London ০৮:৪২ অপরাহ্ন, শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম:
সালাম-বরকত-রফিকের রক্তের অঙ্গীকারে ছিলো গণঅভ্যুত্থানের শক্তি ,প্রধান উপদেষ্টা সম্মেলন স্থগিত, অনির্দিষ্টকালের হরতাল ডেকেছে বিএনপি কুয়েতের মরুভূমিতে বাংলাদেশিদের মিলনমেলা গরুচুরির অভিযোগে স্বেচ্ছাসেবক দলের দুই নেতাকে গণপিটুনি গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই লুটিয়ে পড়লেন সাবিনা ইয়াসমিন পুলিশকে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের নির্দেশ রাজনৈতিক নেতৃত্বই দিয়েছিল এইচআরডব্লিউ ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ কোন পথে’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত নেত্রকোনা সীমান্তে টংক আন্দোলনের নেত্রী রাশি মণি’র হাজংয়ের ৭৯তম প্রয়াণ দিবস পালিত ফরিদপুরে রিকশা ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে চালককে হত্যা বিয়ে করলেন সারজিস আলম

আততায়ীর গুলিতে নিহত মহারাষ্ট্রের সাবেক মন্ত্রী বাবা সিদ্দিক

এনসিপির নেতা বাবা সিদ্দিকছবি : এএনআই

ভারতের রাজনৈতিক দল ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির (এনসিপি) নেতা ও মহারাষ্ট্র রাজ্যের সাবেক মন্ত্রী বাবা সিদ্দিক (৬৬) আততায়ীর গুলিতে নিহত হয়েছেন। গুলি করার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে দুই ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিকভাবে আটক করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শনিবার রাতে মুম্বাইয়ের বান্দ্রা পূর্ব এলাকার নির্মল নগরে কোলগেট মাঠের কাছে ছেলে জিশান সিদ্দিকের অফিস থেকে বের হন বাবা সিদ্দিক। গাড়িতে উঠতে যাবেন এমন সময়ে তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে স্থানীয় লীলাবতী হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

পুলিশ জানায়, বাবা সিদ্দিককে গুলি করার সঙ্গে তিন ব্যক্তি জড়িত। দুজনকে আটক করা হয়েছে। তৃতীয় ব্যক্তি পালিয়ে গেছেন।

মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী ও এনসিপির প্রধান অজিত পাওয়ার বাবা সিদ্দিকের হত্যাকাণ্ডকে দুর্ভাগ্যজনক ও নিন্দনীয় উল্লেখ বলে করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘এমন এক ঘটনায় তাঁর মৃত্যুতে আমি হতবাক। আমি একজন ভালো বন্ধু ও সহকর্মীকে হারিয়েছি। আমরা এমন একজন নেতাকে হারিয়েছি, যিনি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য লড়াই করে গেছেন এবং ধর্মনিরপেক্ষতার বিষয়ে ছিলেন আপসহীন। এ হামলা পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করা হবে।’

মুম্বাই পুলিশ কমিশনার বিবেক ফাঁসালকারের বরাতে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে বলেছেন, ‘অভিযুক্ত দুই বন্দুকধারীকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। আটকদের একজন উত্তর প্রদেশ ও দ্বিতীয়জন হরিয়ানা রাজ্যের বাসিন্দা। তৃতীয় ব্যক্তি ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেছেন।’

কী কারণে সিদ্দিককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, তা নিয়ে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে কিছু বলেনি। অন্যদিকে তাঁর পেটে তিনটি গুলি লেগেছে বলে জানা গেছে।     

সিদ্দিক মহারাষ্ট্রের বান্দ্রা পশ্চিম নির্বাচনী এলাকা থেকে তিনবার বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বিলাসরাও দেশমুখের অধীনে ২০০৪ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি খাদ্য ও বেসামরিক সেবা সরবরাহ এবং শ্রম প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

ভারতের বর্তমান প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের রাজনীতির সঙ্গে তিনি প্রায় পাঁচ দশক যুক্ত ছিলেন। যুব কংগ্রেসের মাধ্যমে রাজনীতিতে তাঁর হাতেখড়ি। কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি এনসিপিতে যোগ দিয়েছিলেন।

সিদ্দিকের হত্যাকাণ্ডে মত নির্বিশেষে ভারতের প্রায় সব দলের রাজনীতিবিদরা শোক প্রকাশ করেছেন। বিরোধী দলের নেতারা মহারাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। 

বাবা সিদ্দিককে গুরুতর আহত অবস্থায় ভর্তি করার পর মুম্বাইয়ের লীলাবতী হাসপাতালের বাইরে পুলিশ ও সাধারণ মানুষের ভিড়

