London ০৮:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম:
সালাম-বরকত-রফিকের রক্তের অঙ্গীকারে ছিলো গণঅভ্যুত্থানের শক্তি ,প্রধান উপদেষ্টা সম্মেলন স্থগিত, অনির্দিষ্টকালের হরতাল ডেকেছে বিএনপি কুয়েতের মরুভূমিতে বাংলাদেশিদের মিলনমেলা গরুচুরির অভিযোগে স্বেচ্ছাসেবক দলের দুই নেতাকে গণপিটুনি গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই লুটিয়ে পড়লেন সাবিনা ইয়াসমিন পুলিশকে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের নির্দেশ রাজনৈতিক নেতৃত্বই দিয়েছিল এইচআরডব্লিউ ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ কোন পথে’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত নেত্রকোনা সীমান্তে টংক আন্দোলনের নেত্রী রাশি মণি’র হাজংয়ের ৭৯তম প্রয়াণ দিবস পালিত ফরিদপুরে রিকশা ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে চালককে হত্যা বিয়ে করলেন সারজিস আলম

চেনা পথের অচেনা পরিযায়ীরা

বিশ্বের সবচেয়ে বিরল পরিযায়ী চামচঠুঁটো বাটানের দেখা মেলে সোনাদিয়া দ্বীপেছবি: সায়েম চৌধুরী

গত বুধবার আচমকা এক খবর শুনলাম ইন্দোনেশিয়ার বোগর শহরে গিয়ে। ব্রিটিশ পাখি–গবেষক বন্ধু ড. বারেন্ড ভান জিমারডেন জানালেন, ‘বাতাসি’ প্রজাতির এক পাখির পরিযায়ন রহস্যের তথ্য পেয়েছেন তিনি। তাঁর সঙ্গে পাখিটির পরিযায়ন নিয়ে কথা চলল অনেকক্ষণ। বাতাসি যাকে ইংরেজিতে আমরা চিনি সুইফট নামে, এ রকম একটি পাখি চীন থেকে চলে গেছে নামিবিয়া। তিন মাসের মধ্যে আবার পাখিটি ফিরে এসেছে চীনের একটি শহরে। এ সময় পাখিটি প্রায় ১৬ হাজার কিলোমিটার ভ্রমণ করেছে এবং একটি নির্দিষ্ট পথ অনুসরণ করেছে। একেবারেই অচেনা এই পাখির পরিয়ায়ন পথের এই সন্ধান সত্যিই বিরল ঘটনা। ড. বারেন্ডের গবেষণায় আরও উঠে এসেছে দুনিয়াব্যাপী পরিযায়ী পাখির পথের বর্তমান অবস্থা ও দিন দিন সংকুচিত হওয়ার তথ্য।

গত আগস্ট মাসে পৃথিবীর সবচেয়ে বিরল পরিযায়ী পাখি চামচঠুঁটো বাটানের ওপর এক গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে দেখানো হয়েছে প্রজাতিটি প্রতিবছর গড়ে পাঁচ ভাগ কমে যাচ্ছে। গোটা পৃথিবীতে এই প্রজাতির প্রজনন পাখির সংখ্যা মাত্র ৪৯০। আর তা এখন নেমে এসেছে ৪৪৩টিতে। বিশ্বের বড় বড় গবেষকেরা এই পাখি নিয়ে গবেষণা ও সংরক্ষণ কার্যক্রম হাতে নেওয়ার পরও সংখ্যা হ্রাসের হার ঠেকানো যাচ্ছে না। মাত্র ৩০ গ্রাম এই ওজনের পাখিটি প্রজনন করে রাশিয়ার কামচাটকা আর চুটকটা অঞ্চলে। শীতে পাখিটি দীর্ঘ পথ পরিভ্রমণ করে বংলাদেশ সীমানায় (সোনাদিয়া) আসে। গত ১০ বছর আগেও এই দ্বীপে গড়ে ৩০টি চামচঠুঁটো বাটানের দেখা মিলত। এখন এই সংখ্যা নেমে এসেছে ৩–এ।

রাশিয়ার আমুর অঞ্চলের নামে একটি শিকারি পাখি আছে। পাখিটির নাম আমুর শাহিন বা আমুর ফ্যালকন। রাশিয়ার এই অঞ্চলে প্রজননকাল শেষ করে বের হয় খাবারের খোঁজে। এই সময় তারা আরব সাগরের মতো দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়। এ সময় হাজার হাজার আমুর ফ্যালকন একসঙ্গে পরিভ্রমণ করে। মূলত এরা মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যায় এবং পুরো শীত মৌসুমটা কাটায়। এই পরিবারের যেকোনো প্রজাতির ফ্যালকনের চেয়ে এই পাখির পরিযায়ন মনে দাগ কাটে। এই প্রজাতির পাখি শীতে বাংলাদেশ, ভারত আর নেপালেও দেখা যায়। আমাদের দেশে এই প্রজাতির পাখির অবস্থান ক্ষণস্থায়ী হয়। পরিযায়নের সময় এরা এখানে শুধু বিশ্রাম নেওয়ার জন্য কিছু সময় কাটায়।

