কেন্দ্রের কতিপয় নেতার অযাচিত হস্তক্ষেপে , নাটোরে বিএনপির ভগ্ন দশা!

কেন্দ্রের কতিপয় অর্থলোভী নেতার অযাচিত হস্তক্ষেপে নাটোরে বিএনপির করুন অবস্থা বিরাজ করছে। এক প্রকার ভেঙ্গে পড়েছে নাটোর বিএনপির নেতৃত্ব ও ঐক্যবদ্ধ কর্মী সমাগম! বিএনপির জেলা আহ্বায়ক কমিটি (আংশিক) তিন মাসের জন্য গঠিত হলেও পূর্ণাঙ্গ আহবায়ক কমিটি গঠনের পূর্বেই বিভিন্ন অসাংগঠনিক কর্ম তৎপরতায় ও নানা ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন বেশীরভাগ সদস্য। যার ফলশ্রুতিতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান সাহেবকে না জানিয়ে কেন্দ্রের কতিপয় অর্থলোভী নেতার যোগসাজসে পূর্ব ঘোষিত ১৬ সদস্যের আংশিক আহ্বায়ক কমিটির কাউকে কিছু না জানিয়ে নতুন করে আরো ২১ সদস্য সংযুক্ত করে। যারা ইতিপূর্বে নাটোর বিএনপির রাজনীতিতে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে কমিটি বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, জবরদখল, অপহরণ ছাড়াও সুনির্দিষ্ট বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত। দলীয় শৃংখলা ভঙ্গের এত বড় দৃষ্টান্ত উঠে আসার পরও কেন্দ্রের দায়িত্ব প্রাপ্ত কতিপয় নেতা ঈদের সময় রুহুল কুদ্দুস দুলুর পাঠানো তিন লক্ষ টাকা দামের ঈদুল ফিতরে একাধিক খাসি ও ঈদুল আযহায় কোরবানির জন্য ১০ লক্ষ টাকার গরু এবং নানা উপঢৌকন পেয়ে তারা চুপ মেরে আছেন। মূলতঃ কেন্দ্রের (দায়িত্বে থাকা) কতিপয় অসৎ নেতার বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলেছেন রাজশাহী বিভাগের প্রতিটি জেলা। একই প্রক্রিয়ায় নাটোর জেলা কমিটিও যত বেশি দীর্ঘায়িত করা যাবে দুলুসহ দুর্নীতিবাজ নেতাদের পক্ষ থেকে ততই বেশি উপঢৌকন এবং আর্থিক নজরানা তাদের পকেটে নিয়মিত পৌঁছে যাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে নাটোর জেলা বিএনপি’র রাজনীতিতে বিএনপির কর্মীরা হারাচ্ছে সাহস শক্তি ও মনোবল। আর নেতৃত্বের প্রতি সাধারণ মানুষের জন্মাচ্ছে ঘৃণা! ক্রমেই
সাংগঠনিক কাঠামো হচ্ছে দুর্বল ও বিপর্যস্ত ।
নাটোর জেলা একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা। যদি জেলায় শক্তিশালী সাংগঠনিক কাঠামো তৈরি না করা যায় এবং সুশিক্ষিত, আদর্শিক, পরিশ্রমী, বিগত দিনের আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথের পরীক্ষিত গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের দিয়ে সাংগঠনিক কমিটি পরিচালিত না করা হয় তাহলে সামনে জাতীয় নির্বাচনে তার একটি মারাত্মক বিরূপ প্রভাব পড়বে..? এ আশঙ্কা প্রকাশ করছেন খোদ দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান। সেই উপলব্ধি থেকেই নাটোর জেলা বিএনপির আংশিক কমিটি ঘোষণা হওয়ার এক সপ্তাহ পর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান সাহেব নাটোর জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির -আহবায়ক, সদস্য সচিব, যুগ্ন আহবায়ক ও রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম, শাহিন শওকত, ওবায়দুর রহমান চন্দন, আমিরুল ইসলামের (আলিম) উপস্থিতিতে সুনির্দিষ্টভাবে নাটোর জেলা বিএনপিকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে নির্দেশনা প্রদান করেন। যা ছিল নিম্নরূপ:-