বাবা সিদ্দিককে গুরুতর আহত অবস্থায় ভর্তি করার পর মুম্বাইয়ের লীলাবতী হাসপাতালের বাইরে পুলিশ ও সাধারণ মানুষের ভিড়ছবি : এএনআই

এনসিপির কার্যনির্বাহী সভাপতি ও সিদ্দিকের ঘনিষ্ঠ বন্ধু প্রফুল প্যাটেল বলেন, ‘এই ঘটনায় আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।’

কংগ্রেস ত্যাগী বিজেপি নেতা অশোক চ্যাভান বলেন, ‘তাঁর মৃত্যুর খবর আমার জন্য একটি বড় ধাক্কা। পুরোনো দলে (কংগ্রেস) থাকাকালে আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি।’

 কংগ্রেসের নেতা রমেশ চেন্নিথালা এক্সে এক পোস্টে লেখেন, ‘এই ঘটনায় আমি গভীরভাবে শোকাহত। যুব কংগ্রেস করার সময় থেকেই আমরা বন্ধু।’

এনসিপির (এসপি) নেতা শারদ পাওয়ার বলেছেন, ‘মহারাষ্ট্রে যেভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে তা উদ্বেগজনক।’

মহারাষ্ট্রের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও এনসিপি (এসপি) নেতা অনিল দেশমুখের পাশাপাশি রাজ্যটির বর্তমান বিধানসভার কংগ্রেসের বিরোধী দলীয় নেতা বিজয় ওয়াডেত্তিওয়ার বাবা সিদ্দিকের হত্যাকাণ্ডের জন্য একনাথ শিন্ডে সরকারের নিন্দা করেছেন। তাঁরা উভয়ে বলেছেন, ‘ওয়াই’ ক্যাটাগরির নিরাপত্তা পাওয়া একজন নেতাকে এভাবে গুলি করে হত্যা করাটা ভয়ংকর।

উল্লেখ্য, ভারতে ‘ওয়াই’ চতুর্থ পর্যায়ের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশসহ আরও দু-একটি নিরাপত্তা বিভাগের প্রায় ১১ জন সদস্য নিয়ে এটা গঠিত। 

আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন জানায়, সিদ্দিক শুধু রাজনীতিক হিসাবে পরিচিত নন। বলিউডের সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগ আছে। বিভিন্ন সময়ে তাঁর দেওয়া জমকালো পার্টিতে অনেক তারকাকে দেখা গেছে। ২০১৩ সালে তাঁর পার্টিতেই ‘মানভঞ্জন’ হয় শাহরুখ খান ও সালমান খানের মধ্যে। দুই খানকে দু’পাশে নিয়ে তোলা তাঁর ছবি স্মরণীয় হয়ে আছে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৩:০০:১৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪
৩৫
Translate »

আততায়ীর গুলিতে নিহত মহারাষ্ট্রের সাবেক মন্ত্রী বাবা সিদ্দিক

আপডেট : ০৩:০০:১৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪

এনসিপির নেতা বাবা সিদ্দিকছবি : এএনআই

ভারতের রাজনৈতিক দল ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির (এনসিপি) নেতা ও মহারাষ্ট্র রাজ্যের সাবেক মন্ত্রী বাবা সিদ্দিক (৬৬) আততায়ীর গুলিতে নিহত হয়েছেন। গুলি করার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে দুই ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিকভাবে আটক করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শনিবার রাতে মুম্বাইয়ের বান্দ্রা পূর্ব এলাকার নির্মল নগরে কোলগেট মাঠের কাছে ছেলে জিশান সিদ্দিকের অফিস থেকে বের হন বাবা সিদ্দিক। গাড়িতে উঠতে যাবেন এমন সময়ে তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে স্থানীয় লীলাবতী হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

পুলিশ জানায়, বাবা সিদ্দিককে গুলি করার সঙ্গে তিন ব্যক্তি জড়িত। দুজনকে আটক করা হয়েছে। তৃতীয় ব্যক্তি পালিয়ে গেছেন।

মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী ও এনসিপির প্রধান অজিত পাওয়ার বাবা সিদ্দিকের হত্যাকাণ্ডকে দুর্ভাগ্যজনক ও নিন্দনীয় উল্লেখ বলে করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘এমন এক ঘটনায় তাঁর মৃত্যুতে আমি হতবাক। আমি একজন ভালো বন্ধু ও সহকর্মীকে হারিয়েছি। আমরা এমন একজন নেতাকে হারিয়েছি, যিনি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য লড়াই করে গেছেন এবং ধর্মনিরপেক্ষতার বিষয়ে ছিলেন আপসহীন। এ হামলা পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করা হবে।’

