অন্তর্বর্তী সরকারের পর্যাপ্ত সময় দরকার: ইইউ রাষ্ট্রদূত

প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ‘পর্যাপ্ত সময়’ দেওয়া দরকার বলে মনে করেন ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার। শুধু তাই নয় বাংলাদেশে নির্বাচনের তারিখ নিয়ে ইউরোপীয় জোটের কোনো ‘চাপ’ নেই বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বিএনপিসহ সমমনা কয়েকটি দল যখন এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের জোর দাবি জানাচ্ছে, তখন ইউরোপীয় এই কূটনীতিকের এমন বক্তব্য এল।
সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিক্যাব) আয়োজিত ডিক্যাব টকে অতিথি হয়ে এসেছিলেন মিলার।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি মনে করি আমার বলা দরকার এ সিদ্ধান্ত (নির্বাচন কবে) বাংলাদেশের ব্যাপার। আমরা নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক পালাবদল দেখছি, যাতে একটি মাইলফলকে পৌঁছানো যায়।
তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন হিসাবে, সময়ের বিষয়ে আমাদের কোনো মতামত নেই এবং নির্দিষ্ট কোনো তারিখে ভোট আয়োজনে আমরা কাউকে চাপও দিচ্ছি না। আমরা মনে করি সংস্কার বাস্তবায়নে পর্যাপ্ত সময় দরকার এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনেই। সুতরাং এক্ষেত্রে শ্বাস নেওয়ার সুযোগ থাকা দরকার।
অন্তর্বর্তী সরকারের বয়স নয় মাস হয়ে গেলেও নির্বাচন কবে হবে, সেই তারিখ এখানো বাংলাদেশ পায়নি। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলে আসছেন, ভোট কবে হবে তা নির্ভর করবে কতটা সংস্কার করার সিদ্ধান্ত হবে তার ওপর।
সম্প্রতি আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, যদি সংস্কারের তালিকা ছোট হয়, তবে ডিসেম্বরেই নির্বাচন সম্ভব। আর যদি তা দীর্ঘ হয়, তাহলে হয়ত আমরা জুন পর্যন্ত যাব। কিন্তু, জুনের পরে আর যাব না।
শেখ হাসিনার পতনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতাদের নিয়ে গঠিত নতুন দল এনসিপি নির্বাচনের আগে সংস্কারের কাজ সারার ওপর জোর দিচ্ছে। আরো ককেয়কটি দল তাতে সমর্থন দিচ্ছে।
অন্যদিকে বিএনপি বলছে, সংস্কার তারাও চায়, তবে বেশিরভাগ সংস্কার নির্বাচিত সরকারের হাত দিয়েই হওয়া উচিত। সেজন্য তারা জরুরি সংস্কারগুলো দ্রুত মুহূর্তে সেরে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার পক্ষে।
অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত ১১টি সংস্কার কমিশন ইতোমধ্যে সরকারের কাছে তাদের সুপারিশ জমা দিয়েছে। এর মধ্যে মূল সুপারিশগুলোর বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে ইউনূস নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
ডিক্যাব টকে মাইকেল মিলার বলেন, ঐকমত্য কমিশন এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কতটা মতৈক্যে পৌঁছাতে পারে, তা দেখার অপেক্ষায় আছেন তারা।
মতৈক্য তৈরির চেষ্টায় এই কমিশন ‘কঠোর পরিশ্রম’ করছে মন্তব্য করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উচ্চাভিলাষী সংস্কার উদ্যোগকে সমর্থন করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
আমরা আশা করি, সংস্কারগুলো খুবই স্পষ্টভাবে অগ্রাধিকারভিত্তিক এবং সুনির্দিষ্ট হবে। আমি যেভাবে বলেছি, এক্ষেত্রে আমাদের (ইইউ) অভিজ্ঞতা সহায়ক হতে পারে। এক্ষেত্রে আমাদের অর্থায়নেরও সুযোগ আছে, যা দিয়ে আমরা সহায়তা করতে পারি এবং পাশে দাঁড়ানোর রাজনৈতিক স্বদিচ্ছাও আছে।
অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাজ করার প্রসঙ্গ ধরে তিনি বলেন, নির্বাচন যেন ‘আন্তর্জাতিক মানের’ হয়, সেই কার্যক্রম চলছে।
আমরা চাই নির্বাচন যাতে অবাধ ও নিরপেক্ষ হয় এবং ফলাফল পুরোপুরি বিশ্বাসযোগ্য হয়। আমরা সেই সফলতার গল্প অংশ হতে চাই।
মিলার বলেন, নির্বাচন যারা পর্যবেক্ষণ করবে, সেই সব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ইইউ চুক্তি করছে। জনগণকে ভোট এবং নির্বাচন বিষয়ে সচিতন করতেও কাজ চলছে।