London ০২:৫২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ২২ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম:
সিংড়ায় ৩১ দফার প্রচারণায় বিএনপি নেতা দাউদার মাহমুদ কার্ডিফ বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের কমিটি গঠন, আব্দুল হান্নান সভাপতি, মকিস মনসুর, সম্পাদক নির্বা‌চিত নেত্রকোণার দুর্গাপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ঝুমা তালুকদার ঢাকায় গ্রেপ্তার থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রিফাতের চিকিৎসার সমস্ত দায়িত্ব নিলেন কায়সার কামাল ঐতিহাসিক ৭ই নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের কর্মসূচি বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক আ ন ম খলিলুর রহমান ইব্রাহিম (ভিপি) সদস্য সচিব ব্যারিস্টার ওবায়দুর রহমান টিপু ভূমি অধিগ্রহণের টাকা নয়ছয়ের মিথ্যা সংবাদে ক্ষোভ: সাবেক প্রধান শিক্ষক হাফিজুর রহমানের প্রতিবাদ ও ব্যাখ্যা কাপাসিয়ায় বন খেকোদের হামলায় তিন সাংবাদিক আহত, আটক ৩ প্রিপেইড মিটার বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন দুর্গাপুরে মাদক কেনাবেচার সময় ২৮০ পিস ইয়াবাসহ পুলিশের জালে ধরা দুই মাদক কারবারি জনগণের সর্বোচ্চ ভোটে হবিগঞ্জ-৪ বিএনপিকে উপহার দিতে চাই : সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়সল

চাইর দিন ধইরা পানিত, কেউ আইল না দেখবার

ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার বিলডোরা গ্রামের বাসিন্দা হজরত আলীর ঘরে ঢলের পানি ছবি

ষাটোর্ধ্ব কৃষক হজরত আলীর জীর্ণ ঘর। এ ঘরেই স্ত্রী আইমনা খাতুনকে নিয়ে বসবাস করতেন তিনি। গত শনিবার সকাল থেকে ঘরে পানি আসতে শুরু করে। ঘরের সব জিনিসপত্র এখন পানিতে নিমজ্জিত। হজরত আলী বলেন, ‘চাইর দিন ধইরা পানিত, কেউ আইল না দেখবার। খাইয়া না–খাইয়া বাঁইচ্চা আছি!’

হজরত আলী ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার বিলডোরা গ্রামের বাসিন্দা। বিলডোরা বাজারের কাছেই তাঁর বাড়ি। তাঁর বাড়ির আশপাশে কোমরসমান পানি। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে হাঁটুসমান পানিতে হাঁটছিলেন হজরত আলী। পাশের একটি উঁচু ঘরে রান্না করছিলেন তাঁর স্ত্রী আইমনা খাতুন। অর্ধেক ডুবে থাকা টিউবওয়েল থেকে পানি নিয়ে স্ত্রীকে দিচ্ছিলেন হজরত আলী।

ঘরের ভেতরে নষ্ট হয়ে যাওয়া জিনিসপত্র দেখাচ্ছিলেন হজরত আলী। দুই ছেলে থাকলেও তাঁদের আলাদা সংসার। তাঁদের ঘরেও পানি। আইমনা খাতুন বলেন, ‘এক দিন রাইন্দা ভাত খাইলে দুই দিন না খায়া থাকি দুই বুড়াবুড়ি। গরিবের মরণ বেকবাই। আমরার আল্লাহ ছাড়া কেউ নাই।’

বিলডোরা ইউনিয়নের কাজিয়াকান্দা গ্রামের রবিকুল ইসলামের (২৫) বাড়ির চারপাশে পানি থাকলেও ঘরে গতকাল সোমবার থেকে পানি। তাই রান্না হয়নি। দুই সন্তানের জন্য শুকনা খাবারের সংগ্রহে ছুটছিলেন তিনি। এ সময় বাবার পিছু নেয় তৃতীয় শ্রেণিপড়ুয়া রুবিনা আক্তার। কাঁধে তিন বছরের ছোট ভাই আবদুল্লাহকে নিয়ে পানি মারিয়ে যাচ্ছিল সে। আজ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বাড়ির সামনের পানিতে নিমজ্জিত সড়কে হাঁটা রুবিনা আক্তার জানায়, ‘রাইতেও কিছু খাই নাই, সকাল থেকে কিছু খাই নাই। দোকান থেকে কিছু খাইতে যাচ্ছি ভাইরে লইয়্যা।’