পরিযায়ী পাখিরা এভাবে ছুটছে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। পরিযায়ী পাখির বিভিন্ন ভ্রমণ পথ বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন। পাখিরা কোন পথে পরিভ্রমণ করে, তা আমাদেরও জানা। গোটা পৃথিবীতে মোট ৯টি পরিযায়ন পথ ব্যবহার করে পাখিরা ভ্রমণ করে। আমাদের দেশেও আসে দুটি নির্দিষ্ট পথ অনুসরণ করে। এর একটি হলো ইস্ট এশিয়ান অস্ট্রেলেশিয়ান ফ্লাইওয়ে আর অন্যটি হলো সেন্ট্রাল এশিয়ান ফ্লাইওয়ে।

বাংলাদেশে ৭২৮টি প্রজাতির পাখির মধ্যে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা প্রায় ৩০০। এই প্রজাতিগুলোর বেশির ভাগই দেখা যায় শীতকালে। গত ৩০ বছরের পাখির শুমারি তথ্য আমাদের হাতে আছে। এখান থেকে দেখা যাচ্ছে পরিযায়ী পাখির হার কমেছে বিভিন্ন অঞ্চলে। পাখি–গবেষক বন্ধু সায়েম চৌধুরীর এক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, গোটা উপকূলীয় এলাকায় সৈকত পাখির সংখ্যা সর্বোচ্চ হতে পারে ১ লাখ ৭০ হাজার। আর প্রতিবছর আমরা হাওর অঞ্চলে পাখিশুমারি করি। এর ফলাফল থেকে দেখা যায়, বিভিন্ন জাতের হাঁস প্রজাতির প্রায় দুই লাখ পাখি আসে। এ দেশে ৩২টি অঞ্চল পরিযায়ী পাখির গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলের প্রায় সব কটিতেই পাখির সংখ্যা কমেছে গত তিন যুগে।

আমাদের দেশের পরিযায়ী হয়ে আসা বেশির ভাগ জলজ পাখিই পোকাখেকো ও তৃণভোজী। অচেনা এই পরিযায়ীদের সুরক্ষায় খুব বেশি উদ্যোগ চোখে পড়ে না। আজ বিশ্ব পরিযায়ী পখি দিবস। আমরা যদি পরিযায়ীদের আবাসস্থল সুরক্ষা করি, তাহলে পাখিগুলো তাদের ভালো খাবার পাবে। এ ক্ষেত্রে পাখি সুরক্ষায় বিশ্বব্যাপী আমরা অবদান রাখতে পারব। এ বছর পরিযায়ী পাখি দিবসের প্রতিপাদ্য হলো প্রটেক্ট ইনসেক্ট, প্রটেক্ট বার্ড। প্রতিবছর যদি পাখির একটি আবাসস্থলেরও সুরক্ষায় আমরা এগিয়ে আসি, তাহলে পরিযায়ীরা সুরক্ষা পাবে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৫:১৭:২৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪
৩১
Translate »

চেনা পথের অচেনা পরিযায়ীরা

আপডেট : ০৫:১৭:২৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪

বিশ্বের সবচেয়ে বিরল পরিযায়ী চামচঠুঁটো বাটানের দেখা মেলে সোনাদিয়া দ্বীপেছবি: সায়েম চৌধুরী

গত বুধবার আচমকা এক খবর শুনলাম ইন্দোনেশিয়ার বোগর শহরে গিয়ে। ব্রিটিশ পাখি–গবেষক বন্ধু ড. বারেন্ড ভান জিমারডেন জানালেন, ‘বাতাসি’ প্রজাতির এক পাখির পরিযায়ন রহস্যের তথ্য পেয়েছেন তিনি। তাঁর সঙ্গে পাখিটির পরিযায়ন নিয়ে কথা চলল অনেকক্ষণ। বাতাসি যাকে ইংরেজিতে আমরা চিনি সুইফট নামে, এ রকম একটি পাখি চীন থেকে চলে গেছে নামিবিয়া। তিন মাসের মধ্যে আবার পাখিটি ফিরে এসেছে চীনের একটি শহরে। এ সময় পাখিটি প্রায় ১৬ হাজার কিলোমিটার ভ্রমণ করেছে এবং একটি নির্দিষ্ট পথ অনুসরণ করেছে। একেবারেই অচেনা এই পাখির পরিয়ায়ন পথের এই সন্ধান সত্যিই বিরল ঘটনা। ড. বারেন্ডের গবেষণায় আরও উঠে এসেছে দুনিয়াব্যাপী পরিযায়ী পাখির পথের বর্তমান অবস্থা ও দিন দিন সংকুচিত হওয়ার তথ্য।