মুম্বাই পুলিশ কমিশনার বিবেক ফাঁসালকারের বরাতে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে বলেছেন, ‘অভিযুক্ত দুই বন্দুকধারীকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। আটকদের একজন উত্তর প্রদেশ ও দ্বিতীয়জন হরিয়ানা রাজ্যের বাসিন্দা। তৃতীয় ব্যক্তি ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেছেন।’

কী কারণে সিদ্দিককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, তা নিয়ে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে কিছু বলেনি। অন্যদিকে তাঁর পেটে তিনটি গুলি লেগেছে বলে জানা গেছে।     

সিদ্দিক মহারাষ্ট্রের বান্দ্রা পশ্চিম নির্বাচনী এলাকা থেকে তিনবার বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বিলাসরাও দেশমুখের অধীনে ২০০৪ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি খাদ্য ও বেসামরিক সেবা সরবরাহ এবং শ্রম প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

ভারতের বর্তমান প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের রাজনীতির সঙ্গে তিনি প্রায় পাঁচ দশক যুক্ত ছিলেন। যুব কংগ্রেসের মাধ্যমে রাজনীতিতে তাঁর হাতেখড়ি। কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি এনসিপিতে যোগ দিয়েছিলেন।

সিদ্দিকের হত্যাকাণ্ডে মত নির্বিশেষে ভারতের প্রায় সব দলের রাজনীতিবিদরা শোক প্রকাশ করেছেন। বিরোধী দলের নেতারা মহারাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। 

বাবা সিদ্দিককে গুরুতর আহত অবস্থায় ভর্তি করার পর মুম্বাইয়ের লীলাবতী হাসপাতালের বাইরে পুলিশ ও সাধারণ মানুষের ভিড়

বাবা সিদ্দিককে গুরুতর আহত অবস্থায় ভর্তি করার পর মুম্বাইয়ের লীলাবতী হাসপাতালের বাইরে পুলিশ ও সাধারণ মানুষের ভিড়ছবি : এএনআই

এনসিপির কার্যনির্বাহী সভাপতি ও সিদ্দিকের ঘনিষ্ঠ বন্ধু প্রফুল প্যাটেল বলেন, ‘এই ঘটনায় আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।’

কংগ্রেস ত্যাগী বিজেপি নেতা অশোক চ্যাভান বলেন, ‘তাঁর মৃত্যুর খবর আমার জন্য একটি বড় ধাক্কা। পুরোনো দলে (কংগ্রেস) থাকাকালে আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি।’

 কংগ্রেসের নেতা রমেশ চেন্নিথালা এক্সে এক পোস্টে লেখেন, ‘এই ঘটনায় আমি গভীরভাবে শোকাহত। যুব কংগ্রেস করার সময় থেকেই আমরা বন্ধু।’

এনসিপির (এসপি) নেতা শারদ পাওয়ার বলেছেন, ‘মহারাষ্ট্রে যেভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে তা উদ্বেগজনক।’

মহারাষ্ট্রের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও এনসিপি (এসপি) নেতা অনিল দেশমুখের পাশাপাশি রাজ্যটির বর্তমান বিধানসভার কংগ্রেসের বিরোধী দলীয় নেতা বিজয় ওয়াডেত্তিওয়ার বাবা সিদ্দিকের হত্যাকাণ্ডের জন্য একনাথ শিন্ডে সরকারের নিন্দা করেছেন। তাঁরা উভয়ে বলেছেন, ‘ওয়াই’ ক্যাটাগরির নিরাপত্তা পাওয়া একজন নেতাকে এভাবে গুলি করে হত্যা করাটা ভয়ংকর।

উল্লেখ্য, ভারতে ‘ওয়াই’ চতুর্থ পর্যায়ের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশসহ আরও দু-একটি নিরাপত্তা বিভাগের প্রায় ১১ জন সদস্য নিয়ে এটা গঠিত। 

আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন জানায়, সিদ্দিক শুধু রাজনীতিক হিসাবে পরিচিত নন। বলিউডের সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগ আছে। বিভিন্ন সময়ে তাঁর দেওয়া জমকালো পার্টিতে অনেক তারকাকে দেখা গেছে। ২০১৩ সালে তাঁর পার্টিতেই ‘মানভঞ্জন’ হয় শাহরুখ খান ও সালমান খানের মধ্যে। দুই খানকে দু’পাশে নিয়ে তোলা তাঁর ছবি স্মরণীয় হয়ে আছে।