১/চাঁদাবাজির সাথে যুক্ত নিম্ন বর্ণিত চারজন ব্যক্তিকে দল হইতে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা।
১#দেওয়ান শাহীন
২#আবুল বেপারী
৩#শামসুল ইসলাম রনি (বড়াইগ্রাম উপজেলা)
৪#রাসেল আহমেদ রনি (নাটোর সদর উপজেলা)
দ্বিতীয় -রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু সাহেবের বাড়ি থেকে জেলা বিএনপির কার্যালয় সরিয়ে নাটোর জেলা সদরে স্থানান্তরের জন্য। আলোচনার দিন হতে পরবর্তী এক সপ্তাহের মধ্যে তা বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়।
তৃতীয় – নাটোর জেলা বিএনপির কোন সাংগঠনিক কর্মসূচিতে রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু সাহেবের অতিথি হওয়া, সভাপতি ও প্রধান অতিথি হওয়া যাবে না মর্মে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
চতুর্থ – নাটোর জেলায় বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান ব্যতীত কোন নেতার ছবি দিয়ে কোন ফেস্টুন, ব্যানার করা যাবে না বলেও নির্দেশনায় উল্লেখ ছিল।
পঞ্চম – ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানকে না জানিয়ে আহবায়ক বিএনপি কমিটিতে যে ২১ জন সদস্য বৃদ্ধি করা হয় সেই সকল সদস্য অতি দ্রুত প্রত্যাহার বা অংশ বিশেষ প্রত্যাহার করার জন্য কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়।
ষষ্ঠ – লালপুর বাগাতিপাড়া থানায় আক্রমণ ও আসামি ছিনতাই এবং লালপুর ঈদগায় -ঈদের দিন সংগঠিত রক্তাক্ত আক্রমণ, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে চিহ্নিত করা এবং অপরাধে যদি দলের কেউ জড়িত থাকে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন কিংবা তাদেরকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়।
একইভাবে প্রয়াত নেতা ফজলুর রহমান পটল সাহেবের নাটোরের লালপুর বাগাতিপাড়া আসনের জন্য পারিবারিক সিদ্ধান্তে মরহুম ফজলুর রহমান পটল সাহেবের সহধর্মিণী দলের নেতৃত্ব এগিয়ে নিতে এবং দলের হাল ধরার জন্য জনসভায় তার স্নেহধন্য কন্যা ফারজানা রহমান পুতুলের জন্য দোয়া চান। কিন্তু এখানেও থেমে নেই রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু সাহেব ও তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন ছবির কুটকৌশলী ষড়যন্ত্র। তারা দুজনে মরহুম ফজলুর রহমান পটল সাহেবের ড্রাগ এডিক্টেড, অসুস্থ পুত্র রাজন ও তার স্ত্রীকে ভুলভাল বুঝিয়ে পারিবারিক কলহ ও অনৈক্য সৃষ্টির চেষ্টায় সর্বোচ্চ মরিয়া।
এত কিছুর পরও অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান সাহেবের এসব নির্দেশনা দেওয়ার ০৩ মাস পর রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালামের নিকট অগ্রগতি জানতে চাইলে তিনি এক সপ্তাহ সময় চান। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান সাহেবের কাছ থেকে সময় নেয়ার পর কেটে গেছে আরো এক মাস! এখনো অদৃশ্য ও লোলুপ হস্তক্ষেপে বাস্তবায়ন করা হয়নি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাহেবের নির্দেশনা। এতে জনমনে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে, তাহলে বিএনপির মূল চালিকা শক্তি কি এসব অপকর্মকারী চাঁদাবাজদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে? নাকি শিগগিরই এদের স্বমূলে উৎপাটন আসন্ন!! সেই অপেক্ষার প্রহর গুনছে নাটোরের প্রকৃত ত্যাগী জাতীয়তাবাদী সৈনিকেরা।