হাঁটুপানি মাড়িয়ে গ্রামের সড়কটি ধরে আসছিলেন মুলফত আলী (৬০)। স্ত্রী-ছেলে, নাতি–নাতনি নিয়ে আটজনের সংসার। শনিবার সকাল থেকে কংস নদ ও গুদারিয়া নদীর পানি বেড়ে তাঁর বাড়িতে হাঁটুপানি। মুলফত আলী বলেন, ‘দুই দিন ধইরা ভাত খাওন বন্ধ। বাজার থাইক্যা চিড়া–মুড়ি খাইয়া পোষ গুলারে বাঁচায়া রাখছি।’

দাড়িয়াকান্দা গ্রামের রুহুল আমিনের (৫৩) বাড়ির চারপাশে অথই পানি। আজকেও তিন ভাই ও স্ত্রী–সন্তান নিয়ে পানির মধ্যে আছেন। তিনি বলেন, ‘আশ্রয়কেন্দ্রে যে যাইবাম, এইহান্দে আশ্রয়কেন্দ্রও নাই। শনিবার সকাল থাইক্যা পানির মধ্যে আছি। কিন্তু চেয়ারম্যান, মেম্বার বা সরকারি লোক কেউ খোঁজ নিত আইছে না। তিন দিন ধইরা রান্দা–খাওয়া বন্ধ। পানির কল ডুইব্যা আছে। চিড়া–মুড়ি খাইয়া বাঁইচ্চা আছি।’

বিলডোরা বাজারের উঁচু স্থানে ১০টি গরু নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন নুরুল আমিন (৪৫)। বাড়িতে পানি ওঠায় গরু নিয়ে এখানে এসেছেন। তিনি বলেন, এই জীবনে এত পানি দেখেননি।

হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. এরশাদুল আহমেদ বলেন, প্রশাসনের পাশাপাশি পানিবন্দী মানুষকে শুকনা খাবার ও রান্না করা খাবার বিতরণ করছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন।

অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বোরাঘাট নদীর পানি বেড়ে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে প্লাবিত হতে শুরু করে হালুয়াঘাট উপজেলা। পাহাড়ি ঢলে হালুয়াঘাট পৌর এলাকাসহ উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়নে পানি ছড়িয়ে পড়ে। উপজেলাটিতে ১৮ হাজার পরিবারের ৭৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় আছে বলে স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ১১:০২:০১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর ২০২৪
১০০
Translate »

চাইর দিন ধইরা পানিত, কেউ আইল না দেখবার

আপডেট : ১১:০২:০১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর ২০২৪

ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার বিলডোরা গ্রামের বাসিন্দা হজরত আলীর ঘরে ঢলের পানি ছবি

ষাটোর্ধ্ব কৃষক হজরত আলীর জীর্ণ ঘর। এ ঘরেই স্ত্রী আইমনা খাতুনকে নিয়ে বসবাস করতেন তিনি। গত শনিবার সকাল থেকে ঘরে পানি আসতে শুরু করে। ঘরের সব জিনিসপত্র এখন পানিতে নিমজ্জিত। হজরত আলী বলেন, ‘চাইর দিন ধইরা পানিত, কেউ আইল না দেখবার। খাইয়া না–খাইয়া বাঁইচ্চা আছি!’