গত আগস্ট মাসে পৃথিবীর সবচেয়ে বিরল পরিযায়ী পাখি চামচঠুঁটো বাটানের ওপর এক গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে দেখানো হয়েছে প্রজাতিটি প্রতিবছর গড়ে পাঁচ ভাগ কমে যাচ্ছে। গোটা পৃথিবীতে এই প্রজাতির প্রজনন পাখির সংখ্যা মাত্র ৪৯০। আর তা এখন নেমে এসেছে ৪৪৩টিতে। বিশ্বের বড় বড় গবেষকেরা এই পাখি নিয়ে গবেষণা ও সংরক্ষণ কার্যক্রম হাতে নেওয়ার পরও সংখ্যা হ্রাসের হার ঠেকানো যাচ্ছে না। মাত্র ৩০ গ্রাম এই ওজনের পাখিটি প্রজনন করে রাশিয়ার কামচাটকা আর চুটকটা অঞ্চলে। শীতে পাখিটি দীর্ঘ পথ পরিভ্রমণ করে বংলাদেশ সীমানায় (সোনাদিয়া) আসে। গত ১০ বছর আগেও এই দ্বীপে গড়ে ৩০টি চামচঠুঁটো বাটানের দেখা মিলত। এখন এই সংখ্যা নেমে এসেছে ৩–এ।

রাশিয়ার আমুর অঞ্চলের নামে একটি শিকারি পাখি আছে। পাখিটির নাম আমুর শাহিন বা আমুর ফ্যালকন। রাশিয়ার এই অঞ্চলে প্রজননকাল শেষ করে বের হয় খাবারের খোঁজে। এই সময় তারা আরব সাগরের মতো দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়। এ সময় হাজার হাজার আমুর ফ্যালকন একসঙ্গে পরিভ্রমণ করে। মূলত এরা মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যায় এবং পুরো শীত মৌসুমটা কাটায়। এই পরিবারের যেকোনো প্রজাতির ফ্যালকনের চেয়ে এই পাখির পরিযায়ন মনে দাগ কাটে। এই প্রজাতির পাখি শীতে বাংলাদেশ, ভারত আর নেপালেও দেখা যায়। আমাদের দেশে এই প্রজাতির পাখির অবস্থান ক্ষণস্থায়ী হয়। পরিযায়নের সময় এরা এখানে শুধু বিশ্রাম নেওয়ার জন্য কিছু সময় কাটায়।

পরিযায়ী পাখিরা এভাবে ছুটছে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। পরিযায়ী পাখির বিভিন্ন ভ্রমণ পথ বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন। পাখিরা কোন পথে পরিভ্রমণ করে, তা আমাদেরও জানা। গোটা পৃথিবীতে মোট ৯টি পরিযায়ন পথ ব্যবহার করে পাখিরা ভ্রমণ করে। আমাদের দেশেও আসে দুটি নির্দিষ্ট পথ অনুসরণ করে। এর একটি হলো ইস্ট এশিয়ান অস্ট্রেলেশিয়ান ফ্লাইওয়ে আর অন্যটি হলো সেন্ট্রাল এশিয়ান ফ্লাইওয়ে।

বাংলাদেশে ৭২৮টি প্রজাতির পাখির মধ্যে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা প্রায় ৩০০। এই প্রজাতিগুলোর বেশির ভাগই দেখা যায় শীতকালে। গত ৩০ বছরের পাখির শুমারি তথ্য আমাদের হাতে আছে। এখান থেকে দেখা যাচ্ছে পরিযায়ী পাখির হার কমেছে বিভিন্ন অঞ্চলে। পাখি–গবেষক বন্ধু সায়েম চৌধুরীর এক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, গোটা উপকূলীয় এলাকায় সৈকত পাখির সংখ্যা সর্বোচ্চ হতে পারে ১ লাখ ৭০ হাজার। আর প্রতিবছর আমরা হাওর অঞ্চলে পাখিশুমারি করি। এর ফলাফল থেকে দেখা যায়, বিভিন্ন জাতের হাঁস প্রজাতির প্রায় দুই লাখ পাখি আসে। এ দেশে ৩২টি অঞ্চল পরিযায়ী পাখির গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলের প্রায় সব কটিতেই পাখির সংখ্যা কমেছে গত তিন যুগে।

আমাদের দেশের পরিযায়ী হয়ে আসা বেশির ভাগ জলজ পাখিই পোকাখেকো ও তৃণভোজী। অচেনা এই পরিযায়ীদের সুরক্ষায় খুব বেশি উদ্যোগ চোখে পড়ে না। আজ বিশ্ব পরিযায়ী পখি দিবস। আমরা যদি পরিযায়ীদের আবাসস্থল সুরক্ষা করি, তাহলে পাখিগুলো তাদের ভালো খাবার পাবে। এ ক্ষেত্রে পাখি সুরক্ষায় বিশ্বব্যাপী আমরা অবদান রাখতে পারব। এ বছর পরিযায়ী পাখি দিবসের প্রতিপাদ্য হলো প্রটেক্ট ইনসেক্ট, প্রটেক্ট বার্ড। প্রতিবছর যদি পাখির একটি আবাসস্থলেরও সুরক্ষায় আমরা এগিয়ে আসি, তাহলে পরিযায়ীরা সুরক্ষা পাবে।