপক্ষে এই সিরিজে ও এর পরই নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে কিছুটা পেস সহায়ক উইকেটে টেস্ট খেলার আলোচনা চলছে ভারতীয় ক্রিকেটে। চেন্নাইয়েরই সন্তান, সাবেক ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার দিনেশ কার্তিক কদিন আগে বলেছেন, চেন্নাইয়ে এবার কিছুটা পেস-সহায়ক উইকেটে খেলা হবে বলে তার ধারণা এবং সেক্ষেত্রে ভারতের একাদশে তিন পেসার থাকবে বলে তিনি মনে করেন।
বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের পরের টেস্ট কানপুরের গ্রিন পার্কে, যেখানে উইকেট কালচ মাটির এবং প্রথাগতভাবেই তা স্পিন সহায়ক। ভারত কিছুটা পেস সহায়ক উইকেটে খেলতে চাইলে, সেই সুযোগটি হতে পারে চেন্নাইয়েই।
ভারতের একাদশে মিডল অর্ডারে একটি জায়গা নিয়ে প্রশ্ন আছে, লোকেশ রাহুল নাকি সারফারাজ খান? তবে আরও বেশি কৌতূহল থাকবে মূলত বোলিং আক্রমণে। জাসপ্রিত বুমরাহ, মোহাম্মদ সিরাজ, অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজার খেলা একরকম নিশ্চিত। বাকি জায়গাটি নেবেন আকাশ দিপ ও ইয়াশ দায়ালের একজন কিংবা কুলদিপ ইয়াদাভ ও আকসার প্যাটেলের একজন।
তিন স্পিনার খেলানো হলে তৃতীয় স্পিনার হিসেবে কুলদিপের সম্ভাবনাই বেশি। পেসার তিনটি খেলানো হলে তৃতীয় পেসার কে হবেন? আকাশ দিপ এই বছরই একটি টেস্ট খেলেছেন ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওই টেস্টের প্রথম দিনে দুর্দান্ত বোলিং করেছেন। রঞ্জি ট্রফিতে নিয়মিত পারফর্মার তিনি। আপাতদৃষ্টিতে ডানহাতি এই পেসারের সম্ভাবনা বেশি মনে হলেও বোলিং আক্রমণের বৈচিত্র আর সুইংয়ের কথা মাথায় রেখে বাঁহাতি ইয়াশ দায়ালের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ শুরুর পর থেকে দেশের মাঠে ভারত স্রেফ একটি টেস্টেই তিন পেসার খেলিয়েছে। ২০১৯ সালে সেই ম্যাচটি ছিল বাংলাদেশের বিপক্ষেই। তবে কলকাতায় ম্যাচটি ছিল ভারতের প্রথম দিন-রাতের টেস্ট। গোলাপি বলে পেসারদের কিছুটা সহায়তা এমনিতেই থাকে। সেবার উইকেটও ছিল অনেকটাই গতিময় ও বাউন্সি। ইশান্ত শার্মা, উমেশ ইয়াদাভরা বাংলাদেশকে গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন আড়াই দিনের কম সময়ে।
এবার হয়তো প্রেক্ষাপট তেমন নয়। তবে তিন পেসার খেলানোর কিছু ইঙ্গিত এবারও মিলছে।
একইরকম কৌতূহল থাকবে বাংলাদেশের একাদশ নিয়েও। ব্যাটিং লাইন-আপ নিয়ে শঙ্কার কারণে বাড়তি ব্যাটসম্যান খেলানো হলে ভিন্ন ব্যাপার। তবে সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজের মতো দুজন অলরাউন্ডার থাকায় বাংলাদেশেরও পাঁচ বিশেষজ্ঞ বোলার নিয়ে একাদশ সাজানোর সুযোগ আছে সবসময়ই। সেক্ষেত্রে তিন স্পিনার খেলানো হলে নাঈম হাসানকে টপকে তাইজুল ইসলামই নিশ্চিতভাবে এগিয়ে থাকবেন। তখন ঠিক করতে হবে, একাদশে পেসার থাকবেন কোন দুজন। আর তিন পেসার খেলানো হলে তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ ও নাহিদ রানারই খেলার কথা।
সোমবার ভারতীয় দল লাল মাটির উইকেটে অনুশীলন করলেও বাংলাদেশ দল অনুশীলন করেছে কালচে মাটির উইকেটে।
শেষ পর্যন্ত কোন উইকেটে খেলা হবে, সেটি নিশ্চিত জানা গেলেই হয়তো দুই দলের একাদশের সম্ভাব্য চিত্র পরিষ্কার হতে থাকবে। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ এই সিরিজটি শুরু বৃহস্পতিবার।