হজরত আলী ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার বিলডোরা গ্রামের বাসিন্দা। বিলডোরা বাজারের কাছেই তাঁর বাড়ি। তাঁর বাড়ির আশপাশে কোমরসমান পানি। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে হাঁটুসমান পানিতে হাঁটছিলেন হজরত আলী। পাশের একটি উঁচু ঘরে রান্না করছিলেন তাঁর স্ত্রী আইমনা খাতুন। অর্ধেক ডুবে থাকা টিউবওয়েল থেকে পানি নিয়ে স্ত্রীকে দিচ্ছিলেন হজরত আলী।

ঘরের ভেতরে নষ্ট হয়ে যাওয়া জিনিসপত্র দেখাচ্ছিলেন হজরত আলী। দুই ছেলে থাকলেও তাঁদের আলাদা সংসার। তাঁদের ঘরেও পানি। আইমনা খাতুন বলেন, ‘এক দিন রাইন্দা ভাত খাইলে দুই দিন না খায়া থাকি দুই বুড়াবুড়ি। গরিবের মরণ বেকবাই। আমরার আল্লাহ ছাড়া কেউ নাই।’

বিলডোরা ইউনিয়নের কাজিয়াকান্দা গ্রামের রবিকুল ইসলামের (২৫) বাড়ির চারপাশে পানি থাকলেও ঘরে গতকাল সোমবার থেকে পানি। তাই রান্না হয়নি। দুই সন্তানের জন্য শুকনা খাবারের সংগ্রহে ছুটছিলেন তিনি। এ সময় বাবার পিছু নেয় তৃতীয় শ্রেণিপড়ুয়া রুবিনা আক্তার। কাঁধে তিন বছরের ছোট ভাই আবদুল্লাহকে নিয়ে পানি মারিয়ে যাচ্ছিল সে। আজ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বাড়ির সামনের পানিতে নিমজ্জিত সড়কে হাঁটা রুবিনা আক্তার জানায়, ‘রাইতেও কিছু খাই নাই, সকাল থেকে কিছু খাই নাই। দোকান থেকে কিছু খাইতে যাচ্ছি ভাইরে লইয়্যা।’

হাঁটুপানি মাড়িয়ে গ্রামের সড়কটি ধরে আসছিলেন মুলফত আলী (৬০)। স্ত্রী-ছেলে, নাতি–নাতনি নিয়ে আটজনের সংসার। শনিবার সকাল থেকে কংস নদ ও গুদারিয়া নদীর পানি বেড়ে তাঁর বাড়িতে হাঁটুপানি। মুলফত আলী বলেন, ‘দুই দিন ধইরা ভাত খাওন বন্ধ। বাজার থাইক্যা চিড়া–মুড়ি খাইয়া পোষ গুলারে বাঁচায়া রাখছি।’

দাড়িয়াকান্দা গ্রামের রুহুল আমিনের (৫৩) বাড়ির চারপাশে অথই পানি। আজকেও তিন ভাই ও স্ত্রী–সন্তান নিয়ে পানির মধ্যে আছেন। তিনি বলেন, ‘আশ্রয়কেন্দ্রে যে যাইবাম, এইহান্দে আশ্রয়কেন্দ্রও নাই। শনিবার সকাল থাইক্যা পানির মধ্যে আছি। কিন্তু চেয়ারম্যান, মেম্বার বা সরকারি লোক কেউ খোঁজ নিত আইছে না। তিন দিন ধইরা রান্দা–খাওয়া বন্ধ। পানির কল ডুইব্যা আছে। চিড়া–মুড়ি খাইয়া বাঁইচ্চা আছি।’

বিলডোরা বাজারের উঁচু স্থানে ১০টি গরু নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন নুরুল আমিন (৪৫)। বাড়িতে পানি ওঠায় গরু নিয়ে এখানে এসেছেন। তিনি বলেন, এই জীবনে এত পানি দেখেননি।

হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. এরশাদুল আহমেদ বলেন, প্রশাসনের পাশাপাশি পানিবন্দী মানুষকে শুকনা খাবার ও রান্না করা খাবার বিতরণ করছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন।

অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বোরাঘাট নদীর পানি বেড়ে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে প্লাবিত হতে শুরু করে হালুয়াঘাট উপজেলা। পাহাড়ি ঢলে হালুয়াঘাট পৌর এলাকাসহ উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়নে পানি ছড়িয়ে পড়ে। উপজেলাটিতে ১৮ হাজার পরিবারের ৭৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় আছে বলে স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে।